একুশের বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্য-রাজনীতিতে দল-বদলের হাওয়া। রুদ্রনীল ঘোষও (Rudranil Ghosh) কি বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন? তুমুল জল্পনার মাঝেই 'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা'র কাছে মুখ খুললেন অভিনেতা। 'মীরজাফর' বলে আঙুল তুললেন, তৃণমূলের অন্দরে থাকা একাংশের দিকে। সাফ জানালেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) কাউকে দুর্নীতি করতে বলেননি। তৃণমূলের এই নড়বড়ে পরিস্থিতির নেপথ্যে ওঁর দলেরই একাংশ।"
এর আগেও একাধিকবার রাজ্যের শাসকদলের কাজকর্মের সমালোচনা করেছেন রুদ্রনীল ঘোষ। ২০১৪ সালে সরকারি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন পদে যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে বসিয়েছিলেন, তখন থেকেই। তাহলে নতুন করে সরকারের কাজকর্মের সমালোচনা করলে অন্য দলে যোগ দেওয়ার প্রসঙ্গ আসছে কোথা থেকে? প্রশ্ন তুলেছেন রুদ্রনীল ঘোষ। এদিকে, তাঁর দল-বদলের জল্পনা আপাতত তুঙ্গে। তার মাঝেই তৃণমূলের একাংশের বিরুদ্ধে আঙুল তুললেন তিনি।
স্পষ্ট বললেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনোই দুর্নীতিগুলো করতে বলেননি। বরং তিনি রুখে দাঁড়িয়েছেন। তার মানে দাঁড়ায়, তৃণমূলের একাংশই জননেত্রীর বিরুদ্ধে মুখোশ পড়ে রয়েছেন। তৃণমূলের নড়বড়ে পরিস্থিতি দীর্ঘ দিনের তৈরি করা। খারাপ লোকগুলোর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেওয়ার জন্যই, আস্ফালনটা আরও বেড়েছে এতে করে বাকি যাঁরা ভাল নেতা-মন্ত্রী কিংবা ভাল কর্মী, তাঁরা কোণঠাসা হয়েছেন। হয় চুপ করে গেছেন বা দল ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। মীরজাফর তাঁরা নয়, যাঁরা বেরিয়ে যাচ্ছেন। বরং যাঁরা ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য দলে থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছের বিরোধিতা করে গিয়েছেন, 'অপপ্রচারের' মিথ্যে কথা শুনিয়ে এসেছেন তাঁকে। এখনও কিন্তু তৃণমূলের অন্দরে এঁদের কেউ কেউ রয়ে গিয়েছেন সক্রিয়ভাবে। তাঁরা শেষ করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।" "মুখ্যমন্ত্রী যে বিশ্বস্ত সৈনিকদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তাঁরাই তাঁকে ভুল বুঝিয়ে এসেছেন। তাহলে বেইমান, মুখোশধারী কিংবা মীরজাফর কারা? যাঁরা বেরিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা? নাকি যাঁরা দলে থেকে নিজের আখের গোছানোর জন্য কিংবা পদ যাওয়ার ভয়ে সত্যি কথাটা মুখ্যমন্ত্রীকে বলছেন না, তাঁরা?" প্রশ্ন তুলেছেন রুদ্রনীল ঘোষ।
তৃণমূলের একাংশের বিরুদ্ধে আঙুল তুলে তাঁর অভিযোগ, "২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের সময় ৪২টা আসনের মধ্যে ১৮টা সিটে বিজেপিকে বাংলার মানুষ নিয়ে এসেছিল। তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থাকা লোকেরাই ক্রমাগত মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে এসেছেন, 'না দিদি সব ঠিক আছে, যা শুনছেন সব বিরোধীদের অপপ্রচার' বলে চালিয়েছেন। চালচুরি হোক কিংবা কাটমানি মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু কোনওটারই পক্ষে নন। তিনি কাউকে বলেননি সরকারি প্রকল্পের টাকা মারতে। ত্রাণের ত্রিপল চুরি করতে কিংবা চাল চুরি করতে! বরং তিনি চেয়েছিলেন, যাতে সবাই যথাযথ পরিষেবা পায়। কিন্তু এই দুর্নীতির নেপথ্যে দলেরই একাংশের হাত। অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের লোক জড়িত না থাকলে তো সেটা সম্ভব নয়। তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থেকে তাঁকে 'ভুল বোঝানোর' চেষ্টা করছেন।"
"ওই একাংশকে দল থেকে বহিষ্কৃত করা কিংবা উপযুক্ত শাস্তি না দেওয়ায় তাঁদের আস্ফালনটা আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছিলেন, সবাই মিলেমিশে একসঙ্গে থাকবে। সেটা না হয়ে বরং হিতে-বিপরীত হয়েছে", বললেন অভিনেতা।
গেরুয়া শিবিরে যোগ দেওয়ার জল্পনা প্রসঙ্গে কী বলছেন? তাঁর কথায়, "হঠাৎ করে কোন মন্ত্রী দল বদলাচ্ছেন বা বসে যাচ্ছেন, তার সঙ্গে আমার তো কোনও সম্পর্ক নেই! আমি গত কয়েক বছর ধরেই প্রতিবাদ করছি। আমি 'সুবিধেবাদী' হলে ওই একাংশের মতোই 'নীরব' থাকতাম। ভোকেশনাল এডুকেশনের দায়িত্বপদে বসে আমিও উন্নতি সাধনের কাজই করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু দলের একাংশের কাছ থেকে সমর্থন পাইনি, উলটে বিরোধিতা পেয়েছি। পুরনো সিলেবাস বদলানোর প্রস্তাব রেখেছিলাম, তখন সেই বিভাগের মন্ত্রীর সঙ্গে গন্ডগোল হয়েছিল। ২০১৭ সালের পর থেকে আমি বেশকিছু বিষয় উপলব্ধি করতে পেরেই সরে এসেছি। ২১ জুলাই হোক কিংবা অন্য কোনও মঞ্চে আমাকে দেখা যায়নি।"
KIFF-র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকা নিয়ে যে সমালোচনা হচ্ছে সেই প্রসঙ্গে কী মত? "মানুষের পেটে খিদে। ভাত নেই, অতিমারীতে অর্থনৈতিক ধাক্কা, এসবের মাঝে এত খরচ করে চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করায় আপত্তি রয়েছে। এই টাকাটা দুস্থদের কাজেও লাগানো যেত। তাহলে হয়তো সরকারের মানবিক দিকটা ফুটে উঠত। অতিমারী আবহে কত টেকনিশিয়ানরা অর্থাভাবে কষ্টে রয়েছেন, এই উৎসব থেকে তো আদতে তাঁদের কিছু লাভ হয়নি। রাজ্য সরকারের এই দিকগুলো একটু বিবেচনা করে দেখা উচিত ছিল। পেটে বেঁচে থাকলে তো সিনেমা দেখবে মানুষ", বললেন অভিনেতা।