ছবি: সুপার থার্টি
পরিচালনা: বিকাশ বহেল
অভিনয়: হৃতিক রোশন, পঙ্কজ ত্রিপাঠী, ম্রুনাল ঠাকুর, বীরেন্দ্র সাকসেনা, নন্দীশ সিং, অমিত সাধ
রেটিং: ২/৫
বাইরে তখন টানটান উত্তেজনা, বিশ্বকাপে দেশের মান রক্ষা করতে পারবেন তো ধোনিরা? টানাপোড়েন ছেড়ে সিনেমাহলে ঢুকতেই পরিচয় হলো আরও এক হার-জিতের ম্যাচের সঙ্গে। এই ম্যাচ জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার। এক অসম্ভব জেদি অঙ্কের মাস্টারের সততার কাছে নতিস্বীকারের আখ্যান। আনন্দ কুমার, অর্থাৎ পর্দার হৃতিক রোশনের 'সুপার থার্টি'-র কাহিনি।
'রাজার ছেলেই রাজা হবে'- এই ফর্মুলার বাইরে বেরিয়ে যোগ্য ছাত্রদের আইআইটির পরীক্ষায় পাশ করানোর স্বপ্ন দেখেন আনন্দ। চারপাশে যখন ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে বেসরকারি ট্রেনিং স্কুল, সেখানে গরীব বাবা-মায়ের সন্তানদের এগিয়ে নিয়ে চলার লড়াইয়ে শামিল আনন্দ। কেমব্রিজে পড়ার সুযোগ পাওয়া এই পোস্টমাস্টারের ছেলের আর এগোনো হয়নি অর্থাভাবে। পাঁপড় বিক্রি করে দিনগুজরান করা ছেলেটি একসময়ে কোচিং সেন্টারে পড়াতে শুরু করে। অভাবের দিন ঘোচে, কিন্তু মন সায় দেয় না।
নিজের জমা পুঁজি সব দিয়ে পথচলা শুরু হয় 'সুপার থার্টি'-র। বিহারের গরিব ছাত্রদের পড়াতে গিয়ে নানা বিপদের সম্মুখীনও হতে হয়। তবু কুছ পরোয়া নেহি। পিছিয়ে পড়া, মনে মনে হেরে যাওয়া মানুষদের জিতিয়ে দেওয়ার প্রাণপণ লড়াইয়ে কিন্তু শেষপর্যন্ত জেতে সঙ্কল্প। তবে হারাতে হয় অনেক কিছু। হারাতে হয় বাবাকে, শুনতে হয় ঝুটা রাজনৈতিক আশ্বাসবাণী, নিজের প্রেমিকাকে অন্যের স্ত্রী হিসেবে দেখতে হয়। আর এসবের বদলে ঝুলিতে আসে সম্মান, আসে সরল প্রাণগুলোর ভালবাসা। আর আসে নিজের শর্তে বাঁচতে পারা, নিজের মূল্যবোধকে বাঁচিয়ে রাখতে পারার গর্ববোধ।
এসব চলছিলই, কেবলমাত্র চিত্রনাট্য হিসেবে দেখলে হয়তো আপনার চোখে জলও আসতে পারে। তবে খটকা লাগবে যদি মনে হয়, এটা তো একজনের বায়োপিক, জীবন কাহিনী। সেই নিরিখে 'সুপার থার্টি' অতীব বেমানান। অতিনাটকীয়তা এ ছবির পরতে পরতে। প্রথমত, একজন দরিদ্র অঙ্কের মাস্টারের পেটানো চেহারা, ঝকঝকে দাঁত, গোলাপি মাড়ি, এদিকে গায়ের রঙ শ্যামবর্ণ? আর যাই হোক, ময়লা কাপড় পরিয়ে আর মুখে দু'পোঁচ কালি লেপে দিয়ে হৃতিককে প্রধান চরিত্রে আনা যায় নি। দ্বিতীয়, তাঁর হাঁটাচলা, কথা বলা, সবকিছুই আগে বহুবার দেখেছে পাব্লিক। তথাকথিত 'বোকা', বা 'সরল' চরিত্র মানেই তো 'কোই মিল গয়া' নয়।
তৃতীয়, ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। রীতিমত কানে লাগার মতো। কেন জানি না, কোনওমতে দায় সারা হয়েছে বলেই মনে হলো। আবহ নিয়ে আর একটু বোধহয় ভাবা যেত। চতুর্থ, তিন ঘন্টার ছবি দেখতে গিয়ে মাঝে ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটতে পারে। চিত্রনাট্যের যা গতিপ্রকৃতি, তাতে আরও টাইট সম্পাদনা করা অসম্ভব ছিল না। আনন্দ কুমারের জীবনের কাহিনী যাঁরা পড়েছেন, তাঁকে যাঁরা জেনেছেন, তাঁদের কাছে ছবিটা বড্ড মেকী ঠেকবে। সময় কাটাতে 'সুপার থার্টি' দেখতেই পারেন। তবে হৃতিক এখানেও আরবান হিরোই থেকে গেলেন।