একের পর এক সিনেমা, তিনি বাংলা সিনেমার অন্যতম সুপারহিট নায়িকা। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত সিনে দুনিয়ায় যে অগুনতি ছবি উপহার দিয়েছেন তাঁর সঙ্গে এবার যুক্ত হল দাবাড়ু। সূর্যশেখরকে নিয়ে তৈরি এই ছবি। আর এই ছবিতে এবার তিনি মায়ের ভূমিকায়।
যেকোনও ছেলেমেয়ের জীবনে সাফল্যের পেছনে মায়ের ভূমিকা সাংঘাতিক। নিজের সবকিছু বলি দিয়ে হলেও সন্তানের জন্য যে ত্যাগ, মা ব্যতীত কেউ করতে পারেন না। তাই তো, দাবাড়ুর গল্প করতে গিয়ে বারবার তিনি মাতৃত্ব এবং মায়ের ভূমিকা নিয়ে কথা বললেন।
বাংলায় স্পোর্টস ফিল্ম, ফুটবল-ক্রিকেটের বাইরে, তোমার অভিজ্ঞতা কেমন?
স্পোর্টস ফিল্ম খুব একটা হয়নি কিন্তু। খুব স্পেসিফিক কিছু হয়েছে। সত্যজিৎ রায় বানিয়েছিলেন। আমরা তারপর 'কোনি' দেখেছি। 'চক ডে ইন্ডিয়া' দেখেছি। খুব সাম্প্রতিক আমরা 'ময়দান' দেখেছি। কিন্তু এই ছবিটা, একজন লিভিং লেজেন্ডকে নিয়ে। একজন গ্র্যান্ড মাস্টার, তাঁর স্ট্রাগল। আর এই গল্পটা কিন্তু একজন 'দাবাড়ু'র সঙ্গে সঙ্গে মায়ের গল্প।
কোথাও কি ইমোশনের গল্প বলবে দাবাড়ু...?
অবশ্যই! এখানে তো মায়ের গল্পটা বিরাট। একজন বাচ্চাকে তাঁর ১৫ বছর বয়স অবধি একজন মা দেখাশোনা করে। তাঁর ট্যালেন্ট কোনটা সেটা দেখার চেস্টা করে। তাঁকে উপরের দিকে উঠিয়ে দিতে সাহায্য করে। এটা জীবনের গল্প। এটা কিন্তু মানুষের ইমোশনকে নিয়েও গল্প বলবে। ভালবাসার যে অদ্ভুত বন্ধন, বাচ্চাটাকে ঠিক পথে চালনা করে যারা, এটা কিন্তু বিরাট ব্যাপার। একজন বাচ্চাকে এগিয়ে যেতে কিন্তু মা এবং পরিবারের প্রচেষ্টা সাংঘাতিক। জীবনের দারিদ্রতা এবং সংঘর্ষ পেরিয়ে মা যে ছেলেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। একজন মা সে ছেঁড়া শাড়ি পরে ছেলের কথা ভাবছে। আমরা এমনও দেখেছি যে সন্তানের কোনও প্রতিভা নেই তাঁকে নিয়েও মা অনেক চেষ্টা করেন। সন্তান মানে সন্তান। সূর্যশেখরের মায়ের ভূমিকা যথেষ্ট।
তোমার জীবনে তোমার মায়ের ভূমিকাটা কেমন ছিল যখন নায়িকা হওয়ার ইচ্ছে হয়েছিল?
আমার তো ইচ্ছে ছিল না। বাড়িতে ইচ্ছেপ্রকাশ করার জায়গা ছিল না। আমি ভাবীও নি কোনোদিন। পড়াশোনা করেছি, ইচ্ছে ছিল শিক্ষিকা হওয়ার। বাবা চেয়েছিলেন IAS হই। সিনেমাটা মজা করে হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হ্যাঁ, হওয়ার পর আমি বুঝেছিলাম যে আমার একটা আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। সেটা আমি আজও করি। না খাটলে, সহজভাবে কিছু সম্ভব না। সবকিছু সংগ্রামের সঙ্গে পাওয়া ভাল। বাবা মা আমার সেই আগ্রহটা বুঝেছিলেন। বাবার খুব একটা ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু মা, একদম ছায়াসঙ্গী। কত জায়গায় মা গিয়েছেন শুটিংয়ে। অনেক ত্যাগ করেছে। আমার বাবা খুব স্ট্রিক্ট ছিলেন, যে মাকে নিয়ে যাও। মায়েরা হল, সাইলেন্ট ওয়ারিয়র।
সূর্যশেখরের মায়ের সঙ্গে দেখা হল? কথা কী হল?
একটা সাম্প্রতিক অনুষ্ঠানে ওর সঙ্গে দেখা হল জানিস। কী ভাল মানুষ। এত সাদামাটা। যার ছেলে এত সফল, তিনি আটপৌরে শাড়ি পরে এসেছিলেন। মানুষের জীবনে কিছু বিষয় পাল্টায় না। অবজার্ভ করেছিলাম ভাল করে। কিন্তু মা তো, মায়ের দিক থেকে তাঁর ভাবনাটা বুঝতে পারি। আমিও না, যে বাচ্চাটির সঙ্গে অভিনয় করেছিলাম, তাঁকে দেখে ঠিক যেমনটা অনুভূত হচ্ছিল সেটাই বুঝছিলাম।
পুঁচকে অনস্ক্রিন দাবাড়ুকে কেমন বুঝলে...?
ওরে বাবা! ও খুব মিষ্টি..একটা শট ছিল যে ওকে চড় মারতে হবে। আমি একবার ওকে মেরেছি। তারপর যতবার হাত তুলতে যাচ্ছি, ও গালে হাত দিয়ে বলছে আমায় আর মারবে না তো? ওকে চকলেট দিয়ে, আদর করে কাজ করাতে হয়েছে। এসেই আমার কোলে বসে পড়ত। আসলে বাচ্চাকে দিয়ে কাজ করানো খুব মুশকিল। কিন্তু এত ভাল করে কাজ করানো হয়েছে! সত্যজিৎ রায় বলতেন না, অভিনেতা সে যে বয়সের হোক অভিনেতাই।
শিবুদা- নন্দিতা দির সঙ্গে তো এটা অনেকগুলো কাজ...
হ্যাঁ, ওরা সবসময় অন্যরকম কিছু করার চেষ্টা করে। আমি সবসময় ওদের সঙ্গে ছিলাম , আছি আর থাকবও। আসলে, দাবাড়ু দেখার মত একটা ছবি। বাচ্চাদের জন্য একটা দারুন বিষয়। আমরা আগে স্কুল থেকে এসে ব্যাগটা কোনও মতে রেখে, মা হয়তো ঘুমোচ্ছে, ব্যাস! পালিয়ে যেতাম। এখন সেটা নেই। এখন ওরা সব ফোনের মধ্যে। ওদের সব মাইন্ড গেম, ফিজিকাল গেম নেই। দাবা কিন্তু বাচ্চাদের মানসিকতা পরিবর্তন করে।
ছোটবেলায় খেলার জন্য মায়ের কাছে বকা খাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে?
আরেহ! আছে মানে... আমি ভীষণ ব্যাডমিন্টন খেলতাম। নিজেরা কোট কেটে, নেট লাগিয়ে। নতুন র্যাকেট, ফেদার সে এক দারুণ অনুভূতি। বাবা অফিস থেকে কিনে পাঠিয়ে দিতেন। আর আমরা সেগুলো নিয়ে ঘুমাতাম! এখন বাচ্চারা এসব জানেই না। এর জন্য অনেক বকা খেয়েছি। নতুন জিনিস একটা বিরাট পাওয়া ছিল। এখনকার বাচ্চারা সব পেয়ে পেয়ে আর কদর করতে জানে না। এই ছবিটা জানাবে পাওয়ার কি ভ্যালু।
তোমার দাবায় ইন্টারেস্ট আছে?
নারে! একদম না...কিন্তু এই ছবির জন্য একটি জানতে হয়েছে। কারণ, ওর মা দাবা খেলা জানত। কিছু শব্দ জানতে হয়েছে।
তুমি একজন মা, তোমার সামনে যদি তোমার সন্তানকে নিয়ে তুলনা ওঠে, কীভাবে নাও বিষয়টা?
আমার এরকম কোনও কিছু নেই। আমার ছেলেকেও আমি এবার বললাম, তোমার যদি নিজের দক্ষতায় একটা বিষয় পড়াশোনা করার এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষমতা থাকে। তাহলে করো! আমার কোনও জোরাজুরি নেই। আমি দেখেছি বাচ্চাদের ওপর জোর দিলে ওদের খুব কষ্ট হয়। ওরা আরও সমস্যার মধ্যে পড়ে যায়। আমি মনে করি, বাচ্চাদের একটা পর্যায় অবধি চাপ দেওয়া উচিত না। প্রেসার পড়লেই সমস্যা। বাচ্চাদের আগ্রহ হারালেই গেল।
চিরঞ্জিত চক্রবর্তী বলেছিলেন ঋতুপর্ণার মত বড় স্টার উনি দেখেননি, এতবছর পর সামনা সামনি কাজ করলে...
এটা, চিরঞ্জিতদা কত জায়গায় যে বলেছে! ( হাসি ).. আমরা অনেক কাজ করেছি একসঙ্গে। আমায় খুব স্নেহ করে। উনি মাল্টিটাস্ক করেন। উনার প্রযোজনায় আমি তিনটি ছবি করেছি, সবকটাই হিট। উনার ব্যক্তিত্বটা খুব ইউনিক। সেটা আমার খুব পছন্দ। চিরঞ্জিতদা খুব ভাল মানুষ। সেই সব কিছু মিলিয়ে আজ অনেকবছর পর একটা রিইউনিয়ন মত এই ছবিটা।