অভিনেত্রী মানেই কি সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোল সহ্য করা বাঞ্ছনীয়? নাকি যে নায়কের সঙ্গে অভিনয় করছেন তাঁর সঙ্গে প্রেম হতেই হবে? সে বিবাহিত হোক কিংবা অবিবাহিত! অভিনেত্রী রুকমা রায় টেলিভিশনের পাশাপাশি সিরিজেও জনপ্রিয়। নানা সময় তাঁকে নানা কথা শুনতে হয়েছে। কিন্তু, রুকমা ভীষণ পজিটিভ। সে তাঁর অভিনয় জীবন হোক কিংবা বন্ধুত্বও, সত্যি-মিথ্যে সহজ করেই দেখিয়ে দিতে পারেন। এবার, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বললেন তিনি…
নষ্টনীড় এর গল্পটা কোনদিকে ঘুরছে এবার?
যেখানে শেষ হয়েছে, সেখান থেকে শুরু হবে। অপর্ণা ( সন্দীপ্তা সেন ) যে ক্রাইসিসটার মধ্যে ছিল, সেখান থেকে বেরোতে পারবে কিনা সেটা তো সিরিজ বলবে। কিন্তু, হ্যাঁ! নিমো যেভাবে পাশে ছিল সেভাবেই থাকবে। আরও বেশি করে এটাই বলতে পারো।
নিমো যেমন অপর্ণার খুব ভাল বন্ধু, তোমার কি মনে হয় ইন্ডাস্ট্রিতে সেরকম ভাল বন্ধুত্ব হয়?
আমার নিজেরই আছে। একটা গ্রুপ আছে। কে বলেছে ভাল বন্ধু হয় না? ইন্ডাস্ট্রিতে অবশ্যই ভাল বন্ধু হয়। এবং আমি হলফ করে বলতে পারি, যে আমরা সকলে সকলের পাশে থাকি। সুখে দুঃখে হোক কিংবা ঘুরতে যাওয়া হোক!
নষ্টনীড় এর নিমো তো খুব এক্সট্রোভার্ট, রুকমা কি সেরকমই?
প্রচণ্ড গল্প করতে ভালবাসে রুকমা। নিমো যেমন বন্ধুর জন্য সব করতে পারে, আমিও একদম আলাদা নয়। অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করে। আমি একদম নিমোর মতোই। দুজনের মধ্যে একটা অদ্ভুত মিল আছে।
বাস্তবের সঙ্গে চারিত্রিক ক্যাটাগরি মিলে গেলে আশা করছি সুবিধা হয় ...
সত্যিই হয়! বিশ্বাস করো, আমি এটা অস্বীকার করতে পারব না। জায়গাই নেই। সেই কারণেই বোধহয় অদিতি আমায় নিয়ে এটা ভেবেছিল। এবং, খুব সুন্দর একটা বিষয়। দুটো কাপলকে যে দেখানো হয়েছে, সেটা কিন্তু ভিন্ন। একদিকে, যেখানে দেখানো হচ্ছে অপর্ণা আর ঋষভ বাহ্যিকভাবে দেখতে খুব সুখী, দুজনের মধ্যে একটা দাম্পত্য প্রেম রয়েছে। সেখানে কিন্তু আমি আর অনিন্দ্য - এদের দুজনকে দেখলে লোকে ভাববে যে এটা কী? এদের মধ্যে প্রেম ভালবাসা কিচ্ছু নেই! তারাই কিন্তু ভাল আছে।
সম্পর্কে তাহলে সুখী হতে গেলে কোনও বীজগাণিতিক ফর্মুলা আছে?
দেখো, সেভাবে তো কিছু হয় না। কিন্তু এটা বলতে পারি, মানুষ আলাদা। তাঁদের ভালবাসার ধরণ, প্রেম করার ধরণ, ভাল থাকার ধরণ আলাদা। আনন্দ উপভোগ করার বিষয় আলাদা। আমার মনে হয়, দুজনের মধ্যে বিশ্বাস থাকা জরুরি। আরেকটা বিষয়, যেটা না বললেই নেই যে ব্যক্তিবিশেষে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া। দুজনে মিলে একটা সিদ্ধান্ত নেবে। পরিবারকে সম্মান করা। আর, যতই ব্যস্ততা থাকুক না কেন, দিনের শেষে একটু পরস্পরের সঙ্গে কথা বলা। এটা খুব দরকার। কিছুই না, সারাদিন কী হল, না হল, এগুলো জানতে চাওয়া।
#Metoo বিষয়টা মেয়েরাই কি বেশি ব্যবহার করে?
অনেকে এটাই ভাবে জানো তো, কিন্তু আমার মনে হয় এই #Metoo বিষয়টা ছেলেদের সমান ভাবে প্রয়োজন পড়ে। এবার, বুঝতে হবে যে এটার ভাল এবং খারাপ দুটো দিক রয়েছে। কেউ হয়তো, শুধুমাত্র কাউকে অপদস্ত করার জন্য ব্যবহার করে। আবার কেউ হয়তো, খুব প্রয়োজনে পরে সেটা করেছে। সবকিছুরই দুটো দিক আছে। ভুলভাল ফাঁসানোর জন্য অনেকে এটা ব্যবহার করে। খুব মুশকিল বোঝা, কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যে!
জেনে বুঝে যারা #Metoo ব্যবহার করে, মানুষকে এক্সপ্লয়েট করে তাদের এই কান্ডকীর্তি বন্ধ হওয়া উচিত?
এটার একটাই উত্তর হয়, যে জেনে বুঝে কাউকে ফাঁসানো সেটা তো ক্রাইম। কিন্তু, আমার তো মনে হয় না যে ক্রাইম কোনোদিন বন্ধ হবে বলে। বাকিটা তো অনেক দূরের গল্প।
ব্যক্তিগত জীবনে কোনওদিন এর প্রভাব দেখেছ?
না, সেই অর্থে দেখিনি।
বন্ধুর খারাপ দিক দেখলে, রুকমা তাঁকে সতর্ক করবে?
অবশ্যই! কেন নয়? তাহলে আমরা কীসের বন্ধু? আমি শুধু যদি তাঁর ভাল দিকটাই বলি, তাঁর অন্যায়টা না বলি! তাহলে কি সেটা ঠিক হবে? তাঁর অন্যায় দেখলে অবশ্যই বলা উচিত। যদি সত্যি সে কিছু খারাপ করে থাকে, তাহলে শুধু বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য আমি ভাল সাজতে পারব না। মানুষটাকে যদি ভালবাসি, তাহলে তাঁর অন্যায় তো বলতেই হবে।
নিজের জীবনে কোনওদিন এমন কিছু ঘটেছে, বা কাস্টিং কাউচের শিকার হয়েছ?
বাবারে! ভাগ্যিস হয়নি। খুব ভালভাবে কাজ করেছি। কাস্টিং কাউচ বিষয়টা খুব খারাপ। কিন্তু, একটু যদি সতর্ক থাকা যায় তাহলে কিন্তু ভাল হয়। আমি সেটা সবসময় বজায় রাখি বলে হয়তো...আমায় মানুষ অনেক সম্মান করেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় তো অভিনেত্রীদের নিয়ে যা নয় তাই, কোনও হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে জবাব দিতে ইচ্ছে হয় না?
দেখো, রাগ হয়! কিন্তু এক তো, মাথায় ঘোরে যে আমি চর্চায় আছি। সেকারণেই হয়তো বা কাজ করছি। আর দুই, সত্যি বলতে গেলে আমার একদম এসব বিষয়ে বেশি মাথা ঘামাতে ভাল লাগে না। আমি যেকোনও জিনিস পজিটিভ ভাবে নিয়ে থাকি।
তোমায় তো একজন বিখ্যাত অভিনেতার সংসার ভেঙেছ এমন তকমা দেওয়া হয়...
উফ! আমায় নিয়ে যে কত কী শুনেছি। এইগুলো আমার কাছে খুব আপত্তির। এই যে, না জেনে শুনে একটা ভুলভাল কথাবার্তা বলে দেওয়া। ওই যে সোশ্যাল মিডিয়া। ভাল খারাপ দুটোই আছে। খারাপ হচ্ছে, মানুষ ভীষণ মানুষকে বিচার করতে শুরু করে দেয়, কিছু না জেনেই। নিজে একদম ভীষণ ভাল, বাকিরা সব খারাপ। এ ওর সঙ্গে কাজ করছে মানেই দুজনের মধ্যে একটা সম্পর্ক। এটা মানুষের মন থেকে যাওয়া খুব দরকার। কারওর ওপর কিছু চাপিয়ে দেওয়াটা খুব খারাপ। আমি সেই ফেজ দিয়ে গিয়েছি, আমি জানি। খুব খারাপ লেগেছিল আমার। কিন্তু শেষের দিকে আর পাত্তা দিতাম না। আমার চারপাশের মানুষ তো জানে আমি কী করেছি তাই না?
টেলিভিশনে তো আবার ফিরলে, কিন্তু অঙ্গনার রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে? একজন লিড অভিনেত্রী হিসেবে চাপ অনুভূত হচ্ছে না?
আমি না কোনোদিন, কারওর রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে কাজ করি নি। এটা আমার কাছে নতুন। চাপ তো শুরুর দিকে কিছুটা ছিল। শুটিংয়ের জন্য একটা অন্য বিষয় ছিল। আমার কাছে একদম একটা আলাদা চরিত্র, কিন্তু ফ্লোরের বাকিদের কাছে নয়। যাকে দেখতে দর্শক অভ্যস্ত, তাঁর জায়গায় অন্য কাউকে দেখতে তারা পছন্দ করবে কিনা সেটাই কিন্তু অনেক বড় ব্যাপার। এটা যে কোনও অভিনেত্রীর কাছেই বড় ব্যাপার। ফ্লোরে, আমি খুব ভাল রেসপন্স পেয়েছি। কিন্তু, অনেকেই খুব সহযোগিতা করেছেন।