Advertisment
Presenting Partner
Desktop GIF

একুশের 'চর্চিত' ৫ বাংলা সিরিজ, এগুলো মিস করেননি তো?

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা'র তালিকায় ৭ ওয়েব সিরিজের নাম। কোনগুলি? দেখে নিন একনজরে

author-image
Sandipta Bhanja
New Update
Most popular Bengali web series in 2021, Mandar, REKKA, Birohi, মার্ডার ইন দ্য হিলস, মন্দার, রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি, ইন্দু, বিরহী, মোহমায়া, একেন বাবু, ২০২১-এর বাংলা ওয়েব সিরিজ, bengali news today

২০২১-এর বাংলা ওয়েব সিরিজ

অতিমারী প্রেক্ষাগৃহের দরজায় তালা ঝুলিয়েছে ঠিকই, তবে দর্শকদের কাছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের এক নয়া দুয়ার খুলে দিয়েছে। বড়পর্দায় সিনেমা উপভোগ করা দর্শকরা গত লকডাউনে রাতারাতি ওয়েবমুখো হতে বাধ্য হয়েছে। হিন্দির পাশাপাশি আঞ্চলিক ভাষাগুলিতেও একাধিক উন্নতমানের কন্টেন্ট নিয়ে হাজির হয়েছে ওয়েব প্ল্যাটফর্মগুলো। বাংলার ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। তবে ক্ষেত্র-পরিসরে বাংলায় যে বাজেট হিসেবে দুর্ধর্ষ কিছু ওয়েব সিরিজ দেখা গিয়েছে এমনটাও নয়। ব্যতিক্রম খান তিন-চারেক। স্বল্প বাজেটে, অচেনা মুখের ভীড়ে শেষকথা বলেছে কন্টেন্ট-ই। ফিরে দেখা যাক ২০২১ সালের সবথেকে চর্চিত ৫ বাংলা ওয়েব সিরিজ। যুগ্মভাবে অবশ্য আরও দুই ওয়েব সিরিজের নামও রাখা হয়েছে।

Advertisment

মন্দার (হইচই) - একুশের বাংলা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে অনির্বাণ ভট্টাচার্য পরিচালকের আসনে বসে যে ল্যান্ডমার্ক তৈরি করেছেন, তা আজ থেকে বছর খানেক বাদেও দর্শক মনে রাখবে। শেক্সপিয়রের ম্যাকবেথ। অনির্বাণের মন্দার। স্কটল্যান্ড যখন গেইলপুর। ষড়রিপুর দখলে সেই নোনা মৎসজীবীর নগরীবাসী। কেউ চায় রাজা হতে, কেউ বা ক্রোধান্ধ হয়ে প্রতিশোধস্পৃহ, কারও নাভির তলায় আগুন জ্বলে, আবার কারও ক্ষমতার মোহ, কেউ বা মাৎসর্যের শিকার… চাই চাই… আরও চাই… মানবসত্ত্বা, সমাজ তো এমনটাই। চারশো বছর আগে লেখা ম্যাকবেথ-এও সেই প্রতিচ্ছ্ববি তুলে ধরেছিলেন শেক্সপিয়র। 'মন্দার'-এও তার অন্যথা হয়নি। কালজয়ী ট্র্যাজেডির নিশিডাকে সাড়া দিয়েছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্যও। পরিচালনায় হাতেখড়ি, তাও আবার ম্যাকবেথ অবলম্বনে। চ্যালেঞ্জ নিয়ে এলেন, 'দেখালেন', জয় করলেন।

publive-image

ম্যাকবেথের শর্ত অনুযায়ী গল্পে তিন ডাইনি। অনির্বাণের মন্দার-এ অবশ্য ডাইনিবেশী মজনু বুড়ি, তার ছোড়া পেদো আর পোষ্য বিড়াল কালা। এই তিন চরিত্রকেই নিজের মতো করে ভেঙে-গড়ে 'ডাইনি' সাজিয়েছেন পরিচালক অনির্বাণ। যারা কিনা অগোচরেই ক্ষমতা, শাসনতন্ত্র, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, পাপ-পতন, নিয়তিকে নিয়ন্ত্রণ করে তাদের মন্ত্রবলে। বাকি চরিত্ররা হাতের পুতুল মাত্রা। ম্যাকবেথরূপী মন্দার গল্পকে অন্য মাত্রা দেয়। মূল ভূমিকায় দেবাশিষ মন্ডল, ডাইনি-রূপী সজল মন্ডলদের বছরের সেরা আবিস্কার বললেও অত্যুক্তি হয় না! সোহিনী সরকার, দেবেশ রায় চৌধুরী থেকে 'পেদো' সুদীপ চৌধুরি, প্রত্যেকটা দৃশ্যে এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায়।

মোহমায়া (হইচই)- পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় ওয়েব জার্নি শুরু করেছেন বাংলা ইন্ডাস্ট্রির মূল্যবাণ দুই সম্পদ অনন্যা চট্টোপাধ্যায় এবং স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়কে সঙ্গী করে। একুশেই ২টো পার্টে রিলিজ করেছে মোহমায়া। জটিল ধাঁধার থেকেও মানুষের মন কতটা জটিল কিংবা একই অঙ্গে অনেক রূপের সমাবেশ, বেশ পারদর্শীতার সঙ্গে ফ্রেমে তুলে ধরেছেন কমলেশ্বর।

publive-image

স্বস্তিকা না অনন্যা কাকে ছেড়ে কার পারফরম্যান্স দেখবেন এই সিরিজে? বলা মুশকিল! মায়া চরিত্রে লাঞ্ছিতা, অত্যাচারিতা স্ত্রীয়ের যন্ত্রণার দৃশ্যে অনন্যা সত্যিই অনন্যা। তিন সন্তানের মা অরুণার ভূমিকায় স্বস্তিকাও কম যান না। অনায়াসে মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের মাদের সঙ্গে রিলেট করা যায়। তবে এই সিরিজে বাঘা দুই অভিনেত্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন ঋষি ওরফে বিপুল পাত্র। অতীত রহস্য, খুন-সম্পর্কের বেড়াজালে কমলেশ্বর তাঁর ওয়েব জার্নির শুরুটা যে নিঃসন্দেহে ভাল করেছেন, তা বলাই বাহুল্য।

ইন্দু (হইচই) - মূল ভূমিকায় ইশা সাহা। পরিচালক সায়ন্তন ঘোষাল প্রত্যেকটা পর্বে যেভাবে রহস্য-রোমাঞ্চের মোড়কে টুইস্ট রেখেছেন, সেখানেই সিরিজের সার্থকতা। আর পাঁচটা সিরিজের থেকে ইন্দু কন্টেন্টের দৌড়ে অনেক এগিয়ে। কাম-গন্ধ থাকলেও তা উগ্র নয়। প্রতিটা এপিসোডের নামকরণ আলাদাভাবে নজর কাড়ে। ছা-পোষা বাঙালি পরিবারের বড় মেয়ে ইন্দুর বিয়ে নিয়ে প্রথম পর্ব থেকেই পরিচালক যেভাবে রহস্যের জাল বুনেছেন, তা শেষ পর্যন্ত দর্শককে ধরে রাখে। এমনকী সিরিজ শেষ হওয়ার পর দর্শককে অপেক্ষা করায় দ্বিতীয় সিজনের জন্য।

publive-image

শ্বশুরবাড়িতে পা রাখা মাত্রই ইন্দু ওরফে ইশার গোয়েন্দাগিরি দেখতে মোটেই অতিরঞ্জিত বলে মনে হয়নি। তবে উল্লেখ্য, পরিচালক গল্পের প্রতিটা চরিত্রকেই যেভাবে সন্দেহের চোখে তুলে ধরেছেন দর্শকের কাছে, সেটাই সিরিজের প্লাস পয়েন্ট। সাদামাটা ঘরোয়া পারিবারিক গল্পেও যে এভাবে গোয়েন্দা প্লট বুনে দেওয়া যায়, তা সায়ন্তন দেখিয়ে দিয়েছেন। ইন্দু ইশা এবং মানসিক ভারসাম্যহীন দিদির ভূমিকায় পায়েল দে বিশেষভাবে নজর কাড়ে। ইন্দুর বরের ভূমিকায় চন্দ্রনিভ মুখোপাধ্যায় এবং দেওরের চরিত্রে সুহত্র মুখোপাধ্যায়ও অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমে গল্পে টানটান রহস্য বজায় রেখেছেন।

বিরহী (উড়িবাবা), একেনবাবু (হইচই)- চতুর্থ স্থানে যুগ্মভাবে রাখা হল বিরহী এবং একেনবাবুকে। ভাল কন্টেন্টের মাধ্যমে কম বাজেটে কীভাবে বড় ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সিরিজের সঙ্গে টেক্কা দেওয়া যায়, সেটার জ্বলন্ত উদাহরণ প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যের বিরহী। কাস্টিংয়ে কোনও বড় তারকা-মুখ নেই। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক প্রদীপ্তর প্রথম ওয়েব সিরিজ। আর তাতেই ছকভাঙা গল্পে ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি। নেটিজেনদের মুখে মুখে বিরহীর নাম। প্রশংসাও কুড়িয়েছে। ইউটিউব চ্যানেল উড়িবাবাতে রিলিজ করেছে। সেখানেই সিজন ২ মুক্তির অপেক্ষায় দিন গুনছেন দর্শকরা। সায়ন ঘোষ, অনুরাধা মুখোপাধ্যায়, অমিত দাস, দীপক হালদার, শতাক্ষী নন্দী প্রত্যেকেই ভাল অভিনয় করেছেন।

publive-image

বিরহী নামের এক কাল্পনিক গ্রামে সেখানকার জীবন, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মফস্বলের ছেলে (সায়ন ঘোষ) দূরের এক প্রাইমারি স্কুলে চাকরি পেয়েছে। যাতায়াতে বহু ঝক্কি। বাসে, সাইকেল, নৌকা পেরিয়ে গন্তব্যস্থল। তাও আবার সেই গ্রামে নানারকম অনৈতিক কাজকর্ম চলে। তার সঙ্গে আলাপ হয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় কর্মরতা এক মেয়ের। তারপর? রসিক সংলাপে ভরপুর। বাকিটা দেখে নিন ইউটিউবে।

publive-image

একেনবাবু বছরের অন্যতম আলোচিত সিরিজ। মূল ভূমিকায় অনির্বাণ চক্রবর্তী। বেশভূষা জটায়ুর মতো হলেও তার নেশা-পেশা ফেলুদার মতো। জেন-ওয়াইয়ের নিরীখে একেবারেই স্মার্ট নন। তবে বড় বিনয়ী মানুষ। মগজ চলে উইশেন বোল্টের মতো। গল্পটা ভীষণ প্রেডিকটেবল হলেও মজার সংলাপ এবং উপস্থাপন প্রশংসনীয়। আর অনির্বাণ চক্রবর্তীকে তো দর্শকরা এখন একেনবাবু বলেই চেনেন।

publive-image

মার্ডার ইন দ্য হিলস (আমাজন প্রাইম), REKKA (হইচই)- অঞ্জন দত্তের সাধের দার্জিলিংয়ের প্রেক্ষাপটে এক খুনের গল্প। রহস্য-রোমাঞ্চমূলক গল্পে বাঙালির টান সবসময়েই। আর তা যদি হয় পাহাড়ে, কুয়াশা ঘেরা গা ছমছমে অনুভূতি তাতে নয়া মাত্রা যোগ করে। আর পাঁচটা থ্রিলার সিরিজের ফরম্যাটের ছাঁচ থেকে বেরিয়ে ভিন্ন থ্রিলার প্লট সাজিয়েছেন অঞ্জন। একগুচ্ছ তারকা। তবে উত্তেজনা তৈরি করতে করতে কোথায় গিয়ে যেন মিলিয়ে গিয়েছে। গল্পের গভীরতার থেকে এখানে পরিচালকের দার্জিলিং-প্রেম বেশি করে চোখ টেনেছে।

publive-image

এর পাশাপাশি একুশে যে সিরিজটির কথা না বললেই নয়, সেটি হল - 'রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি'। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় এই সিরিজ নিয়ে দর্শকদের প্রত্যাশার পাহাড় ঠিক যতটা গড়ে উঠেছিল, রিলিজের পর ঠিক ততটাই হতাশ হতে হয়েছে। তবে উল্লেখ্য, ক্যানিবালিজম অর্থাৎ নরখাদক নিয়ে এর আগে বাংলায় সেভাবে গল্প বলা হয়নি। সেই প্রেক্ষিতে REKKA'উল্লেখযোগ্য। রাহুল বোস, অঞ্জন দত্ত, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, অনির্বাণ চক্রবর্তী এবং আজমেরী হক বাঁধনের মতো দক্ষ অভিনেতারা থাকলেও তরী ডুবেছে গল্প বলার ধরণে। সিরিজ-জুড়ে রবীন্দ্রসংগীতের ব্যবহার অতিরিক্ত মনে হয়েছে। নামকরণের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে গিয়ে গল্পে রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গ যেভাবে উত্থাপন করা হয়েছে, তার তাল কেটে গিয়েছে। তবে ফ্রেম আর আলো-আঁধারির সিকোয়েন্সগুলোতে বাজি মেরেছেন সৃজিত।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

tollywood hoichoi Mohomaya REKKA Mandar Eken babu Murder In the Hills Indu Birohi
Advertisment