সত্যিই...প্রতিটা ঘরে যেন এমন মেয়েই জন্ম নেয়। আসলে মেয়েরা কী পারে বলুন তো? বেঁধে রাখতে জানে, ভালবাসায় রাখতে জানে। দুষ্টু মিষ্টিতে মিলে, একটা বাড়ি, যেটা অনেকটা ভালবাসার, অনেকটা স্মৃতিতে জুড়ে থাকার, তাঁকে ফিরে পাওয়ার গল্প স্বপ্নময় লেন। আর পরিচালক মানসী সিনহা আরও একবার প্রমাণ করলেন, মেয়েরা চাইলে কী সম্ভব হয় না! শুধু একটু সাহস আর অনেকটা স্বপ্ন... ব্যাস!
গল্পের শুরুতেই দেখা যায়, উত্তর কলকাতার যৌথ পরিবার, চাটুজ্জে বাড়িতে বিশ্বকর্মা পুজোর আনন্দ। একসঙ্গে উৎসবে পার্বণে থাকার আনন্দ ঠিক কতটা, এই ছবিতে ফুটে উঠেছে দারুণভাবে। তারপরই হঠাৎ অন্ধকার নেমে আসে বাড়িতে। বাড়ির মুখ্য বড়দা হঠাৎ করেই না ফেরার দেশে পাড়ি দিতেই, তাসের দেশের মত ভেঙে পড়ে ৫নং স্বপ্নময় লেনের বাড়িটা। আর তাঁর সঙ্গেই এত পুরোনো যৌথ পরিবার আলাদা হয়ে যায়। যন্ত্রণা এবং কষ্ট বুকে চেপেই সেই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন প্রতিটা সদস্য। চেনা কিছু হারানোর, চেনা জায়গা ছেড়ে আসার বুকফাটা এক যন্ত্রণা চেপে ধরে সকলকে।
কিন্তু, কালের নিয়ম কি কেউ পাল্টাতে পারে? সময় চলে যায়। যাদেরকে নিয়ে একটা পরিবার, মানুষগুলোও আর থাকে না। শুধু থেকে যায়, পুরোনো সব স্মৃতি এবং ইট কাঠ পাথরের ইমারতগুলো। পরিচালক মানসী সিনহা যেন এই ছবিতে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, একটা পরিবারে মেয়েদের থাকাটা কতটা গুরুত্বপূর্ন। ছবিতে অন্বেষা হাজরা এবং পায়েল মুখার্জি রয়েছেন দুষ্টু এবং মিষ্টি চরিত্রে। তাঁদের বিপরীতে রয়েছেন অর্জুন চক্রবর্তী এবং সায়ন সূর্য। দুষ্টু এবং মিষ্টি -এই দুজনের কীর্তি কি আসলেই শেষে মুশকিল আসান করবে? সেটা তো ছবি দেখলেই বোঝা যাবে।
অন্যদিকে অপরাজিতা এবং খরাজ যারা আসলে অর্জুন এবং সায়নের বাবা মা। তাঁদের ছেলের বউ হওয়ার কথা দুষ্টু এবং মিষ্টির। ছবি নিয়ে আরও কিছু বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। শ্বশুরবাড়ি যদি এমন হয়, তাহলে তো ক্যা বাত! এই সমাজ আজও নারী অভ্যুত্থান এবং নিয়মের বেড়াজালে মেয়েদের বেঁধে রাখতে ভালবাসে। কিন্তু, এই ছবিই দেখাবে কাউকে ভালবাসতে গেলে না রক্তের সম্পর্ক লাগে, না জন্মগত আলাপ হতে হয়। মেয়েরাই যে মেয়েদের শত্রু না, সেটাও এই ছবি দেখাবে। বর্তমানে সম্পর্ক, যেটা খুব ঠুনকো হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে ননদ বৌদি থেকে শুরু করে দুই বোনের সম্পর্ক, টেকনোলজিক্যাল গ্লিচের দরুন সবকিছুই বড্ড ফিকে, সেখানে আজও বেঁধে একজোট হয়ে থাকা যায়। স্বপ্নময় লেন শুধু একটা বাড়ি ফিরে পাওয়ার গল্প না, বরং অনেকটা জেদ এবং অনেকটা ভালবাসার গল্প। নিজেদের ইচ্ছে পূরণ করতে গেলে যদি কাছের মানুষগুলোকে পাশে পাওয়া যায়, তাহলে কিন্তু লড়াইয়ের পথ দারুণ সোজা হয়। এমনটাই দেখা গিয়েছে এই ছবিতে।
আসা যাক অভিনয়ের প্রসঙ্গে, প্রত্যেকে নিজেদের মত করে শ্রেষ্ঠ। অপরাজিতা আঢ্য যিনি মোহরের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, তিনি মা হিসেবে অনন্য এটুকু বলা যেতেই পারে। অন্যদিকে অর্জুন চক্রবর্তী, তথাকথিত পুরুষতান্ত্রিক ট্যাবু ভেঙে একজন মানুষ যিনি মা এবং স্ত্রী দুজনের সম্মান করতে পারেন, তাঁকে দেখে অনেককিছু শেখার আছে। অন্বেষা এবং পায়েল দুজনেই বেশ সাবলীল। তবে, যার কথা না বললেই নয়, তিনি চন্দন সেন। তাঁর উপস্থিতি দর্শককে দারুণ মজা দেবে।
পরিচালক হিসেবে মানসী সিনহাকে পুরো নম্বর দেওয়া উচিত, কারণ? একটা ছবিতে তিনি এমন কিছু রূঢ় বাস্তবতা দেখিয়েছেন, যা আর পাঁচটি মানুষের জীবনে খুব স্বাভাবিক। কিন্তু, সেটা থেকে খুব সহজেই একে অপরের সহযোগিতায় বেরিয়ে আসা যায়। সমাজের উত্থানে যে নারীর ভূমিকা কতটা, সেও পরিচালক বুঝিয়েছেন। এককথায় যারা পারিবারিক সম্পর্কের গল্প দেখতে ভালবাসেন, তাঁরা এক মুহূর্তের জন্যও পর্দা থেকে নজর ফেরাতে পারবেন না।
- ছবি : ৫ নং স্বপ্নময় লেন
- পরিচালক : মানসী সিনহা
- অভিনয়ে : অপরাজিতা আঢ্য, খরাজ মুখোপাধ্যায়, অন্বেষা হাজরা, অর্জুন চক্রবর্তী, পায়েল মুখার্জি, চন্দন সেন এবং অন্যান্য।
- রেটিং : ৪/৫