Rajlokhi O Srikanto Cast: ঋত্বিক চক্রবর্তী, জ্যোতিকা জ্যোতি, অপরাজিতা ঘোষ, সায়ন ঘোষ, রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়, সোহম মৈত্র
Rajlokhi O Srikanto Director: প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য
Rajlokhi O Srikanto Rating: ৩.৫/৫
Rajlokhi O Srikanto movie Review: প্রথমেই বলে রাখা ভালো 'রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত' তেমনই একটি ছবি যা দেখা প্রয়োজনীয় কারণ এই ছবি দর্শকের বিনোদনের কথা মাথায় রেখে তৈরি হয়নি। যে ছবিগুলিকে গালভরা কনটেন্ট-বেসড নাম দেওয়া হয়ে থাকে, তার অধিকাংশই স্ট্র্যাটেজিক, দর্শকের বিনোদনই লক্ষ্য। তা বাদে যা রয়েছে তা হল কিছু অন্তঃসারশূন্য বাণিজ্যিক ছবি যার মেকিং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একটু ঝকঝকে হয়েছে মাত্র। প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যের 'রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত'-তে কোনও বিনোদন নেই যেমন, তেমনই কোনও আশাবাদী অতিকথন নেই (সিনেমায় যেমন হয়) এবং মেকিং তাঁরই স্বকীয়।
আরও পড়ুন: Section 375 movie review: জমজমাট একটি কোর্টরুম ড্রামা
শরৎসাহিত্য পড়ে, শুধুমাত্র রাজলক্ষ্মী, শ্রীকান্ত, ইন্দ্রনাথ ও অন্নদা চরিত্রের নির্যাসটুকু মাথায় রেখে ছবি দেখতে বসাই শ্রেয়, কারণ পরিচালক প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য বড়পর্দায় যা বুনেছেন সেই কাহিনি স্বতন্ত্র। ইন্দ্রনাথ ও শ্রীকান্তের প্রকৃতি ও জীবনকে দেখার অনেক কিছুই সাহিত্য থেকে নিয়েছেন পরিচালক। কিন্তু এই চারটি চরিত্রকে ঘিরে যে ঘটনাপ্রবাহ তৈরি হয় এবং যে পরিণতির দিকে পরিচালক ছবিটিকে নিয়ে যান সেখানে শরৎসাহিত্যের মায়াজাল সম্পূর্ণভাবে ছিন্নভিন্ন। ইন্দ্রনাথ, অন্নদা, তাদের প্রেম এবং ইন্দ্রনাথের সান্নিধ্য বহমান দেজা ভু-র মতোই ফিরে ফিরে আসে শ্রীকান্তের জীবনে। এমনকী রাজলক্ষ্মী-শ্রীকান্তর প্রেমেও ইন্দ্রনাথ-অন্নদারই প্রতিচ্ছবি। বরং কোথাও যেন রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্তর প্রেমকে ছাপিয়ে যায় ইন্দ্রনাথ-অন্নদার প্রেম।
শরত-উপন্যাসের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল তার বৃহদাকার প্রেক্ষাপট। প্রকৃতি, সমাজ, বহমান পারিবারিক কাঠামো সেখানে দানবীয়। কথাসাহিত্যিক কর্তৃক সৃষ্ট বেশিরভাগ চরিত্রগুলিই সেই কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করে কিন্তু শেষে সেই ক্যানভাসের কাছেই আত্মসমর্পণ করে, কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া। প্রদীপ্তর 'রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত' ছবিতে সেই ক্যানভাস বর্ণনাকে আপাতদৃষ্টিতে অতটাও বৃহৎ মনে হবে না হয়তো দর্শকের, কিন্তু অভিঘাতে তা অনেক বেশি ভয়াল। যে সামন্ততন্ত্র ছিল শরৎসাহিত্যে, বর্তমান সময়ে তা কয়েক গুণ বেশি শ্বাসরোধকারী এবং শক্তিশালী। রাহুল-অভিনীত হুকুমচাঁদে তাকে গড়েছেন পরিচালক।
আরও পড়ুন: যুক্তিবোধ এবং আবেগের অসম মিশেল ‘পরিণীতা’
শরৎচন্দ্রের 'শ্রীকান্ত' যে সময়ের কথা বলে, সেখানে নারীর অবমাননা ছিল, অত্যাচার ছিল, নাভিশ্বাস ছিল কিন্তু প্রদীপ্ত যে সময়ে বাঁচেন, তা শতগুণ বেশি অসহিষ্ণু। সাম্প্রতিক সময়ের প্রগতির উল্টোপিঠটি কতটা কদর্য, এবং সেই প্রগতিশীলতাও যে কতটা শিউডো, তা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় এই ছবি। চারটি চরিত্র যেন স্বর্গভ্রষ্ট-- শরৎসাহিত্যের নিশ্চিন্ত আবাস থেকে এসে পড়েছে নব্য মিলেনিয়ামে যেখানে সাহিত্যিক-রচিত কোনও নিরাপত্তা নেই। তাই ইন্দ্রনাথ-অন্নদার প্রেম এবং সমান্তরালে রাজলক্ষ্মী-শ্রীকান্তর প্রেমের পরিণতি আসলে এক ধরনের ইউটোপিয়াই। কিন্তু তার পরেও সেই প্রেম অবিনশ্বর, অন্য কোনও বাস্তবতায় সেই প্রেম চিরকালীন।
অপরাজিতা ঘোষ (অন্নদা) এবং সায়ন ঘোষ (ইন্দ্রনাথ) চরিত্রচিত্রণে অসাধারণ। দর্শকের স্মৃতিতে এই দুটি চরিত্রের অনুরণন থেকে যাবে অনেকটা বেশি সময়। রাজলক্ষ্মী চরিত্রে জ্যোতিকা জ্যোতি মন ভরাতে পারলেন না। বরং কিশোরী রাজলক্ষ্মী অভিনয়ে অনেক বেশি পরিণত। শ্রীকান্তর কিশোর বয়সের অভিনয়ে সোহম মৈত্রও অত্যন্ত ভালো। ঋত্বিক চক্রবর্তীর (শ্রীকান্ত) একটা নিজস্ব ঘরানা আছে অভিনয়ের। তাঁর গুণমুগ্ধরা এই ছবিতেও সেই ঘরানার বিচ্ছুরণ থেকে বঞ্চিত হবেন না। শুভদীপ দে-র সিনেম্যাটোগ্রাফি ও স্বয়ং পরিচালকের এডিটিং ছবির মেরুদণ্ড। অত্যন্ত ভালো আবহ এবং সঙ্গীত পরিচালনা ছবির কাঠামোতে প্রয়োজনীয় প্রলেপ। তবে পার্শ্বচরিত্রগুলির কয়েকটিতে অভিনয় বেশ খারাপ এবং কয়েকটি সিকোয়েন্সের বিল্ড-আপ বেশ ক্লিশে তাই মাঝমধ্যে একটু-আধটু ছন্দপতন লাগে।