এক যুবক ও যুবতী, স্পষ্ট বোঝা যায় তারা পালাচ্ছে। ত্রস্তচোখে খুঁজছে একটা রেলস্টেশন, হয়ত পালাবে বলে। রাত বাড়ছে ক্রমশ। ভীতচোখে ওরা একটা গাড়ি খুঁজছে, যে কোনও একটা গাড়ি। এসময় হঠাৎ একটা মিনিভ্যান সামনে এসে দাঁড়ায়, ওদের দুজনকে গাড়িতে উঠতে দেয়, তারপর…
পরিচালক সানাল কুমার শশিধরণ দর্শকদের অকারনে ঝুলিয়ে রাখতে পছন্দ করেন না। ‘এরপর কী’, এ প্রশ্নের উত্তর দিতে একটুও দেরি করেননি তিনি। তাঁর ছবির প্রেমিক-প্রেমিকারা গাড়িতে উঠে যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় তা নিশ্চিত বিপজ্জনক। ভয়ঙ্কর, কুৎসিত এবং ভয়াবহ। গাড়ির সামনে বসে থাকা দুজন আর একজনের সঙ্গে দেখা হয় তাদের, রাস্তায়। গাড়িতে উঠেই দুর্গা দেশপান্ডে এবং কবীর নায়ার বুঝতে পারেন (সিনেমাটির মুখ্য চরিত্ররা) তাঁরা বদ লোকের খপ্পরে পড়েছেন।
কেরালার প্রত্যন্ত একটি গ্রামের পটভূমিতে তৈরি ছবি এস দুর্গা। এই চলচ্চিত্রটির একটি তাৎক্ষণিক বৈশিষ্ট্য আছে, শশিধরণের আগের ছবি যেভাবে জাতিগত বৈষম্য, কুৎসিত পৌরুষপ্রদর্শন এবং পিতৃতন্ত্র সম্পর্কে কঠোর, সেভাবেই এস দুর্গাও এই বিষয়গুলির উপর আরও একটি সজোরে থাপ্পড়।
দুর্গা একজন মেয়ে। এবং এটাই তার খারাপ হওয়ার পক্ষে যথেষ্ট কারণ। তার ওপর আবার সে হিন্দিভাষী, এবং উত্তর ভারতীয়। ভারতে যে কোনও জায়গায়ই এখন এমন পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে আজকের ভারতে যেখানে একজন হিন্দু মেয়ে এবং একজন মুসলিম ছেলে একসঙ্গে থাকলেই একশ্রেনীর মানুষের মতে তাঁরা ধর্ষণ ও খুনের যোগ্য হয়ে ওঠেন। আর এমনটা যদি হয় রাতের বেলায় তাহলে তা হয়ে ওঠে আরও ভয়াবহ বিষয়। কারণ ‘রাত কি আন্ধেরে মে’ কোন ভদ্র মেয়ে কি বাইরে বেরোয়?
এ ছবি চলেনি। চলবেনা সেটা জানা ও ছিল আমাদের। আজকের সময়ে, যখন শিল্প সম্পর্কে ধারণাহীন, তাৎক্ষণিকতা ও বিদ্রূপ সম্পর্কে অজ্ঞ লোকজন স্থির করছে আমাদের কী দেখা উচিত আর কী নয়, সেসময় দাঁড়িয়ে এছবি জনপ্রিয় না হওয়াটাই স্বাভাবিক।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2018/04/Capture-2.jpg)
এ ছবির নাম সেক্সি দুর্গা। এখানে সেক্সি শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে গভীর শ্লেষের সঙ্গে, যে শ্লেষের উদ্দিষ্ট আমাদের সমাজের অন্দরে চারিয়ে থাকা ভণ্ডামি। আমরা দুর্গা ও কালী নামক নারীদের নিরাপদ বেদীতে রাখি, কিন্তু বেদী থেকে নামলেই তাঁরা হয়ে ওঠেন ভোগসামগ্রী। এছবি সেই সমস্ত মানুষদের সযত্নে লাগানো মুখোশ একটানে খুলে দেয়।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2018/04/30264353_1797626033593674_8124708793968754688_n.jpg)
একটি সমান্তরাল প্রেক্ষাপটে এই সিনেমা দেখায় যে, নিজেকে সমাজের উর্ধ্বে রাখা পুরুষ 'গুরুদান ঠুককাম' উদযাপন করে শুধুমাত্র সিংহাসনে বসে থাকা দেবীকে। রক্তমাংসের নারীর ক্ষেত্রে হিসেবটা আলাদা। সেখানে পুরুষই সত্য, তারাই শেষকথা। এবং সে'সমাজে নারীরা ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া একটি করুন বাস্তব।
এই ছবি দেখাটা খুব সহজ নয়, দেখবার সময় বারবার ভয় আর শঙ্কা গ্রাস করে নেয়। আক্ষরিক অর্থেই এ এক শ্বাসরোধকারী সিনেমা। দেড় ঘন্টা সিঁটিয়ে বসে থাকতে হয়। পরিচালক বোধহয় দর্শকের অসহায়তা আগেই ঠাহর করতে পেরেছিলেন। তবুও এ ছবি দেখা উচিত। আমাদের প্রত্যেকের।