তিনি প্রথাগত রীতি ভেঙে একের পর এক ভিন্ন স্বাদের চরিত্রে অভিনয় করে চলেছেন। কখনও মহিলা পুরোহিত, আবার কখনও ওজনের সংজ্ঞা পাল্টে ফেলে সকলের কাছে নিজেকে তুলে ধরেছেন অন্যভাবে। তাঁকে বং ক্রাশ বলে থাকেন বাংলার ছেলেরা। দীর্ঘদিন অভিনয় করছেন এই ইন্ডাস্ট্রিতে। কিন্তু 'ফাটাফাটির' আগে, বেশ কিছু ফটাফট উত্তর দিয়েছেন তিনি। ছবির অভিজ্ঞতা - অনুভূতি নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে আড্ডায় ঋতাভরী চক্রবর্তী।
আছ কেমন?
উফ! কী যে ব্যস্ততা...কী আর বলি! একদিকে ছবি রিলিজের উত্তেজনা তাঁর সঙ্গে নতুন কাজ, আড্ডা গল্প সবমিলিয়ে ওই আর কি।
'ফাটাফাটি' কি ঋতাভরীর জীবনের অন্যতম সেরা ছবি হতে চলেছে?
আমি তো তাই মনে করি। আমার জন্য প্রত্যেকটা ছবিই এমনই। মানে আমি যেভাবে এই ছবিটার জন্য কাজ করেছি, যতটা দিয়েছি। ধর, ২৫ কেজি ওজন বাড়ানো থেকে এমন একটা চরিত্রে অভিনয় করা যেটা আমি নই। কারণ ফুল্লোরা যেভাবে টোন টিটকিরি শুনে বড় হয়েছে, মুটকি, ধেপসু...আমি ঋতাভরী হিসেবে এমন ছিলাম না। তো, এটা ফুল্লোরার জার্নি বলতে পারো। সেটা আমায় তৈরি করতে হয়েছে।
ওজন নিয়ে বাস্তবের জীবনে একটা তরজা চলে, সেটা কতটা প্রভাব ফেলে মানুষের জীবনে?
প্রচণ্ড প্রভাব ফেলে... মারাত্মকভাবে। হেলথ এবং ডায়েট, বিউটি ইন্ডাস্ট্রি মানে মানুষের একটা নিরাপত্তাহীনতা থেকে আসে। যে আপনার সব আছে কিন্তু এটা নেই, আবার ভুঁড়ি আছে কিন্তু আপনি রোগা, এগুলো থাকা মানে যেন অপরাধ। যেন জীবন পারফেক্ট নয়। মানুষ অনেকসময় মনে করে, যে জীবন যেন সম্পূর্ন নয়। বিশেষ করে মেয়েরা, তাদের যে কত কিছু শুনতে হয়। ডানা কাটা পরী হতে হবে যেন মেয়েদের, সবকিছু পারফেক্ট হতে হবে।
একটা সময় তোমাকেও ওজন নিয়ে নানা কথা শুনতে হয়েছে, কীভাবে হ্যান্ডেল করেছ সেসব?
আমার সার্জারির পর ৬কিলো বেড়েছিল। একটা নয়, দুটো সার্জারি..আমি এটুকু বুঝেছিলাম যে মানুষ কতটা হৃদয়হীন হতে পারে। এত্ত রুঢ় আচরণ। বডি শেমিং করতে তাদের একটুও বাঁধে না। শরীর খারাপ, বা ওজন বেড়ে যাওয়া কোনও অপরাধ নয়। তাদের কি এসব নিয়ে আলোচনা করা ছাড়া কাজ নেই আর?
বডি পজিটিভিটি শব্দটা আসলেই কি মানে রাখে?
বডি পজিটিভ আসলে কী বলতো, নিজেকে হেলদি এবং ফিট রাখা। সকলের ক্ষেত্রে সবকিছু সমান হয় না। সাইবার হেলথ কেয়ার বা ইস্যু এক নয়। তাই আমায় যেটা ভাল রাখবে সেটাই বডি পজিটিভিটি। আমার বিষয়টা পাশের জনের জন্য এক নাও হতে পারে। খুব রোগাদেরও উল্টোপাল্টা কথা শুনতে হয়। আমার দিদিকেও শুনতে হয়েছে কাঠ, লাঠি এসব।
আবিরদার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
আবিরদার সঙ্গে, খুব স্মুথ ছিল কাজ করার বিষয়টা। আমরা খুব হ্যাপিলি কাজ করেছিলাম। কী বলতো, দুজনেই সময়টাকে বেচেঁছি এবং উপভোগ করেছি। ফাটাফাটি ডিজাইনার জীবন বেঁচেছি। একটা সংসার হয়েছিল অভিনয়ের সূত্রে।
অনেক অভিনেত্রী যারা চরিত্রের খাতিরে ওজন বাড়িয়ে থাকেন, তাতে কি বিরাট মাইন্ড সেটের প্রয়োজন পড়ে?
ওমা! বিরাট...একটু আধটু না! অনেক কথা শুনতে হয়। আমি এতগুলো বিজ্ঞাপন করছি, ব্র্যান্ড দেখছি, তাদের থেকে একটা স্বচ্ছ আচরণ পাওয়া যে তাদের অসুবিধা হবে কিনা। আমার মার্কেট ভ্যালু পড়ে যাবে কিনা, এগুলো দেখতে হবে না? এতে বিরাট রিস্ক থাকে। আমি ফেইল করতে পারি। এটার জন্য তো বলতে পারো হ্যাঁ আমায় অনেকটা নিজেকে বোঝাতে হয়েছে।
লিড অভিনেত্রী হতে গেলে কি ওজন কম, অথবা রোগা পাতলা হওয়ার খুব দরকার?
বিদ্যা বালান প্রমাণ করেছেন, যে একেবারেই নয়। এটা নির্ভর করে। সংখ্যাটা খুবই কম। কত হেলদি অভিনেত্রী আছেন দিনের পর দিন ভাল কনটেন্ট দিয়ে চলেছেন। আসলে, এটা খুবই একটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজকে তুলে ধরে। সফল জায়গায় পৌঁছনের পর অনেক অভিনেত্রীই সেটাকে ধরে রাখেন। তখন তাঁদের চেহারা নিয়ে আর কোনও সমস্যা হয় না। কিন্তু যারা ছবি তৈরি করছেন, তাদের খুব নিচু মানসিকতার পরিচয়। এভাবে একজন লিড অভিনেত্রীকে বেছে নেওয়ার কোনও প্রয়োজন পড়ে না।
নিজেকে মন থেকে ফিট রাখতে ঋতাভরী কী কী করে?
অনেক কিছু করে। কিন্তু প্রথম যেটা করে, তুলনা না করা। অন্যের সঙ্গে আমার ইতিহাস, ভবিষ্যতের কোনও মিল নেই। তাই তুলনা জিনিসটা আমি একদম করি না। আমার কাজ, চেহারা সবকিছুই আলাদা...তাই এসব বলে লাভ নেই।
দ্বিতীয়, আমি খুব কাছের মানুষের সঙ্গে থাকতে পছন্দ করি। আমার পরিবার তো বটেই তবে ৮৯টা মুক ও বধির বাচ্চা, ওরা আমার ভীষণ কাছের। ওরা বারবার আমায় আমার জীবনে বাঁচার, ভাল থাকার দিকটা মনে করিয়ে দেয়। এই যে মানুষের জীবনে আমার একটা গুরুত্ব, এটা আমায় খুব আরাম দেয়।
কতটা গৃহকর্মে নিপুণ তুমি?
আমি, ( হাসি )... বাড়ির কাজ করতে খুব ভালবাসি। তাই বলতে পারো যে আমি গৃহকর্মে নিপুণ। রান্না করতে খুব একটা না, তবে বাড়ি গোছাতে, সুন্দর ছবি আঁকতে ভালবাসি। আমি জানি না কেন, আমার শিল্পীসত্বা খুব স্ট্রং।
চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করা কি ঋতাভরীর অন্যতম পছন্দ? নাকি স্টিরিওটাইপ মেন্টালিটি ভাঙার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন আপনি?
( হাসি ) কোনও দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিই নি বিশ্বাস করো। এটুকু কাঁধ, আর কত দায়িত্ব নেব। হ্যাঁ, চ্যালেঞ্জিং চরিত্র আমার খুব ভাল লাগে। মনে হয়, দর্শকদের নতুন কিছু দিতে পারব। নতুন চমক থাকলে ভাল হয়। আবার অনেক চরিত্র ফেলেও দি। সেইজন্য যেটা আমার কাছে চ্যালেঞ্জ লাগে সেটাই দেখি। মানুষের কাছে পৌঁছানোটা খুব দরকার। আমার অডিয়েন্স আমার খুব কাছের।
শেষ কিছুদিন তোমায় এবং তোমার সম্পর্ক নিয়ে এত মন্তব্য... তোমার প্রতিক্রিয়া?
বিশ্বাস করো, খুব ক্লান্ত! এত্তোগুলো ছবিতে কাজ, বিজ্ঞাপন শুটিং করেছি। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অন্তত এই সময় কাটাছেঁড়া না হলে খুব ভাল হত।
জিতু কামালের সঙ্গে কাজ করছ, পর্দার সত্যজিতের সঙ্গে কাজ করার জন্য বিশেষ কোনও প্রিপারেশন?
ছবির জন্য প্রিপারেশন। জিতু কামালের সঙ্গে এই প্রথম কাজ। ১৫ তারিখ লন্ডন যাচ্ছি শুটিংয়ে। খুব মিষ্টি একটা গল্প। আমার যে মেয়ে হয়েছে উদিতা, ওকে নিয়ে আমি খুব আগ্রহী। জিতু তো বটেই, তবে মেয়ে এবং মা এর জুটিও ভাল লাগবে সকলের।
টেলিভিশন, সিনেমা হলেও ওয়েব সিরিজে কেন দেখা যাচ্ছে না তোমায়?
সেটাও দেখা যাবে। খুব শীঘ্রই! সব বলব তোমাদের। প্রথম সিরিজে হাত দেওয়ার পর ধামাকা হবে।
এত ভাল ভাল চরিত্রের পরেও সকলের কাছে তুমি আজও ললিতা...কেমন লাগে?
ললিতা, আমার কাছে খুব প্রিয়। মানুষের কাছে আমি পৌঁছে গিয়েছিলাম, ললিতাকে সঙ্গে নিয়েই। ছোটবেলার ডাক নামের মত...আমি যাই করি না কেন, এটা খুব পছন্দের নাম।