এক্সট্র্যাকশন- নেটফ্লিক্সের এই সিরিজ হইচই ফেলে দিয়েছে দর্শকের লকডাউন জীবনে। প্রথম দুদিনেই রেকর্ড সংখ্যক মানুষ দেখেছেন এই সিনেমা। গত বছর যখন ‘থর’-অভিনেতা ক্রিস হেমসওয়ার্থ মুম্বইয়ে পা রাখেন শুটিং করতে, সেই সময় থেকেই এই ছবি নিয়ে উদ্দীপনার শুরু। ‘অ্যাভেঞ্জার্স’ ফ্যানেদের কাছে এই ছবি হল ক্রিস হেমসওয়ার্থ-এর ছবি। তবে বাঙালি দর্শকের কাছে আরও একটি উত্তেজনার কারণ শতাফ ফিগার। এদিন ফোনে তিনি আড্ডা দিলেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে।
ক্রিস হেমসওয়ার্থের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
ক্রিসের সঙ্গে সিনেমায় স্ক্রিন শেয়ার করিনি। কারণ আমার চরিত্রটা ওর বিপরীতে ছিল। ও হিরো আর আমরা ভিলেনের পক্ষে। তবে গোটা প্রজেক্ট হিসেবে দেখতে গেলে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমার অভিনয় জীবনেও এই প্রজেক্টটির মূল্য অনেকটাই।ক্রিসের সঙ্গে দেখা হয়েছে। কথাও হয়েছে জিমে কিংবা যখন ফুটবল খেলতাম শুটিংয়ের মাঝে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ক্রিসের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করা হয়ে ওঠেনি।
তবে খুবই ভালো লেগেছে এই ইন্টারন্যাশনাল টিমের সঙ্গে কাজ করতে পেরে। এখানে এই ধারায় কোনওদিন কাজ করা হয়নি। অভিজ্ঞতার দিক থেকে একদম আলাদা। আশা করি পরে আবার এরকম সুযোগ পাব।
আপনার চরিত্রে প্রস্থেটিক যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, গোটা বিষয়টা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল বিষয়টা। কারণ আগে একটা সিলিকনের এক ইঞ্চির কোটিং লাগান হয়। তার উপর একটা এক্সপ্রেশনের ডুপ্লিকেট করা হয় মাস্কে। আর সেই এক্সপ্রেশনটা ধরে রাখতে হবে। তারপর প্লাস্টারের একটা কাস্ট বসানো থাকত প্রায় ৪৫ মিনিট। আমাদের বলা থাকত যে সেই সময় কোনও রকম মুখে বিকৃতি হলেই আবার প্রথম থেকে গোটা প্রক্রিয়াটা শুরু করতে হবে।
সত্যি কথা বলতে কী অভিনয় জীবনে এটাই তো খুঁজি। স্টোরি লাইন এবং চরিত্রে চ্যালেঞ্জ পেলেই তো কাজ করার আনন্দ। তবে পুরো প্রচেষ্টা তখনই সফল হবে যখন দর্শকরা দেখে এক্সাইটেড হবেন। সেটাই আসল পুরস্কার।
যখন প্রথম শুনলেন রুশো ব্রাদার্সের প্রোডাকশনে কাজ করছেন, কী মনে হয়েছিল সেই মুহুর্তে?
বললে বিশ্বাস করবে না এটার একটা গল্প আছে। সেই সময় আমি ভূমিকন্যার শুটিং করছিলাম। আমাদের রাতের শুটিং চলছিল। তখন কাস্টিং করতে কলকাতায় আসে স্যাম হারগ্রেভ। তাঁর সঙ্গে আসেন কাস্টিং ডিরেক্টর টেস জোসেফ। ওরা আমাকে দেখা করতে বলে কিন্তু তখনও ওরা আমাকে বলেনি যে কোন প্রোডাকশন। আমিও সারা রাত কাজ করে ক্লান্ত ছিলাম ভাবছিলাম যাব না। কিন্তু পরে টেস আবার ফোন করে ডাকেন। তারপর গিয়ে অডিশন দিলাম। তখনও জানি না ছবির জন্য শুট না অন্য কিছু। স্যাম হারগ্রেভকেও চিনতাম না। বাড়িতে এসে গুগল করে তারপর জানলাম ওনার পরিচয়। দু-তিন সপ্তাহ বাদে এক্সট্র্যাকশনের জন্য কল এল। আমার জন্য খুবই এক্সাইটেড মোমেন্ট, আর ততক্ষণে জানতে পেরেছি এই প্রজেক্টে ক্রিসও রয়েছেন।
পরে যখন জানলেন ক্রিস হেমসওয়ার্থ আছেন অথচ সেই প্রজেক্টেই না বলতে যাচ্ছিলেন...
(কথার থামিয়ে) হ্যাঁ, হ্যাঁ তখন আমার মনে হচ্ছিল কত বড় একটা ভুল করতে চলেছিলাম। আর এই উত্তেজনাটা সবার থাকবে। কারণ তুমি জানো যে বিশ্বের সেরা একজনের সঙ্গে কাজ করতে চলেছ। এই প্রজেক্টে আসলে সবাই এক একজন দিকপাল। আমাদের যিনি সিনেম্যাটোগ্রাফার ছিলেন নিউটন থমাস সিজল, তিনি বিখ্যাত সিনেমা বোহেমিয়ান র্যাপসডির সিনেম্যাটোগ্রাফার। কস্টিউম যিনি করেছেন তিনি অস্কার উইনিং ছবিতে কাজ করেছেন। একটা সিনেমায় যখন এরকম মানুষরা থাকেন তখন একজন অভিনেতা হিসেবে অনেকটা নিরাপদ মনে হয়। ভাল কাজ এমনিই বেরিয়ে আসে। অভিনয় জীবন শুরুর পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে এই যে সুযোগ পেয়েছি আমি সত্যিই ভাগ্যবান।
আপনাকে দেওয়া সেরা কমপ্লিমেন্ট কিছু মনে আছে, কাজের সময় পেয়েছেন বা পরে...
আমার ফার্স্ট অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর লি সেলেরি। উনি আমাকে আজকে মেসেজ করে জানিয়েছেন যে 'শাতাফ ইউ অ্যার সাচ আ জেন্টলম্যান। সো গুড টু হ্যাভ ইউ ইন দ্য সেট। ইট ওয়াজ গুড টু সি ইউ ইন দ্য সেট দ্যট মেকস ডিফারেন্স'। আমার কাছে এটা ভীষণ বড় একটা পাওয়া।
ওদের কাজের ধারাটাও অন্যরকম আমাদের মতো নয়। ওদের পরিকল্পনা এত নিখুঁত। তাই সেটাই প্রতিফলিত হয় স্ক্রিনেও। পেপার ওয়ার্ক এত নিখুঁত যে বাকি কাজ আপনাআপনিই হয়ে যায়। টলিউডের সত্যি নিয়মানুবর্তিতা এখান থেকে শেখা প্রয়োজন। তাছাড়া ইউনিটের প্রত্যেকে এত ভাল। ক্রিস তো ভীষণ ভাল মানুষ, ছোট বড় সকলের সঙ্গে কী সুন্দর মিশে যায়।