বৃহস্পতিবারেই রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক কথা বললেন ঋদ্ধি সেন। অভিনেতার মন্তব্য, "টালিগঞ্জের মহানায়ক মহানায়িকারা সভা আলো করে ঘুর-ঘুর করবে ক্ষমতার মধুর পাশে। তাদের কাছে রাজনীতি একটা পার্ট টাইম জব। এরা না পারে অভিনয়, আর রাজনীতি তো ছেড়েই দিন। কোনোটার প্রতিই কোনও কমিটমেন্ট নেই। তবুও তারা সাজানো শো পিসের মতো MLA , MP…"। নাম না করেই দেব-নুসরতদের বিঁধেছেন ঋদ্ধি। আর ছেলের এমন মন্তব্যের ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই শুক্রবারে ময়দানে নেমে ব্যাটন ধরলেন কৌশিক সেন।
ঋদ্ধির সুর টেনেই বাবা কৌশিক বললেন, "বিস্মিত হচ্ছি এই ভেবে তৃণমূলের অতি নিকট অথবা সামান্য দূরে কিংবা খুব কাছাকাছি যে সকল ‘নাট্যজনেরা’ আছেন, তাঁরা ধ্বংসের আভাসটা পেয়েও নিশ্চুপ। কারণ প্রতিবাদটা করলে ‘মাস্তান রাজনৈতিক কর্মীরা’ খানিকটা কোণঠাসা হবেন…।" ঋদ্ধি-কৌশিকের এই প্রতিবাদটা আসলে নাট্যকর্মী অমিত সাহার ওপর আঘাত হানার জন্যে।
সম্প্রতি অভিযোগ ওঠে, নাট্যশিল্পী তথা অভিনেতা অমিত সাহা ও অরূপ খাঁড়াকে রাজ্যের শাসকদলের হাতে শারীরিকভাবে নিগৃহীত হন। গত ২৩ ডিসেম্বর বেলেঘাটা পার্টি অফিসে নাট্যোৎসব করার আবেদন জমা দিতে গিয়ে শাসকদলের নেতার হাতে প্রহৃত হন অমিত ও তাঁর বিদূষক নাট্যমণ্ডলীর সহকর্মীরা। অভিযোগের তীর তৃণমূল নেতা অলোক দাসের বিরুদ্ধে। যদিও এপ্রসঙ্গে কোনওরকম মুখ খোলেননি তিনি। তবে কলকাতার বুকে নাট্য অভিনেতাকে এভাবে চড়-চাপড় মেরে ধাক্কা দিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগে তীব্র আলোড়ন দেখা দিয়েছে। অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য যেমন শাসকদলের বিরুদ্ধে খোলা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন যে, ১৫ জানুয়ারি রবীন্দ্রসদনে নাটক করছি এসে মেরে যান, তেমনই প্রতিবাদে মুখর সৃজিত মুখোপাধ্যায়, ঋত্বিক চক্রবর্তী, প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যরা। এবার তৃণমূল নেতার এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোজাসাপটা কথা ঋদ্ধি-কৌশিকেরা।
ঋদ্ধি বললেন, "অমিত সাহা এবং অরূপ খাঁড়ার গায়ে হাত ওঠার ঘটনায় গোটা পশ্চিমবঙ্গের শিল্পীরা এগিয়ে আসুক। দেখা যাক কতজনের গায়ে হাত তুলবে এই তৃণমূলের লুম্পেন গুন্ডা বাহিনী l নাট্যোৎসবকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে এরা দেখিয়ে দিল যে মানুষের থেকে কেকের মূল্য বেশি l সদ্য গজিয়ে ওঠা উৎসবের ভিড়ে আরেকটা উৎসব জুড়ে দেওয়া হোক। গণধোলাইয়ের উৎসব। যুক্তি আর বুদ্ধিকে চিতায় তুলে সব শাসকদল সেই গায়ে হাত তোলে, আবার তুলবে, বার বার তুলবে, আমরা ব্যর্থ, নির্লজ্জ, হতভাগ্য জনগণ। এই গায়ে হাত তোলা আমাদের সকলের গায়ে হাত তোলা l গণতন্ত্র পালন করা, ভোট এবং ট্যাক্স দেওয়া নাগরিককে রাতের বেলা পুলিশ ঘুষ চাইতে গিয়ে সুবিধে করতে না পেরে হেনস্থা করবে মিথ্যে অভিযোগ এনে। আর অমিত সাহাদের সুস্থভাবে নাট্যোৎসব আয়োজন করার জন্য মার খেতে হবে l মার খাবে তারা যারা সৎভাবে, নিষ্ঠা নিয়ে একটা নাট্যোৎসব করার চেষ্টা করবে l ধিক তৃণমূল কংগ্রেস l"
ছেলের পরই ব্যাটন ধরলেন কৌশিক সেন। বিশিষ্ট নাট্যকর্মীর মন্তব্য, "ক্ষমা করবেন। জানি যে কোনও বিষয় বা একটা প্রসঙ্গ খুব চট করে আজকাল ফুরিয়ে যায়। অথবা হয়ে পড়ে ‘মরচে পড়া পেরেকের’ মতো ভোঁতা l ২৪শে ডিসেম্বর ২০২২-এ কল্যাণীতে একটি নাটকের অভিনয় করতে যাওয়ার সময় যে খবরটা পেয়েছিলাম সেটা হতে পারে ‘কেক বনাম থিয়েটার’ কিংবা ‘ক্ষমতা বনাম থিয়েটার’, অথবা ‘অসভ্যতা বনাম সভ্যতা’ শিরোনাম যাই হোক না কেন, মারটা জুটেছে ‘বিদূষক নাট্যমেলার’ ভাগ্যে l"
<আরও পড়ুন: ‘রবীন্দ্রসদনে নাটক করছি, এসে মেরে যান..’, শাসকদলকে খোলা চ্যালেঞ্জ অনির্বাণের>
এরপরই কৌশিক সেন যোগ করলেন, "বেলেঘাটায় একটি দুদিনের নাট্যউৎসব করতে গিয়ে এই ঘটনা l ২৪ তারিখ এবং তারও পরে আরও দু-তিন দিন কয়েকটা বৈদ্যুতিন মাধ্যমে মৌখিক প্রতিবাদ জানানোর অথবা অমিত সাহাকে ভিডিও বার্তা পাঠানোর পরও দেখলাম প্রসঙ্গটা পুরাতন হচ্ছে না। বরং আরও নানান ভঙ্গি এবং চেহারায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে l আর হচ্ছে বলেই ঘটনাটা ‘ভুলছি না ভুলবো না’ গোছের একটা স্লোগান হয়ে পাক খাচ্ছে মাথায় l তৃণমূল কংগ্রেস শুনলাম পুরো ব্যাপারটাই অস্বীকার করেছে। যেমন সমস্ত রাজনৈতিক দল করে থাকে। এর মধ্যে বিস্ময়ের কিছু নেই lআজ বিদূষক নাট্যমন্ডলী কাল নাট্য আকাডেমির সভ্যরা অথবা খোদ সভাপতি কিংবা ভজন কীর্তন আবিষ্ট যে কোনও নাট্যদল আক্রান্ত হতে পারেন। তৃণমূলী ভাবাবেগ কখন কাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে কে বলতে পারে? আর বঙ্গে তো উৎসবের অভাব নেই। যত উৎসব, তত ক্ষমতা আর যত ক্ষমতা তত গর্জন l এই ঘটনা ভুলতে দেওয়া যাবে না। তাই আমরা আমাদের প্রতিটা নাটকের অভিনয়ের পর এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাব l”