রোবট কি তবে রুক্মিণীর থেকেও প্রিয়? অন্তত বুমেরাং ছবির সাফল্য দেখলে সেটা বলাই বোধহয় উচিত। যেভাবে নিশা সকলের মন জয় করে নিচ্ছে, না দেখলে বিশ্বাস হওয়ার মতো নয়। একেই জিতের সঙ্গে তাঁর প্রথম কাজ। তাঁর ওপর আবার বাংলা ছবিতে রোবট, রিলিজের পরেই রুক্মিণী যেন বুঝতে পারলেন ট্রিগার পয়েন্ট। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে কথপোকথনে, ছবির সাফল্যের পাশাপাশি নানা বিষয়ে উত্তর দিলেন।
জিতের সঙ্গে প্রথম ছবি, আর বিরাট সাফল্য - লাগছে কেমন?
দেখো, একটা আশা তো দেখা যাচ্ছিল যে এই জুটিটা নিয়ে অনেকেই খুব আগ্রহী ছিলেন। আর এটা কিন্তু শুটিং ফ্লোরেও হত। বেশিরভাগই দেখতে চাইতেন যে আমাদের একসঙ্গে কেমন লাগছে, দুজনের কেমিস্ট্রিতে চিত্রায়ন কেমন হচ্ছে, সেটা অনেকের ভাবনা ছিল। আর, এখন মনে হচ্ছে সেটা সফল। কারণ, বুমেরাং অভিনয়, জুটি, গল্প সব দিক থেকেই সাফল্য অর্জন করছে। আর দুজনে একসঙ্গে স্ক্রিনে আসা, এই ছবির থেকে ভাল বোধহয় আর কিছু হত না। সেটাই সবথেকে বড় পাওয়া। আর সত্যিই, জিৎদা ভীষণ ভাল মানুষ।
নতুন জুটি, প্রথম ছবি নিয়ে চাপ ছিল? যে দর্শক পছন্দ নাও করতে পারেন?
এখন, যদিও বা এই জুটি নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে, সেটা আমরা জানি। কিন্তু যখন শুরু করেছিলাম একটা বিষয় মাথায় ছিল যে প্রত্যেকে নিজের নিজের দিকটা বেস্ট দেব। চেষ্টা করব যেন সকলের পারফরমেন্স ভাল থাকে। কারণ, যদি অভিনয় বা উপস্থিতি ভাল না হয়, তাহলে সিনেমা ভাল হবে না। তাহলে কিন্তু এই জুটিটা কেউ পছন্দ করতেন না। আমার এটাও মনে হয়, যে আমার হিরো কিন্তু স্ক্রিপ্ট! তারপর বাকি সবকিছু। আমাদের মাথায় ছিল না যে এই জুটিটাকে ওয়ার্ক করাতে হবে। খুব রিল্যাক্স ছিলাম কাজটা নিয়ে। একটা অর্গানিক বিষয় ছিল। বলা যেতে পারে এর পেছনের রহস্য, আমার আর জিৎ স্যারের অফ স্ক্রিন সুসম্পর্ক। এত ভাল একটা সম্পর্কের বন্ডিং আমরা শেয়ার করি যে ওটাই ওয়ার্ক করে গিয়েছে।
শেষ চরিত্র সত্যবতী, পরবর্তীতে আশা করি বিনোদিনী, সেখানে নিশা একদম আলাদা! কোনও বিশেষ প্রস্তুতি?
প্রথম কথা হচ্ছে, দুটো যে উদাহরণ দিলে, খুব সুন্দর। কারণ, দুটোই পিরিয়ডিক ছবি। আমার কাছে কিন্তু তারপরও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বাঁধা চরিত্র অফার হয়েছিল। আমি না ভাবছিলাম একটা সময় যে, আমায় কি তাহলে একধরনের স্টিরিওটাইপ চরিত্রে বেঁধে দিচ্ছে? তখন, আমি ভাবলাম যে আর যদি আমি একটাও এমন ধরনের চরিত্র করি তাহলে কিন্তু চেনা ধাঁচে ফেলে দেওয়া হবে। এবং এটা ভাঙার খুব দরকার ছিল। তখনই, বুমেরাং আসে আমার কাছে। একটা আশীর্বাদের মত হয়ে আসে। আমি ভীষণ ভাগ্যবান সেই জন্য। মানুষের ধারণা যে ভাঙতে পেরেছি সেটাই অনেক।
আর রোবট আছে বলে তো, আমি আরও হ্যাঁ করি। এরপর ইচ্ছে আছে এলিয়েন চরিত্রে অভিনয় করব। আর যদি প্রস্তুতি বলো, তাহলে যিনি স্টেজে এই রোবটের চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোনালিসা, তাঁকে দেখেছি। এছাড়া দিনের পর দিন অফিসে ওয়ার্ক শপ করেছি। একটু ঘাড় নাড়ানো, চোখের কারুকার্যটা ঠিকভাবে করা, এগুলো একটু দেখেছি। আর যেটা না বললেই নয়, আমি রাত্রে ঘুম থেকে উঠে উঠে বাড়িতে প্র্যাকটিস করতাম ওরকমভাবে হাঁটা চলা।
কোনটা বেশি শক্ত, বিনোদিনী নাকি নিশা?
এই রে, এটা কিন্তু ভাগ করা খুব খুব কঠিন। কারণ, বিনোদিনী একটা এমন চরিত্র, যার একটা ইতিহাস রয়েছে। রেকর্ড রয়েছে। যার লড়াই আমরা জানি। সে কী কী করেছে সেটা তো জানা অনেকের। কিন্তু নিশা, তাকে নিয়ে কোনও লেখা নেই। সেটা একটা ভাবনার বিষয়। রোবট হওয়া কিন্তু সহজ নয়। তাঁর কোনও দুঃখ বেদনা নেই। একদম অন্যরকম। সেটার কোনও ট্র্যাক রেকর্ড নেই। আর নিজেকে ভাঙার একটা বিরাট লড়াই ছিল এটা।
বাংলার রোবটের তো জয়গান...
হ্যাঁ, একদম! আরেহ, বলো না। আমায় না জিৎ দা বলেছিল, যে এই চরিএটা তোমার জীবনে একটা ল্যান্ডমার্ক হয়ে থাকবে। তাঁর একটাই কারণ, এমন চরিত্র আগে কেউ করেনি। নায়িকাদের ক্ষেত্রে এটা একটা বিরাট আপ টু মার্ক সিচুয়েশন হয়ে গেল। কিন্তু, একটাই যে রিলিজ হতে একটু দেরি হয়ে গেল। কারণ, VFX এর কাজ বাকি ছিল। যদিও, সেটা বিষয় না। কাজ ভাল হতে গেলে দেরি হবেই।
দেবদা কী বলল..?
ও খুব খুশি, বলা উচিত গর্বিত! দেব কেন, আমার বন্ধু বান্ধব সকলেই যারা দেখেছে তারা বলেছেন। কারণ, এমন একটা চরিত্র যেটা অনেক তারকারা ছুঁতেও পারেন না। সেটা দেখে দেব খুব আনন্দ পেয়েছে।
রুক্মিণী একজন রোবট হিসেবে তো মন ছুঁয়ে নিল, সেটা কি চেহারার জন্যই!
এটা অনেকেই বলছেন। কিন্তু আমার মনে হয় না। চেহারা শুধু ম্যাটার করে না। বরং, আমি এটুকু বুঝেছিলাম যে রোবটের মধ্যে যেন একটা লাইভ্লি বিষয় থাকে। তাঁর চোখের মুভমেন্ট, তাঁর কোনও সেন্স নেই। সে একটা যন্ত্র। কিন্তু, আমি যেটা চেয়েছিলাম সেটা হচ্ছে রোবটের মধ্যে প্রাণবন্ত ভাবটা যাতে বজায় থেকে যায়। মানুষ যাতে বিষয়টা উপভোগ করতে পারে। বাচ্চারা যেন আনন্দ পায়।
সাইফাই ছবি, তারপর তোমার ডবল রোল, কোথাও গিয়ে কি তোমার মনে হয় এটা নারীকেন্দ্রিক ছবি, এবং সফলতার শীর্ষে তুমি?
বাংলা চলচ্চিত্র জগতটা কিন্তু ডাইভার্ট। থ্রিলার, ক্রাইম সবরকম ছবি হলেও এই যে বুমেরাং হল, এতে কিন্তু আরেকটা দিক খুলে গেল। নতুন একটা ভাগ পেল বাংলা ছবি। পরে অবশ্যই এই নিয়ে কাজ হবে। কিন্তু, বুমেরাং সেটা শুরু করল। অনেক সময় দেখা গিয়েছে যে নতুন জুটিকে নিয়ে রোমান্টিক ছবিই হত, সেখানে এটা আলাদা। আসলে, বাংলার মানুষ খুব জ্ঞানী, তাদের এগিয়ে যাওয়ার, স্বাধীন ভাবে সবকিছু গ্রহণ করার মতো মানসিকতা আছে। তাই, আজ তারা এই রোবট প্রেম বিষয়টায় গ্রহণ করেছেন... ( হাসি )
আর, যদি বলো সাফল্যের কথা, তাহলে এটাই বলব একার আমার কৃতিত্ব এটা না। তাঁর একটাই কারণ, এই যে পৃথিবীটা, সেটা নারী পুরুষ দুজনে সমানভাবে তুলে ধরে। তাই, এখানে একার কিছুই নেই। আমার এই ছবির ক্ষেত্রেও তাই। সকলের সমান কৃতিত্ব। ছবি, ভাল হলেই জয় হবে। নারীকেন্দ্রিক না পুরুষ, সেটা তো পরের ব্যাপার।
শেষ প্রশ্ন, দেব না জিৎ, প্রযোজক হিসেবে কার কাছে দাবী করা যায়?
এই রে, না! আমি কিন্তু সবসময় সকলের কাছে দাবী করতে ভালবাসি। আমার নিজের দাবি চলতেই থাকে। আমি জানি না কেন, কিন্তু এটা আমার অধিকার হিসেবে মনে হয়। আর জিৎ দা, ভীষণ সাহায্য করে। সেটে সেই ভাইবটা রাখে।