মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রী শিবিরে নারীশক্তির জয়জয়কার। মুখ্যমন্ত্রী-সহ আরও ৮ মহিলার কাঁধে মন্ত্রীত্বের দায়িত্ব পড়েছে। শশী পাঁজা, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, রত্ন দে নাগ, সন্ধ্যারানি টুডু, শিউলি সাহা, সাবিনা ইয়াসমিন এবং জ্যোৎস্না মান্ডিদের নামের পাশে মন্ত্রীপদের তালিকায় জ্বলজ্বল করছে আরও একটি নাম- 'বীরবাহা হাঁসদা' (Birbaha Hansda)। ভোটের মুখেই ঘাসফুল শিবিরে নাম লিখিয়েছেন সাঁওতালি ছবির এই খ্যাতনামা নায়িকা। সক্রিয় রাজনীতিতে যদিও আগেই নেমেছিলেন, তবে কোমর বেঁধে আরও বড় যুদ্ধের তৈয়ারিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেছিলেন বীরবাহা। তৃণমূলে যোগ দিয়েই নির্বাচনী টিকিট। এবং তারপরই বিজেপিপ্রার্থী সুখময় সৎপথীকে হারিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে সোজা মমতার মন্ত্রীশিবিরে। ধূমকেতুর মতো উত্থান বললেও অত্যুক্তি হয় না বটে! কারণ যেখানে বাংলা সিনে ইন্ডাস্ট্রির দুই নায়িকা জুন মালিয়া (June Malia) এবং লাভলি মৈত্রও (Lovely Maitra) প্রথমবারের নির্বাচনী পরীক্ষার্থী হয়ে জিতেও মন্ত্রীত্ব পদ পাননি, সেখানে সাঁওতালি সিনে-পর্দা থেকে তৃণমূল সুপ্রিমোর মন্ত্রীসভায় ঠাঁই পাওয়াটা চারটিখানি কথা নয়! বন প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন বীরবাহা।
তাহলে কি বাংলার নায়িকারা ব্রাত্য? প্রশ্ন উঠলেও রাজনৈতিক মহলের অন্দরে বীরবাহা হাঁসদার মন্ত্রীত্ব পাওয়া নিয়ে জোর গুঞ্জন। একাংশের মত, একুশের বিধানসভায় (West Bengal Assembly Election 2021) বিজেপিকে ধরাশায়ী করলেও সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। সেখানেও গেরুয়া শিবিরকে একচুল জায়গা ছাড়তে নারাজ তৃণমূল সুপ্রিমো। অতঃপর এখন থেকেই সেই যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে মন্ত্রীসভার তালিকায় মাস্টারস্ট্রোক দিয়ে দিয়েছেন মমতা (Mamata Banerjee)। আর সেই প্রেক্ষিতেই মন্ত্রীপদে উজ্জ্বল উপস্থিতি বীরবাহা হাঁসদা, সন্ধ্যারানি টুডুদের নাম।
সাঁওতালি ছবির সুপারস্টার বীরবাহা। সোমবার রাজভবনে মন্ত্রীত্বপদে শপথ নিতে এসেও নিজের সংস্কৃতির ছাপ রাখলেন অভিনেত্রী তথা জননেত্রী। বীরবাহাকে দেখা গেল সাঁওতালি কায়দায় লাল-সাদা রঙের শাড়ি পরনে। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে ঝাড়খণ্ড পার্টির প্রার্থী হয়েছিলেন বীরবাহা হাঁসদা। বাবা নরেন হাঁসদা ঝাড়খণ্ড পার্টির (Jharkhand Party) প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর মা চুনীবালা হাঁসদাও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এবং যথেষ্ট সুনামও রয়েছে। সেক্ষেত্রে তাঁর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা তো ছিলই, তবে সেই শক্তঘাঁটি থেকে জিতে তৃণমূল বিধায়ক হয়ে সোজা মমতার মন্ত্রীসভায় বীরবাহার ঠাঁই পাওয়া অনেকের কাছেই স্বপ্নের মতো। সংগ্রামী পরিবার থেকে উঠে আসা বীরবাহার মুখেও হাসি। কারণ, দলনেত্রী ভরসা রেখেছেন তাঁর উপর। বড় দায়িত্ব সঁপেছেন। তাই ঝাড়খণ্ডবাসীদের মুখে হাসি ফোটাতেও দৃঢ় প্রত্যয়ী তিনি।
সেই প্রেক্ষিতেই প্রশ্ন উঠেছে, বীরবাহা যদি তৃণমূলে (TMC) যোগ দিয়ে জিতেই মন্ত্রীত্ব পদ পেতে পারেন, তবে জুন-লাভলিরা নয় কেন? উত্তর অমিল থাকলেও বাংলা সিনে ইন্ডাস্ট্রির নায়িকারা কিন্তু ভরসা রেখেছেন দলনেত্রীর উপর।
অন্যদিকে, সোমবার শপথ নেওয়া ৪৩ জনের মন্ত্রিসভার ৮ জন মহিলা মন্ত্রীর মধ্যে ১ জন পূর্ণমন্ত্রী, ৩ স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী এবং ৪ জন প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন।
৮ মন্ত্রীর মধ্যে পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন একমাত্র শশী পাঁজা। স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী পদে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, রত্ন দে নাগ এবং সন্ধ্যারানি টুডু। অন্যদিকে শিউলি সাহা, সাবিনা ইয়াসমিন, বীরবাহা হাঁসদা এবং জ্যোৎস্না মান্ডিরা পেলেন প্রতিমন্ত্রীর পদ। মন্ত্রীত্বের তালিকার ৪ নতুন মুখ হলেন- রত্না, শিউলি, বীরবাহা এবং জোৎস্না।
প্রসঙ্গত বিভিন্ন জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী, একুশের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের বিপুল জয়ের নেপথ্যে রয়েছে মহিলা ভোটারদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আর সেই সমর্থনের প্রতিফলনই দেখা গেল মমতার 'হ্যাটট্রিক' সরকারের মন্ত্রিসভায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ তো এমনটাই বলছেন।