Advertisment
Presenting Partner
Desktop GIF

Rituparna Sengupta: অসুর নিধন না হলে পৃথিবী একদিন মাতৃ শূন্য হয়ে যাবে: ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত

Rituparna on Pujo Planning: পুজোয় এবার কী প্ল্যানিং ঋতুপর্ণার? অভিনেত্রী জানিয়েছেন, কলকাতা থেকে মুম্বাই সর্বত্র থাকতে হবে তাঁকে। এমনকি সিঙ্গাপুরেও তাঁকে দেখা যাবে...

author-image
Anurupa Chakraborty
আপডেট করা হয়েছে
New Update
rituparna sengupta

কলকাতার পুজো এবং মুম্বাইয়ের পুজোর মধ্যে পার্থক্য পান ঋতু?

সারা শহর জুড়ে পুজো পুজো ভাব। তিথি অনুযায়ী মা দুর্গা এখনও মর্ত্যে না এলেও শহর এবং মফস্বলে জুড়ে, প্যান্ডেল হপিং থেকে লাইট, জানান দিচ্ছে পুজো এসে গিয়েছে। আর পুজোয় তারকারা কী করছেন, এই নিয়ে আগ্রহ থাকে অনেকের। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, বহু বছর ধরে বাংলার পূজোর পাশাপাশি মুম্বাইয়ের ইন্ডিয়ান বাংলা ক্লাবের পূজার মুখ।

Advertisment

ঋতুপর্ণা মিলিয়ে গুছিয়ে, পূজায় সব জায়গাতেই থাকেন। কলকাতা থেকে মুম্বাই কিংবা সিঙ্গাপুর সর্বত্রে অভিনেত্রীকে পার্টিসিপেট করতে দেখা যায়। অভিনেত্রীর কাছে, পূজার অভিজ্ঞতা ঠিক কেমন সেটা জানতেই ফোন করেছিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা।

কলকাতার পুজো এবং মুম্বাইয়ের পূজার মধ্যে পার্থক্য কী কী বুঝতে পারেন?

দেখো, বলতে গেলে কলকাতা থেকে তো পুজোর শুরু, বাঙ্গালীদের পুজো মানে কলকাতা শহরের মধ্যে আলাদা ভাইব্রেশন আছে। পাড়ায় পাড়ায় ঢাকের আওয়াজ। সকাল থেকে রাত মাইকের আওয়াজ। কিন্তু দেশের অন্যত্র বা প্রবাসে যখন পূজোর আয়োজন হয়, সেটা একটু অন্যরকম হয়। যদি এখন এত সুন্দর আয়োজন করে ওরা। এখন পুজোটা শুধু বাঙ্গালীদের নিয়ে সকলের হয়ে দাঁড়িয়েছে। কলকাতার পূজার মতো বিরাট পরিসরে না হলেও, বাইরের পুজো এখন বেশ বড় করেই হয়। একটা অন্য আবেগ তৈরি হয়।

ইন্ডিয়ান বাংলা ক্লাবের যখন পুজোর মুখ হিসেবে প্রস্তাবনা পেয়েছিলেন, অনুভূতি কেমন হয়েছিল?

সেটা তো অনেক বছর ধরে আমি ওদের পুজোর মুখ। এটা আমার একটা পরিবারের মত হয়ে গেছে। এটা আমার কাছে একটা বড় পাওয়া। সারা বোম্বেতে পোস্টার পড়েছিল। আমার কাছে এটা খুব আনন্দের বিষয় হয়েছিল তখন। আমি, এটা ভেবে খুব খুশি হয়েছিলাম যে প্রবাসী বাঙালিরা একটি পুজো করছি বোম্বেতে, এবং আমাকে সেখানে একটা এত বড় জায়গা দেওয়া হয়েছে, পুজোর জন্য আমি সবাইকে আহ্বান করছি, এটা আমার কাছে একটা বিরাট পাওয়া ছিল। আমার কাছে এটা একটা পরিবারের জায়গায় চলে গেল। এটার একটা দারুন আমেজ ছিল। সেখানে ভোগ খাওয়া, পাশাপাশি শিল্পীরা আসতেন। তার থেকেও বড় কথা কৃষ্ণেন্দু দা যিনি এই পুজোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তিনি এবং তার স্ত্রী কাজল বৌদি, আমার ভীষণ কাছের। গত বছর তাদের ছেলে রোমান চলে যাওয়ার পর, আমার যে কি দুঃখ হয়েছিল। ও ভীষণ পুজো নিয়ে আগ্রহ রাখত। ওরা সব সময় পুজোটাকে খুব সুন্দর গ্র্যান্ড ভাবে ভাবতে পারে।

পুজো চলে এসেছে মোমেন্ট আপনার কাছে কোনটা?

আমার কাছে পূজো মানে, মহালয়ার দিন সকালবেলা বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের শ্লোক এবং সেই চন্ডীপাঠ। ঘুম চোখে ভেঙে রেডিও শোনা। যখন খুব ছোট ছিলাম মনে আছে ঠাকুমার সঙ্গে উঠে সকালবেলা শুনতাম। তখনই মনে হতো পুজো এসে গেছে। তখনই মনে হতো এবার সমস্ত কিছু আয়োজন ধীরে ধীরে করতে হবে। পরবর্তীতে টেলিভিশনের মহালয়া শুরু হল। আমিও সেখানে অনেক বছর পারফর্ম করেছি দুর্গা হিসাবে।

আর যেটা না বললেই নয়, পুজো আশা মানে তার আগে আমাদের একটা পরীক্ষা হতো। তখনো কিন্তু মনে হতো পুজো চলে এসেছে। ষষ্ঠীর দিন ভোরবেলা মনে আছে ঢাকেরা বাজে ঘুম ভাঙতো। প্যান্ডেলের ফাক দিয়ে অল্প একটু মা দুর্গার মুখটা দেখা যেত। কোন কোন সময় বারান্দা দিয়েও দেখার চেষ্টা করতাম। প্যান্ডেলটা বাড়ির একদম সামনেই হতো, ওটা ছিল একটা আলাদা আনন্দ।

আপনি বলছিলেন যে মহালয়া অনুষ্ঠানের দুর্গা হিসেবে পারফর্ম করেছেন বহু বছর, এমন একটি পাওয়ারফুল চরিত্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা যদি বলেন....

একটা সুপার পাওয়ার অবশ্যই অনুভব করি। আমার মনে হয় সেই অনুভূতিটার ভেতর থেকে আসে। মা দুর্গার যে শক্তি, সে শক্তি প্রত্যেকটা মেয়ের মধ্যে কোথাও না কোথাও রয়েছে। আমার কাছে এটা একটা বড় পাওনা যে আমি, মানুষের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ এক ভীষণ অর্থপূর্ণ একটি চরিত্রে কাজ করতে পেরেছে। শক্তি প্রতীক হিসেবে মা দুর্গাকে দেখা হয়। সেই রূপে যদি আমি অভিনয় করতে পারি তাহলে এর থেকে বড় আর কিছুই হতে পারে না। আমার চরিত্রগুলো করতে খুব ভালো লাগে। বিশেষ করে যখন অসুর নিধন হয় সে দৃশ্যগুলো পারফর্ম করার সময় মনে হয়, এই যে চারিদিকে অন্যায় অবিচার ব্যভিচার চলছে, সেগুলো যেন মায়ের শক্তি দিয়ে সত্যি সত্যিই নিধন হয়। যেন সব অন্যায় ধ্বংস হয়।

ব্যবিচারের কথা যখন বললেন, সেদিন শ্যামবাজারে আপনার সঙ্গে যা হলো, তারপরও আপনি জানিয়েছিলেন যে আপনি থামবেন না আপনি প্রতিবাদ করবেন, তবে কি এটি অশুভ শক্তির উপর শুভ শক্তির জয়?

আমার মধ্যে জেদটা ভীষণ। আমার ওপর শুভশক্তি আছে বলেই তো আমি এখনো অবধি এখানে দাঁড়িয়ে আছি। না হলে তো আমাকে ভাঙ্গার চেষ্টা কতজন যে কতবার করেছে। আমাকে ভাঙতে গেলে, যারা ভাঙতে চাইবে তাদেরও অনেক সাহস থাকা প্রয়োজন। এটা খুব একটা সহজ ব্যাপার নয়। না হলে এত বছর প্রায় ৩০ বছর হয়ে গেল...

পুজোর রিলিজ বিষয়টা তোমার কাছে গুরুত্ব রাখে?

আসলে বিষয়টা হলো, পুজোতে যদি কিছু আমার রিলিজ করে সেটা যেমন আমার কাছে আনন্দের ঠিক তেমনই, পরিবারের সঙ্গে বন্ধুদের সঙ্গে শুধু পুজোটা এনজয় করা আমার কাছে খুব আনন্দ। এইটা নিয়ে আমি খুব একটা প্রেসার নেই না। কিন্তু অন্যরা যারা আছে আর আমার ছবির রিলিজের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে কারণ আমি প্রচুর দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে নি। এই জন্য পরিচালক থেকে প্রযোজক সকলেই আমার উপর ডিপেন্ড করে। তারা জানেন যে ঋতুপর্ণা আছে মানে অনেকটা দায়িত্ব থেকে মুক্ত হওয়া গেল।

রানী মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির পুজোতেও তো তোমাকে দেখা যায়, আর কোন কোন জায়গায় তোমার নিমন্ত্রণ থাকে?

হ্যাঁ, রানীদের বাড়িতে বেশিরভাগ সময় যাই কারণ সম্রাট আমার খুব ভালো বন্ধু। একবার তো প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বাবা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় যে পুজো করেন, সেখানেও গিয়েছিলাম। বম্বের পূজা মানে একটা জমজমাট পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পূজাদের যে পুজোটা নতুন শুরু হয়েছে, ওইটাতেও আমাকে ওরা ডেকেছে যাওয়ার জন্য।

এবার পুজোর সময় কোথায় থাকার প্ল্যানিং?

মনে হয় দুই জায়গাতেই থাকতে হবে। মুম্বাই কলকাতা দুই দিকে মিলিয়েই থাকতে হবে। এতগুলো কামিটমেন্ট হয়ে গেছে যে ভাগাভাগি না করলে চলবে না। সিঙ্গাপুরে যে পূজা হয় সেই পুজোতেও আমরা খুব জড়িয়ে আছি।

এবার কোনও বিশেষ চাওয়া মায়ের কাছে?

আমি প্রতিদিনই মায়ের কাছে একটা জিনিসই চাই, সে মেয়েটি যেন বিচার পায়। এবং প্রতিদিন মেয়েরা যেভাবে এরম নিগ্রহ এবং হেনস্থা শিকার হচ্ছে, তাদের যেন মা শাস্তি দেন। কারণ আমি চাইনা প্রতিনিয়তই একই ঘটনা ঘটতে থাকুক। মেয়েদের উপর অশুভ শক্তি প্রতিদিন যে চড়াও হচ্ছে, এ বিষয়গুলো মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, মা থেকেই মেয়ে মেয়ে থেকেই মা, মেয়েরা মায়ের জাত। আর দিনের পর দিন যদি মেয়েদেরকে এভাবে ধ্বংস করতে থাকে তাদেরকে মারতে থাকে, তবে পৃথিবী একদিন মাতৃ শূন্য হয়ে যাবে। বাচ্চা মেয়েরা জন্মায় তাদেরকে মেরে ফেলছে, একটা ভ্রুনকে মেরে ফেলছে। এটা কী ধরনের সমাজে আমরা বাস করি। আজকাল দুনিয়া এত এগিয়ে গেছে। মানুষ পরজন্মে কি করবে মহাকাশে কি করবে এই নিয়ে ভাবনা চিন্তা করছে, সেখানে, যে ধারণ করবে সেই মেয়েটাই যদি না থাকে তাহলে তো খুব মুশকিল। জীবন হবে কোথা থেকে? মেয়ে জন্ম নিলেই মানুষ সহানুভূতি দেয়, সান্ত্বনা দেয়, কেন বুঝি না।

tollywood rituparna sengupta Tollywood Actress Durga Puja
Advertisment