এদিন কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে একতারা মঞ্চে একটি আলোচনা সভা আয়োজিত হয়েছিল। শিল্প থেকে শিল্পান্তরে সিনেমা ও থিয়েটারের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত, বিভাষ চক্রবর্তী, আশোক মুখোপাধ্যায়, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, মনোজ মিত্র, অরুণ মুখোপাধ্যায়, রুদ্র প্রসাদ সেনগুপ্ত, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও গৌতম ঘোষ।
প্রত্যেকে নস্ট্যালজিক হয়ে ভাসলেন আবেগের স্রোতে। বিভাষ চক্রবর্তী, আশোক মুখোপাধ্যায়, অরুণ মুখোপাধ্যায়রা জানালেন, এতদিন পর কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে এসে আনন্দ হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ যে তাদের কথা মনে রেখেছেন তাতেই আপ্লুত তাঁরা। স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত বলেন, রাজ এখানে আমায় আমন্ত্রন জানিয়েছে তাতে আমি আনন্দিত। সেই পাঁচ বছর বয়স থেকে থিয়েটারের সঙ্গে যোগাযোগ।
রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত এদিন বলেন, "সরকার কোনওদিনই থিয়েটারের গুরুত্ব বোঝেননি বা বুঝতে চাননি, শাসক শ্রেণী থিয়েটারকে পাত্তা দেয়নি। দিল্লিতে কোটি টাকা ব্যয় হয় ন্যাশানাল স্কুল অফ ড্রামা, আমার এখন অবশ্য ন্যাশানাল স্কুল অফ টেলিভিশন বলতে ইচ্ছে করে। যার সঙ্গে আমি প্রায় চার দশক ধরে যুক্ত, ওখান থেকে যারা পাশ করে সোজা মুম্বই চলে যায়, কেউ আর থিয়েটার করে না।" তিনি আরও বলেন, "আমার বয়স ৮৫, এখন মনে হয় একদিন নিশ্চয়ই আসবে যখন থিয়েটার তার মর্যাদা পাবে। একটা শেষ কথা বলি সবাই খুব খারাপ থাকবেন, ভাল থাকলে বুঝতে হবে তার মাথা কাজ করে না। কারও অবস্থা ভাল নয়, ষাঁড়ের কুঁজে সোনা পাওয়া যাচ্ছে।"
আরও পড়ুন, ছবি দেখার দায়িত্ব দর্শকেরও: বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ''কোনওদিন সিনেমা ও থিয়েটারকে আলাদা করতে পারিনি। কেন আমাদের থিয়েটার বিচ্ছিন্ন হচ্ছে সিনেমার থেকে তা নিয়ে এই মঞ্চে কথা বলা প্রয়োজনীয় নয়। নাটক ছোটথেকে নাটক করতাম, বাড়িতে তক্তপোশের উপর মায়ের শাড়ি দিয়ে পর্দা তৈরি করে নাটক করতাম হইচই হল্লা।'' তবে সিনেমা সৌমিত্রবাবু দেখেছে স্কুল পালিয়ে। ''শিশির কুমার ভাদুরীর থিয়েটার থেকে মাথা ঘুরে গেল, ভাবলাম থিয়েটার ছাড়া কিছু করব না। আসলে দুটো ডানা তো না ঝাঁপটালে পাখি ওড়েনা, অভিনেতা হিসাবে আমার এই দুটো ডানার একটা থিয়েটার, একটা সিনেমা। এগুলো না থাকলে আমি তৈরি হতাম না'', বললেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন, ‘দ্য এন্ড উইল বি স্পেকটাক্যুলার’-এর নেপথ্য কাহিনি শোনালেন এরসিন সেলিক
অশোক মুখোপাধ্যায়ের আক্ষেপ তিনি ছবিতে খুব একটা কাজ করেননি। থিয়েটার করেন ভালবেসে। এদিন তিনি বলেন, ''এতদিন ধরে কাজ করছি কোথাও কোনও স্বীকৃতি পাইনি। আজ ৮০ বছর বয়সে তা পেলাম। তবে থিয়েটার অভিনয়ের আঁতুড়ঘর। এটাকে আটকানো যাবে না।''
পরশুরাম ছবিতে জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পরও কেউ সিনেমার জন্য ডাকেনি, কেউ ডাকে না। তবে পরম প্রস্তাবটা দিল তাতে খুশি হয়েছি। পুরনো ব্যথা জেগে উঠল, আসলে আমি অনেক বছর এই ফেস্টিভালের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। একটু দেরীতে হলেও ভাবা হয়েছে এটাই অনেক, অনুযোগের সুরে বললেন অরুণ মুখোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন, রিপোর্টারের ডায়েরি: পাল্টে যাওয়া উৎসবে সেলফি বেশি, ছবি দেখার ভিড় কম
তবে প্রত্যেকের কথায় অনুযোগ, আক্ষেপ, আনন্দ, ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ হল একতারার মঞ্চে। থিয়েটার-সিনেমার যোগাযোগের সূত্র ধরে ফিল্ম ফেস্টিভালের মঞ্চে পুর্নমিলন ঘটল 'গ্যালাক্সি অফ স্টারস'-এর।