কিসের স্বাধীনতা? যেখানে ৭৮ বছর পরও ভারতবর্ষের মেয়েরা সুরক্ষিত নয়, সেখানে স্বাধীনতা দিবসের উদযাপন মানায় না। এমনটাই শোনা যাচ্ছে সমাজমাধ্যমের পাতায়। স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের অন্য দৃশ্য নজরে আসছে। আজও এদেশে মেয়েদের সঙ্গে হওয়া এরকম নির্মম হত্যার কোন বিচার হয় না।
বরং এদেশে একজন মেয়ের সঙ্গে অত্যাচার হলে তার পোশাক তার আচার আচরণ সে ওই মুহূর্তে কোথায় ছিল করা হয়, এই নিয়েই বিচার বিবেচনা করা হয়। আর জি কর মেডিকেল কলেজে একজন জুনিয়র ডাক্তারকে সেমিনার হলে ধর্ষণ করে ফেলে রাখার পরেও, মেয়েরা যখন রাতের দখল নিলো, তখনই ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয় হাসপাতালে ইমারজেন্সি ডিপার্টমেন্ট। আজকের স্বাধীনতা মোটেই স্বাধীনতা নয়।
আর এরই মাঝে অভিনেত্রী মধুমিতা সরকার সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেন। তিনি আওয়াজ তুলেছিলেন যে গতকালের সমাবেশে তিনি থাকবেন। কিন্তু তাকে সেই ভাবে দেখা যায়নি। আর আজ সকাল হতেই পরনে সাদা রঙের সালোয়ার কামিজ যাতে তিরঙ্গা আঁকা, স্বাধীনতা দিবসের পোস্ট করলেন তিনি। যাতে লিখলেন, "স্বাধীনতা দিবেস একটি প্রার্থনা, নিঃশ্বাসটুকু যেন স্বাধীনভাবে নিতে পারি আমাদের ভারতবর্শে।" ভারতবর্ষ বানানটি দেখে অবাক সবাই প্রাসঙ্গিক। কিন্তু অভিনেত্রী ঠিক এই বানানটি লিখেছেন। এর আগেও তিনি একবার, নিজের পোষ্টের মাধ্যমে ব্লান্ডার করেছিলেন। তবে আজকে তার এই ঘটনাটি নজর এড়ায়নি, ঋদ্ধি সেনের।
অভিনেতা তীব্র নিন্দা করলেন মধুমিতার। তার পাশাপাশি অভিনেতা হিসেবে এরা কলঙ্ক, আজ যে সকালে কলকাতার বুকে স্বাধীনতা পালনের কোন ইচ্ছেই নেই মানুষের, সেদিনও সাদা পোশাক পরে, ওড়না উড়িয়ে স্বাধীনতা যাপনের বিষয়টিকে ঋদ্ধির একদম পছন্দ হয়নি। তিনি লিখছেন..."স্বাধীনতা ‘ দিবেস’ ????? ভারতবর্ষ বানান লিখতে জানে ?? ঘেন্না ধরে গেলো । ন্যূনতম লজ্জা, শিক্ষা আর বোধ মুছে গেছে এই বিনোদন জগতের বহু কর্মীর মধ্যে থেকে। রক্তে মাখা স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস পেরিয়ে আজ ৭৮তম বছরে পৌঁছেও রক্তের দাগ মুছে ফেলা যাচ্ছে না , যে রাজ্যে এক ডাক্তারের সাদা পোশাক ভেসে গেলো রক্তে সেই রাজ্যে এদের মতো অশিক্ষিত ব্যক্তি সাদা পোশাক পরে ওড়না উড়িয়ে দন্ত বিকশিত করে ভুল বানানে স্বাধীনতা দিবস পালন করার অভিনয় করছে। এরা কোনোদিনই শিল্পী ছিল না , ছিল না অভিনেতা। অভিনয় শিল্পর সাথে যুক্ত থাকতে গেলে সবার আগে প্রয়োজন সামাজিক সংযোগ, প্রয়োজন শিক্ষা ।"
অভিনেতা হওয়ার আগে তিনি একজন মানুষও। যেকোনো মানুষের এই ঘটনার পর স্বাধীনতা উদযাপনের ইচ্ছে হতে পারে না বলেই ঋদ্ধির মতামত। অভিনয় শুধু pretention নয়, বরং অভিনয় সত্যটা কে তুলে ধরা। ঋদ্ধি আরও বলছেন... "সমাজ , ইতিহাস, শিক্ষা, এই শব্দগুলো এদের কাছে ভিনগ্রহী , অভিনয় মানে ভান করা নয়, অভিনয় মানে নিজের সর্বস্ব দিয়ে সত্যিটা কে খুঁজে বার করা । Acting is not pretension, The art of acting is about unfolding the ‘truth’। এরা জানে শুধু ভান করতে, এরা সারাজীবন শুধু ভান করে যেতে শিখেছে, অভিনেতা হিসেবে ভান করেছে , শিল্পী হিসেবে ভান করেছে , নাগরিক হিসেবে ভান করেছে , এমনকি মানুষ হিসেবে ভান করেছে । এরা আমাদের পেশায় কলঙ্ক। স্বাধীনতা দিবস নিয়ে বলার আগে নিজের ভণ্ডামি আর অশিক্ষা থেকে স্বাধীন হন, আমাদের কর্মক্ষেত্রও স্বাধীনতা চায় আপনাদের মতো অশিক্ষিত শিল্পীর কাছ থেকে ।"
আরজিকরের ঘটনা তীব্র নিন্দায় ফেটে পড়েছে গোটা দেশ। বিদেশে নারা প্রান্তে মেয়েটির হয়ে জাস্টিসের আর্জি জানিয়েছেন প্রত্যেকে। গতকাল রাতে তিলোত্তমা দেখেছে এক অনন্য দৃশ্য। যেখানে পাঁচ বছরের বাচ্চা মেয়ে থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধা, সকলেই দলে দলে যোগ দিয়েছিলেন রাত দখলে। যদিও, মধুমিতা পরে, পোস্টটি ঠিক করে নেন। এবং ঋদ্ধিও সেটি ডিলিট করে দেন।