অনেকের জীবনস্মৃতিতেই বারবার ফিরে আসেন তিনি
দেবস্মিতা দাস
তাঁর চোখের কাজল, সমকামী তর্জনী, উন্নত বক্ষযুগল, পাগড়ি সব্বাই ভালো আছে। ভালো আছে তাঁকে নিয়ে ব্যস্ত কিছু হালকা রেখা দাড়ি-গোঁফ, কৌতূহল, তসর শাড়ি। ভাগ্যিস পরলোকে মৃত্যু বলে কিছু হয় না। ভাগ্যিস মৃত্যুই শিল্পীকে স্বীকৃতি দেয় না কেবল। তাঁর মৃত্যুদিনে সেই শিল্পী বারবার ফিরে আসেন স্মৃতিতে। তিনি জানতেন, তাঁর সব চরিত্র কাল্পনিক। সেগুলিকেই বাস্তব রূপ দিতে মরিয়া ছিলেন। তিনি কি জানতেন মৃত্যুর কোন পিছুটান নেই?
আজকের দিনেই যে কেবল স্মৃতিতে ফিরে আসেন তিনি তা কিন্তু নয়। আমার মতো অনেকের জীনবস্মৃতিতেই ফিরে আসেন তিনি। বিশেষ করে আজকে দাঁড়িয়ে যখন দেখি নারী-পুরুষের তর্জা থেকে বাদ পড়েনা শিশুও। এ সত্যি তো কবেই দেখিয়েছিলেন ঋতুপর্ণ। অন্তরমহলের কথা মনে আছে। ছবিতে দ্বিতীয় স্ত্রী অর্থাৎ সোহা আলি খান জমিদারের পুত্রবাসনার আকাঙ্খা মেটানোর চেষ্টা করেন। সিনেমার শুরুতেই ছিল যৌনদৃশ্য। তবে সে দৃশ্য বোধহয় বেদনার ছিল।
আর একটি প্রেমের গল্প ছবির দৃশ্য
তিনি দৃপ্ত কন্ঠে বলে এসেছিলেন যৌনতা আর ভালোবাসা, জেন্ডারের উর্দ্ধে। এখন মানুষ সমকামীতাকে মেনে নেওয়া অগ্রসর পৃথিবীর দিকে আর একধাপ এগিয়ে যাওয়া মনে করেন, কিন্তু তখন ঋতুকে চিত্রাঙ্গদা তৈরি করতে হয়েছে। একালের কুরুপাকেও সুন্দর হতেই হয়।
জীনবস্মৃতিতে ফিরে আসেন তিনি
সালটা ১৯৯৪। ছক বাঁধা গত ভাঙলেন ঋতুপর্ণ। তৈরি হল 'উনিশে এপ্রিল'। আর দ্বিতীয় ছবিতে জাতীয় পুরস্কার আনলেন পরিচালক। জীবনদর্শনে শেখালেন অনন্য হতে। ফোন করতেই দেবজ্যোতি মিশ্রর কলার টিউনে বেজে উঠল 'রেনকোটের' গান। দেবজ্যোতির কথায়, "ঋতুপর্ণ ঘোষ যতটা না শিল্পী ছিলেন তার থেকেও বেশী ছিলেন একজন চিন্তাশীল মানুষ। এরকম একজন বন্ধুকে মিস করব চিরজীবন।"
উনিশে এপ্রিল ছবির দৃশ্য
চলচ্চিত্র তৈরির মুন্সিয়ানায় অনেকদিন পর বাংলা ছবিকে নিয়ে গিয়েছিলেন বিশ্বের দরবারে। 'দ্য লাস্ট লিয়র' সম্পর্কের অন্য সংজ্ঞা নিয়ে আসে। আর এই ছবিও সম্মানিত হয় জাতীয় পুরস্কারে। সঙ্গীতপরিচালক রাজা নারায়ণ দেব বলেছিলেন, "ঋতুদা'র সঙ্গে কাজ করা গুরুশিষ্যের মতো ছিল। ছবির সঙ্গে মিউজিকের মেলবন্ধন তিনিই শিখিয়েছেন। তিনি জানতেন কোন মিউজিকটা তাঁর ছবিতে কাজ করবে।"
আরও পড়ুন, ঋতুপর্ণর জন্য ‘সিজনস গ্রিটিংস’
সত্যি, মৃত্যু বড় নিঃসঙ্গ। তুমি ওর পাশে থেকো। কবিতা লিখো। আর সে প্রেমের অভিনয় করুক। আজ মৃত্যুদিনের শুভেচ্ছা নিও ঋতুপর্ণ। ভালো থেকো ‘একলা তাসের ঘর’।