প্রায় ১১টা বছর। ঋতুপর্ণ যেদিন চলে গেলেন সেদিন সকাল থেকেই ভীষণ বৃষ্টি। তাসের ঘরের সামনে সেদিন তারকারা একে একে এলেন, তাদের ঋতুকে দেখলেন তারপর, সেই বাড়িটাই রয়ে গেল একলা। একসময় যেই বাড়িতে ঋতু একের পর এক নায়িকাকে তৈরি করেছেন। সবসময় যাদের নিয়ে গল্প বলার সাহস দেখিয়েছিলেন তিনি।
Advertisment
নারীকেন্দ্রিক গল্প বলার মত সাহস কিংবা সহজ উপায় বোধহয় ঋতুপর্ণর বাইরে আর কেউ দেখাতে পারেননি। সেকারণেই বোধহয় নায়িকাদের ভীষণ পছন্দের তাদের ঋতুদা। আজ এতবছর পরেও তারা ঋতুকে নিয়ে স্মৃতি চারণা করলেই যেন চোখের সামনে সেসব দৃশ্য ভেসে ওঠে।
শুটিং ফ্লোর থেকে সেসব মুহূর্ত যা ঋতুকে সব পরিচালকের থেকে আলাদা করত, আজও সেসব মনে রেখেছেন নায়িকারা। মিমি চক্রবর্তীর শুরুই হয়েছিল ঋতুপর্ণ ঘোষের হাত ধরে। তাঁর নির্মিত পুপে বেশ নজরে এসেছিল সকলের। এমন রাবীন্দ্রিক এবং গম্ভীর চরিত্র তাও আবার প্রথম কাজ মিমির। কীভাবে সব সম্ভব হয়েছিল এই প্রসঙ্গে অভিনেত্রী জানিয়েছিলেন... "গানের ওপারেতে সুযোগ হওয়ার পর ঋতু দা বলেছিলেন সবসময় শাড়ি পড়তে হবে। আমায় ঋতু দা শুধু শাড়ি পড়া নয় বরং কী করে কথা বলতে হবে। পূপে কোন সময় শরীর আঁচল কেমন রাখবে, সেটাও শিখিয়েছিল।"
অন্যদিকে ঋতুপর্ণা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার কাছে জানিয়েছিলেন ঋতুদা দোসর এবং চোখের বালি আমায় অফার করেছিল। আমার করা হয়ে ওঠেনি। আর, আজ অভিনেত্রী নিজেই পরিচালকের উদ্দেশ্যে লিখলেন - "তোমার না থাকার শূন্যতা কখোনোই পূরণ হবে না, তুমি মনের মধ্যে রয়ে যাবে আজীবন। ভালো থেকো ঋতুদা।"
আরেকদিকে, অপরাজিতা আধ্য সেসব দিনের কথা আজও ভোলেননি। ঋতুদাকে খোলা চিঠি লিখলেন অপা। "কতদিন হয়ে গেল তাই না ঋতুদা? আমায় তোমার মনে আছে এখনও? আমার কিন্তু তোমায় রোজ মনে পড়ে। 'অ্যাকশন', 'কাট'-এর জগৎ পেরিয়ে তুমি আমায় অন্তরে অন্তরে ভাবিয়ে তোলো। অভিভাবক, বন্ধু, পরিচালক সব কিছু পেরিয়ে, সেই মানুষটাকে খুঁজি সিনেমা পাড়ার কোনায় কোনায়। সেই যে আমায় সাহস দিয়েছিল এগিয়ে যাওয়ার, সেই মানুষ যাঁর সঙ্গে দেখা হলেই মন খুশি, অপরিসীম পরিপূর্ণতা। কোথায়? কোথায় সেই মানুষ? এখন তোমার অপা অনেক বড় হয়ে গেছে ঋতুদা, সেই ছোটটি নেই জানো তো। আমি ঠিক আছি, যেখানেই থাকো ভাল থেকো।"
বাড়িওয়ালী হোক অথবা উৎসব কিংবা খেলা... অথবা দ্যা রেইনকোট...একের পর এক ভিন্ন ধরনের ছবি বানিয়ে তাক লাগিয়েছেন তিনি। আর সেকারণেই এত ঋতু বদলালেও ঋতুপর্ণকে ছাড়া সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি ভাবা প্রায় অসম্ভব।