মুক্তি পেল 'ইস্কাবন'। জঙ্গলমহল, মাওবাদী সমস্যার প্রেক্ষাপটে গল্প। অভিনয়ে সৌরভ দাস, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, অনামিকা চক্রবর্তী। কেমন হল? লিখছেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ।
উত্তপ্ত জঙ্গলমহল। মাওবাদী আন্দোলন। সন্ত্রাসবাদী বলে দাগানো মানুষগুলো সরকার কিংবা সমাজের চোখে আদতে অপরাধী। কিন্তু কোন সমস্যা কিংবা অভাব-অনটনের তাড়নায় সেই মানুষগুলো হাতে বন্দুক তুলে নিতে বাধ্য হয়েছে? সভ্য সমাজকে ঘৃণার চোখে দেখতে শুরু করেছে? সমস্যার সেই শিকড়ে গিয়েই ক্যামেরা ধরেছেন পরিচালক মন্দীপ সাহা। জঙ্গলমহলের বাস্তব সমস্যার প্রেক্ষাপটে কাহিনি সাজিয়েছেন রাধামাধব মন্ডল।
'ইস্কাবন' দিয়েই মন্দীপের পরিচালনায় হাতেখড়ি। অতঃপর সিনেম্যাটিক ব্যাকারণে কতটা উতরাতে পেরেছেন, তার হিসেব সরিয়ে রেখে, তিনি যে 'মাওবাদ'-এর মতো বিষয়বস্তুকে সিনেপর্দায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন, তারজন্য পরিচালক হিসেবে মন্দীপ প্রশংসার দাবি রাখে। অন্তত যে সমস্যায় টলিপাড়ার পোড়খাওয়া পরিচালকরাও সেভাবে হাত দেননি এযাবৎকাল।
এবার আসা যাক সিনেমার গল্পে। 'ইস্কাবন'-এর প্রেক্ষাপট গোলবিবি বাজার। সেখানকার মাও-নেতা নরেনজি (বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য) সরকার তথা গণমাধ্যমের চোখে অপরাধী। সেই মাওবাদী গ্যাংয়ের আরেক নেতা সত্য (সৌরভ)। যে কিনা ক্যাম্পে ঢোকা নবাগতদের প্রশিক্ষণ দেয়। ঘটনাচক্রেই নবাগতা গোলাপিকে (অনামিকা চক্রবর্তী) ভালবেসে ফেলে। তবে গল্পের মোড় ঘোরে যখন সেই জঙ্গলমহলের মাও-দের ঠান্ডা করতে সেখানে নতুন পদে দায়িত্ব পেয়ে আসে আর্মি অফিসার শিব মুখোপাধ্যায়। গোলাপির প্রেমে পড়ে সে-ও। এভাবেই এগোয় গল্প। অন্যদিকে বিধায়ক, ক্ষমতাসীন দলের নেতার (খরাজ মুখোপাধ্যায়) কলকাঠিতে মাওবাদী নেতা নরেনজিকে ধরতে আধা সামরিক বাহিনি পাঠানো হয়।
<আরও পড়ুন: Habji Gabji Review: মোবাইলের নেশায় ধ্বংস শৈশব, রোমহর্ষক বাস্তব দেখাল ‘হাবজি গাবজি’>
এপ্রসঙ্গে উল্লেখ্য, জঙ্গলমহলের সমস্যার প্রেক্ষাপটে সিনেমার মাঝে প্রেম-বিয়ের গল্প ঢুকিয়েই গতি স্লথ করে দিয়েছেন পরিচালক। অতি রাজনৈতিক একটা ছবিতে যেসব দৃশ্য অন্তত ভীষণ বোকা-বোকা মনে হয়েছে। কোথায় গিয়ে যেন আসল বিষয়বস্তু থেকেই সরে যায়। তবে, মাওবাদীদের সঙ্গে আধা সামরিক বাহিনীর বন্দুবাজির দৃশ্য কিছু জায়গায় মন্দের ভাল। তবে এই দৃশ্যগুলোতে ক্যামেরা কিংবা আলোর কাজ আরও ভাল হলে মন্দ লাগত না বৈকী! টেকনিক্যাল দিক থেকে আরও উন্নত হলে আরও ভাল লাগত। উপরন্তু, সিনেমার ২ ঘণ্টা ২৬ মিনিটের দৈর্ঘ্য অতিরিক্ত বলেই মনে হয়।
মাও-নেতা হিসেবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অভিনয় প্রশংসার দাবিদার। সৌরভের অভিনয় আগেও মনে কেড়েছে। 'ইস্কাবন'-এর ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। বেশ কিছু দৃশ্যে তাঁর উপস্থিতি নজর কেড়েছে। তবে মাও-নেত্রী গোলাপির ভূমিকায় ভীষণ আড়ষ্ট অনামিকা। তাঁর সংলাপ বলার ধরনে জোর নেই। আঞ্চলিক ভাষা মাঝেমধ্যে বলার চেষ্টা করলেও গুলিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু 'ইস্কাবন'-এ বিধায়ক-নেতা সন্টু সোরেনের চরিত্রে বিশেষভাবে নজর কাড়লেন খরাজ মুখোপাধ্যায়।
কী হয় শেষপর্যন্ত নরেনজির মাওবাদী দলের পরিণতি? দেখতে হলে প্রেক্ষাগৃহে একটিবার ঢুঁ মেরে আসতেই পারেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন