/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/03/kantara-chapter-1-movie-review-rating-rishab-shetty-2025-10-03-10-29-02.jpg)
কেমন হল এই ছবি?
কান্তারা (২০২২) এ, কাম্বালা প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হওয়ার সাথে সাথে, একজন গ্রামের প্রবীণকে, কাদুবেট্টু শিবাকে (ঋষভ শেট্টি) বলতে দেখা গেছে, "ওরা ওদের সমস্ত শক্তি দিয়ে দৌড়াচ্ছে।" যদিও প্রাথমিকভাবে এই সিনেমাটিকে এলোমেলো পর্যবেক্ষণ বলে মনে হয়েছিল, সিনেমাটি এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যে এটি একদিক থেকে কান্তারার মূল বিষয় তৈরি করেছিল।
২০২২ অ্যাকশন থ্রিলারের পক্ষে যা কাজ করেছিল তা হ'ল রিশব, যিনি সিনেমাটি লিখেছিলেন এবং পরিচালনা করেছিলেন, বেশ কয়েকটি ছোট উপাদান - অ্যাকশন, প্রতিক্রিয়া, অঙ্গভঙ্গি, ঘটনা, ভিজ্যুয়াল রূপক, সংলাপ ইত্যাদি একসাথে, আঠালো একটি প্যানোরামিক চিত্র তৈরি করতে, এমনকি মাইক্রোস্কোপিক উপাদানগুলিও বৃহত্তর ছবিতে অবদান রাখে। এই সবকিছুর নীচে, কান্তারার একটি আত্মাও ছিল। যাইহোক, এর প্রিকুয়েল, কান্তারা: অধ্যায় ১-এ, যা অবশিষ্ট রয়েছে তা হ'ল চিৎকার, যা আগের চেয়ে জোরে, যখন আত্মা অস্থিরভাবে ঝলমল করে। ২০২২ সালের কান্তারার বহু শতাব্দী আগে ঘটনার প্রেক্ষাপটে নির্মিত কান্তারা: চ্যাপ্টার ১ শুরু হয় শিবের পিতা, এক ভূত কোল শিল্পীর রহস্যময় অন্তর্ধানকে ঘিরে। এই জায়গাটির সঙ্গে যুক্ত, ঐশ্বরিক সংযোগই গল্পের কেন্দ্রবিন্দু।
ঘন অরণ্য "কান্তারা", যাকে স্থানীয়রা "ঈশ্বরের বাগান" বলে ডাকে, সেখানে একটি উপজাতি সম্প্রদায় বসবাস করে। তাদের রক্ষাকর্তা হলেন দেবতুল্য পাঞ্জুর্লি ও গুলিগা। প্রকৃতি ও মাটির সঙ্গে তাদের নিবিড় সম্পর্ক, তাদের অস্তিত্বকে সুরক্ষা দেয়। রাজা বিজয়েন্দ্র (জয়রাম) বুঝতে পারেন কান্তারার রহস্যময় শক্তি, তাই তিনি তার রাজপরিবার ও জনগণকে বনভূমিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু বছর কয়েক পর তার ছেলে কুলশেখর (গুলশান দেবাইয়া) সিংহাসনে বসে, শিকারের অজুহাতে নিষিদ্ধ অরণ্যে প্রবেশ করে। সেখান থেকেই শুরু হয় সংঘাত- রাজপরিবার বনাম উপজাতি।
বার্মে (ঋষভ শেঠি) নামের এক শক্তিশালী যোদ্ধার নেতৃত্বে উপজাতিরা নিজেদের ভেতর থেকে বেরিয়ে বাইরের জগৎকে চেনা শুরু করে। রাজকুমারী কনকবতী (রুক্মিণী বসন্ত) বার্মের প্রতি মমতা দেখালে, কুলশেখর নিজের সিংহাসন হারানোর আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। এর মধ্যেই আরেক উপজাতি, যারা কালো যাদুতে লিপ্ত, রাজপরিবারের সঙ্গে মিলে কান্তারাকে ধ্বংস করার চেষ্টা চালায়। ফলে সংঘাত রূপ নেয় যুদ্ধের।
যেখানে প্রথম অংশে কান্তারার গল্পে, শক্তি, প্রতারণা, নিপীড়ন ও প্রতিরোধের দারুণ মিশেল ছিল, সেখানে এই কিস্তিতে আখ্যান অনেকাংশে বার্মের ব্যক্তিগত কাহিনিতে সীমাবদ্ধ। উপজাতিদের প্রকৃতি ও ভূমির সঙ্গে সম্পর্ক, কিছুটা দেখানো হলেও, জমির অধিকারের মতো গভীর থিম যথাযথভাবে স্পর্শ করা হয়নি। ঋষভ অপ্রয়োজনীয় দৃশ্যের ওপর বাড়তি মনোযোগ দিয়েছেন। যেমন-বাজারে হট্টগোল বা ঘোড়া ছুটে যাওয়ার দৃশ্য, যেখানে প্রোডাকশন ডিজাইন সমৃদ্ধ হলেও কাহিনি অগ্রসর হওয়ার জায়গা নেই। এই বাড়তি জাঁকজমক গল্পের আবেগকে দুর্বল করেছে।
চরিত্র গড়ার ক্ষেত্রেও ব্যর্থতা চোখে পড়ে। উপজাতির অধিকাংশ চরিত্র ব্যাকগ্রাউন্ডে থেকে যায়, সংলাপ প্রাপ্তদের অনেককে জোর করে হাস্যরস সৃষ্টির চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছে। ফলে দর্শকের সঙ্গে আবেগের সেতু তৈরি হয় নি খুব একটা। সব দুর্বলতার পরও ছবিটি ভিজ্যুয়াল গ্র্যান্ডিওর মুগ্ধ করে। সিনেমাটোগ্রাফার অরবিন্দ এস. কাশ্যপ, প্রোডাকশন ডিজাইনার বাংলান, আর্ট ডিরেক্টর ধরনী গঙ্গেপুত্র এবং কস্টিউম ডিজাইনার প্রগতি শেঠির অবদান ছবিটিকে ভিজ্যুয়ালি অসাধারণ করে তুলেছে। সাউন্ড ডিজাইন, এডিটিং এবং ভিএফএক্সও প্রশংসার দাবিদার।
তবে বি. অজনীশ লোকনাথের সঙ্গীত এবার আগের কিস্তির মতো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি, যদিও কয়েকটি অ্যাকশন দৃশ্যে তাঁর সংগীত আলাদা মাত্রা যোগ করেছে।
অভিনয়
ঋষভ শেঠি, শারীরিকভাবে চ্যালেঞ্জিং দৃশ্যগুলোয় দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন, বিশেষ করে ক্লাইম্যাক্সে গুলিগা ও চামুন্ডির আক্রমণের দৃশ্যগুলোয়। রুক্মিণী বসন্ত, যদিও প্রতীকী মহিলা চরিত্রে হাজির হয়েছেন, শেষের দিকে তার আর্কের টুইস্ট, গল্পে নতুন মাত্রা আনে। তিনি সূক্ষ্ম অভিনয়ের মাধ্যমে, কনকবতীর নৈতিক দিককে ফুটিয়ে তুলেছেন।
চূড়ান্ত মূল্যায়ন
কান্তারা: চ্যাপ্টার ১ একদিকে ভিজ্যুয়াল ভোজ, অন্যদিকে গল্পের দিক থেকে সীমাবদ্ধ। এটি উপজাতিদের সংগ্রাম, প্রকৃতি ও ঐশ্বরিক সংযোগের কথা বললেও, শেষ পর্যন্ত বার্মেকে কেন্দ্র করে তৈরি এক আধ্যাত্মিক নায়কের সিনেমা। ঋষভ শেঠি পরিচালনা ও অভিনয়ে নিজেকে নতুন উচ্চতায় তুললেও, গল্পে প্রয়োজনীয় আবেগ ও গভীরতা ছুঁতে পারেননি।
ছবির নামঃ কান্তারা চ্যাপ্টার ১
অভিনয়েঃ ঋষভ শেঠি, রুক্মিণী বসন্ত, গুলশান দেবইয়া, জয়রাম
রেটিংঃ ৩/৫