দীর্ঘ বিরতির পর অভিনয়ে। হিন্দি মহাভারত-এর দ্রৌপদী এবার বাংলা ধারাবাহিক 'মেয়েবেলা'য় শাশুড়ির ভূমিকায়। বছর খানেক বাদে পর্দায় প্রত্যাবর্তন নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার মুখোমুখি রূপা গঙ্গোপাধ্যায়।
এতবছর পরে সিরিয়ালে প্রত্যাবর্তন, হ্যাঁ বললেন কী দেখে?
অনেক সিনেমা, অনেক গল্প, অনেক কাজ ছেড়ে দিয়েছি বিগত কয়েক বছরে। সময় ছিল না তাই করিনি। কিন্তু কাজ ছাড়ার জন্য কখনও দুঃখ পাইনি। নতুন শুরুকে হ্যাঁ বলার জন্যও তো একটা সময়ের প্রয়োজন। অন্তত দশবার মিটিং করেছি আমি মেয়েবেলা সিরিয়ালের প্রস্তাবে হ্যাঁ বলার আগে। পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যের লেখক দেবীকার সঙ্গে দিনের পর দিন 'বীথি' আমার চরিত্রটা নিয়ে কথা বলেছি, গল্প নিয়ে আলোচনা করেছি। তবে ওদের কাছে শর্ত রেখেছিলাম কতগুলো।
কীরকম?
আমি সবসময়ে বাস্তব প্রেক্ষাপটে কাজ করতে চেয়েছি। চেয়েছিলাম, আমার চরিত্রটা যেন রিয়ালিস্টিকভাবে দেখানো হয়। মৃণাল সেন, অপর্ণা সেন, গৌতম ঘোষ, কৌশিক গাঙ্গুলি, ঋতুপর্ণ ঘোষ এঁদের মতো পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করার অভ্যেস থেকেই এই চাহিদা, যে চরিত্রটাকে বাস্তবসম্মত দেখাতে হবে। মানে ওই বেনারসি শাড়ি পরে, ভারী গয়না পরে আমি ঘুমোতে যেতে পারব না। একেবারে আমরা রোজ সকালে ঘুম থেকে যেভাবে উঠি, বাড়িতে যেভাবে থাকি, সেরকমই যেন গল্পটা হয়। মেয়েবেলার গোটা টিম খুব সুন্দরভাবে সেই রিয়ালিস্টিক অ্যাপ্রোচ-টা ফুটিয়ে তুলেছে।
TRP দৌড় ভাবায়?
একেবারেই মাথা ঘামাই না। কোয়ালিটির সঙ্গে আপোস করা উচিত নয়।
'মেয়েবেলা' সিরিয়ালের ট্যাগলাইন (মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু) ধরেই বলব ব্যক্তিগতজীবনে নিজে কখনও এমন অনুভব করেছেন?
হ্যাঁ, জীবনে অনেক ক্ষেত্রে এমন ঘটনার সম্মুখীন হয়েছি। অস্বাভাবিক নয়। তবে সব মেয়েরাই সব মেয়েদের শত্রু নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে পৃথিবীতে কোনওদিন কারও সঙ্গে হিংসেই করতে পারিনি। আমি রূপা গাঙ্গুলি, আমার মনে হিংসা বলে কোনও শব্দ নেই।
'মেয়েবেলা'র গল্পের রেশ ধরেই বলব- 'সংসার সুখী হয় রমণীর গুণে…', এই প্রবাদে আপনি কতটা বিশ্বাসী?
আমি ভীষণভাবে সমতায় বিশ্বাসী। রমণী একাই তার গুণ দেখিয়ে গেলেন, আর সংসারের পুরুষগুলো মাথার ওপর নেত্য করল, তাতে সংসার সুখের হয় না। পরিবারের সব সদস্যদের সমান চেষ্টা থাকা দরকার। আজকের তারিখে এই প্রবাদ বাক্যগুলো ধীরে ধীরে অর্থহীন হয়ে পড়ছে।
মেয়েরা অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বাধীন হলেও সত্যিই কি স্বাধীন হতে পেরেছে?
আমি ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। মেয়ে হিসেবে কোনও আলাদা সুবিধে নেওয়ার দরকার আছে বলে মনে হয় না। যেমন বাসে, ট্রামে আলাদা করে মহিলা সিট থাকার দরকার আছে বলেও মনে হয় না। বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সিট- বলে লেখা থাকতে পারে। আমি যে পরিবারের মেয়ে, ট্রামে-বাসে করেই কলেজ যেতাম। সিটে বসে যদি কোনও বয়স্ক মানুষ দেখতে পেতাম, তাঁকে বসাতাম। যার জন্য প্রচুর দিন আমার সঙ্গে অনেকের কথা কাটাকাটি হয়েছে। আমি বরাবরই স্পষ্টবাদী।
স্পষ্টবাদী হওয়ার জন্য বিপাকে পড়তে হয়েছে কখনও?
না, স্পষ্ট কিংবা সত্যি কথা বলার কোনও বিকল্প হয় না। লোকে ভয় পায়। তাই দূরে থাকে। আমি ড্রাইভ করে যাচ্ছি, পাশের গাড়ি থেকে কেউ উল্টোপাল্টা কমেন্ট করলে ছেড়ে দিইনি। আমি বরাবরই সাহসী।
মেয়েদের পারিশ্রমিক ইন্ডাস্ট্রিতে পুরুষদের তুলনায় কম, এমন অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়…
বড় বড় স্টারদের ক্ষেত্রে হয়তো এমনটা হতে পারে। আমি তো নই! (হেসে) আমি সবসময়ে ভাল পারিশ্রমিক পেয়েই এসেছি।
আচ্ছা, 'বিজেপি করলে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ পাওয়া যায় না'- এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে আপনার কী মত?
অনেকের ক্ষেত্রেই হয়েছে। সরাসরি না হলেও ইন্ডাস্ট্রিতে এমন রাজনীতির শিকার আমাকেও হতে হয়েছিল। সেটা 'অন্য অপালা' করার সময়ে।
অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনীতির কাজও চালিয়ে যাবেন?
হ্যাঁ, অনেকেই তো করছে। এই তো দেব-রাও তাই। ন্যাশনাল কমিটির বৈঠক রয়েছে। দু-দিন বাদেই দিল্লি যাচ্ছি। যেখানকার যা দায়িত্ব পালন করব। রাজনীতি করতে তো অর্থের প্রয়োজন। সেই টাকা অভিনয় করে তুলব।
আপনাকে সিনেমায় কবে দেখতে পাব আবার?
বন্ধুরা ইতিমধ্যেই লেখালেখির কাজ শুরু করে দিয়েছে। আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছি- এবার আর ঝোলাব না! (হেসে)