১৯৭০ সালে প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বোচ্চ সম্মান বঙ্গ বিভূষণে ভূষিত করেছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে। আর তারও ১ দশক পেরিয়ে কিনা শেষবেলায় নবতিপর কিংবদন্তী শিল্পীকে পদ্মশ্রী সম্মান দেওয়ার প্রস্তাব রেখেছে মোদী সরকার! মেনে নিতে পারেননি 'গীতশ্রী' সন্ধ্যা (Legendary singer Sandhya Mukherjee)। অতঃপর সোমবার বিকেলে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে দিল্লি থেকে ফোন আসতেই পত্রপাঠ সেই পদ্ম-সম্মান প্রত্যাখ্যান করে দেন প্রবাদপ্রতীম গায়িকা। সেই প্রসঙ্গে ইতিমধ্যেই শিল্পীমহলে ঝড় উঠেছে। মোদী সরকারের 'দায়সারা' প্রস্তাবে বিরক্ত হয়েছেন শিল্পীমহলের একাংশ। মা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের পদ্মশ্রী-প্রত্যাখ্যান নিয়ে এবার মুখ খুললেন কন্যা সৌমী সেনগুপ্ত।
সৌমীর সাফ কথা, "পদ্মশ্রী জুনিয়র শিল্পীদের জন্য, গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের জন্য নয়।" এখানেই অবশ্য থামেননি তিনি। তাঁর মন্তব্য, "আমাদের গোটা পরিবার তথা মায়ের অনুরাগীমহল তো অন্তত এটাই মনে করেন। দিল্লি থেকে ফোন পেয়েই মা পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন যে, এই বয়সে এসে পদ্মশ্রী খেতাব নেওয়া অপমান-সম। এমনকী, এটাও বলে দিতে চাই যে, গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে রাজনৈতিক কোনও স্বার্থ জড়িয়ে নেই।"
৮ দশকের গায়কী জীবনে এই ৯০ বছর বয়সে এসে পদ্মশ্রী গ্রহণ করা ভীষণ অসম্মানজনক, এমনটাই বলছেন সন্ধ্যা-কন্যা সৌমী। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বিকেলেই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের পদ্মশ্রী প্রত্যাখ্যানের খবর প্রকাশ্যে আসে। শিল্পীর অভিযোগ, আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি। তাছাড়া, ফোনে যেভাবে পদ্মশ্রী সম্মান দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে, সেটা তাঁর মতো কিংবদন্তী শিল্পীর কাছে যথেষ্ট অপমানজনক ঠেকেছে বলেই তিনি জানান।
<আরও পড়ুন: টালিগঞ্জে আমি একেবারেই আন্ডাররেটেড নই: ঋত্বিক চক্রবর্তী>
উল্লেখ্য, আবারও আটের দশকের ঘটনার পুনরাত্থাপন। সেইসময়ে একইভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে দেওয়া পদ্মশ্রী সম্মান ফিরিয়ে দিয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। তার প্রায় তিন দশকের মাথায় প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি ঠিক একই কাজ করলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, সন্ধ্যাদেবী বর্তমানে অসুস্থ। নবতিপর শিল্পীকে সোমবার ফোন করা হয় কেন্দ্রের তরফে। কোনওমতে দূরভাষে কথা বলেন তিনি। সেই কথোপকথন মোটেই ভাল ঠেকেনি গায়িকার কাছে। কেন? এপ্রসঙ্গে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ফোনের ওপ্রান্ত থেকে গায়িকাকে হিন্দিতে বলা হয়, "আগামীকাল আপনাকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করতে চাই। আপনি যদি নেন, তাহলে তালিকায় অন্যান্য পদ্ম-পুরস্কার প্রাপকদের সঙ্গে আপনার নামও ঢুকিয়ে দেওয়া হবে।" এহেন কথা শুনেই গায়িকা প্রথমটায় হতবাক হয়ে যান।
পদ্ম-সম্মানে ভূষিত করার এটাও কোনও কায়দা হয়ে পারে বলে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের জানা ছিল না। অতঃপর তৎক্ষণাৎ ফোনেই পদ্মশ্রী সম্মান পত্রপাঠ নাকচ করে দেন। হিন্দিতে বলেন, “আমার মন চাইছে না। আমার শ্রোতারাই আমার পুরস্কার।”
উল্লেখ্য, ক্লাসিক্যাল সঙ্গীতের পাশাপাশি শচীন দেববর্মন, সলিল চৌধুরী, মদন মোহন, অনিল বিশ্বাস, রোশনের মতো খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বের হাত ধরে ফিল্মি দুনিয়াতেও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া গানের সংখ্যা নেহাত কম নয়। একসময়ে হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও চুটিয়ে গান গেয়েছেন তিনি। পাশাপাশি নিজস্ব অ্যালবামও বের করেছেন। এহেন প্রবাদপ্রতীম শিল্পীর কাছে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে পদ্মশ্রী সম্মানের প্রস্তাব আসায়, তিনি অসম্মান বোধ করেছেন বলে জানিয়েছেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন