হাতের মুঠোফোন একনিমিষে বদলে দিতে পারে আপনার জীবন। তবে ইতিবাচক না নেতিবাচকভাবে ব্যবহার করবেন? সিদ্ধান্ত একান্ত-ই আপনার। মুঠোফোনে জীবনবন্দি হলে কী পরিণাম হতে পারে? সেই বাস্তব প্রেক্ষাপটকেই তুলে ধরল রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত 'হাবজি গাবজি'। লিখছেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ।
Advertisment
বর্তমানে ডিজিটাইজেশনের যুগ। আট থেকে আশি, সমাজ ক্রমশই নেটকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। নিমেষের মধ্যে হাতের মুঠোয় পুরো দুনিয়া। মোবাইল আর এখন শুধু কথা বলার যন্ত্র নয়, বিনোদনের মূল মাধ্যমও হয়ে উঠেছে বৈকী! অতঃপর সর্বক্ষণ হাতে মোবাইল, কানে গোঁজা হেডফোন, বিচ্ছিন্ন বাইরের দুনিয়া থেকে। বইয়ের পাতায় নয়, আজকাল বরং নবীন প্রজন্মের মুখ গোঁজা থাকে ট্যাব-মোবাইলের গেম, ভিডিওয়। মারণ গেমের ফাঁদে পড়ে, জীবনে সর্বনাশ হওয়ার উদাহরণ আকছার-ই শিরোনামে উঠে আসে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বহু শৈশবও। এই মোবাইল আসক্তির মারাত্মক পরিণামের টুকরো টুকরো ছবিই 'হাবজি গাবজি'র মাধ্যমে সিনেপর্দায় তুলে ধরলেন রাজ চক্রবর্তী।
প্রথমেই উল্লেখ্য, পরিচালকের এই সিনেমা অত্যন্ত সময়োপযোগী। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেজায় নিপুণতার সঙ্গে কাহিনি সাজিয়েছেন তিনি। হৃদয় বিদারক গল্পের প্লটে থ্রিলারও রেখেছেন রাজ। আদি-অহনার ব্যস্ত সংসার। উচ্চাকাঙ্ক্ষী দম্পতির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় (Parambrata Chatterjee) ও শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় (Subhashre Ganguly)। তাদের একমাত্র ছেলে টিপু (সামন্তক দ্যুতি মিত্র)। যে কিনা মারাত্মকভাবে মোবাইলে আসক্ত। সেটা যদিও মা-বাবার প্রশয়েই। পড়াশোনার নামগন্ধ নেই। আর মা-বাবার কাছে সময় না পেয়েই তার একমাত্র বন্ধু হয়ে উঠেছে মুঠোফোন। হাতে সারাক্ষণ মোবাইল পেয়েই টিপু এক্কেবারে জেদি, বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এমন দৃশ্যের সঙ্গে দর্শকরা অনায়াসেই নিজেদের জীবনের ছোঁয়া পাবেন।
Advertisment
আমাদের চারপাশে এরকম ভুঁড়ি ভুঁড়ি উদাহরণ রয়েছে, যেখানে মুঠোফোনের জন্যই মা-বাবা, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করছে নবীন প্রজন্ম। এমনকী মনোস্তত্ত্ববিদদের কথাতেও একাধিকবার বয়ঃসন্ধির সময়ে বিহ্যাভিয়ারাল চেঞ্জের কথা উঠে এসেছে। যার নেপথ্যে একমাত্র খলনায়ক মোবাইল কিবা কম্পিউটার গেম। তা সন্তান কিংবা মা-বাবাদের জীবন কতটা দুর্বিষহ করে তুলতে পারে? 'হাবজি গাবজি'তে সেই ঝলকই দেখালেন রাজ চক্রবর্তী এবং পরমব্রত-শুভশ্রী-সামন্তকের টিম।
মা-বাবার ভূমিকায় পরমব্রত-শুভশ্রীর অভিনয় অনবদ্য। অভিনেত্রী শুভশ্রী এখন আরও পরিণত। পরমব্রতকেও দর্শকরা যে এর আগে এমন অবতারে দেখেননি, তা হলফ করে বলা যায়। বিপথগামী সন্তানের চিন্তায় এক মা-বাবার আকুতি বেজায় পারদর্শীতার সঙ্গে পর্দায় তুলে ধরেছেন পরমব্রত-শুভশ্রী। তবে পরমপ্রাপ্তি সামন্তক দ্যুতি মিত্র। তাঁর অভিনয় ভাবিয়ে তুলবে দর্শকাসনে বসে থাকা মা-বাবাদের।
আম-কাহিনীতেও থ্রিলার প্লটে ছক্কা হাঁকিয়েছেন রাজ চক্রবর্তী। কীরকম? পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে জোড়া খুনে জড়িয়ে পড়ে আদি-অহনা। কিন্তু খুনটা করল কে? সেটা জানতে হলে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে 'হাবজি গাবজি' দেখতে হবে। গল্পের চমক এখানে না ভাঙাই বাঞ্ছনীয়। তবে এই খুনের রহস্যভেদের টুইস্টে ব্যক্তিগত হাহাকারকে কেউ যদি মিলিয়ে দেখেন, তাহলে কেঁপে উঠতে হয়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন