ছবি- সত্যাণ্বেষী ব্যোমকেশ
পরিচালক- সায়ন্তন ঘোষাল
অভিনয়- পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, রুদ্রনীল ঘোষ, অঞ্জন দত্ত, সুমন্ত মুখোপাধ্যায়, গার্গী রায়চৌধুরী
রেটিং- ৩/৫
ছবির প্রথম দৃশ্যেই মন জয় করেছেন আধুনিক ব্যোমকেশ। আধুনিক না বলে স্মার্ট বলাই যেত কিন্তু তা ব্যোমকেশের সাবেকী ধারণায় আঘাত করত। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'মগ্ন মৈনাক' অবলম্বনে তৈরি সায়ন্তনের ছবিতে ব্যোমকেশ পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। ভদ্রলোকের যে ব্যোমকেশের চলনে আলাদা ম্যানারিজম আছে একথা স্বীকার করতে হবেই। শার্ট-প্যান্টে একাত্তরের সত্যাণ্বেষী।
গল্পের প্রেক্ষাপটটা বদলেছেন পরিচালক। একাত্তরের বাংলার নকশাল আন্দোলন, কোয়ালিশন যুক্তফ্রন্টের সরকার গঠনের চেষ্টা এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, শেখ মুজিবুর রহমান-- টুকরো শব্দগুলো কিছুটা স্পষ্ট করবে সে সময়ের অশান্ত পরিবেশ। সেই সঙ্গেই ব্যোমকেশ-অজিতের নতুন কেস। ছবিতে সন্তোষ দত্ত-র বাড়িতে খুন হয় হেনা মল্লিক। সেখান থেকেই রহস্যের সূত্রপাত। উদয়চাঁদ ও রবি বর্মারা নিজেদের মতোই এসেছেন গল্পের নিয়ম মেনে। তবে সিনেম্যাটিক লিবার্টি নিয়েই ব্যোমকেশকে তৈরি করেছেন সায়ন্তন। সে কারণেই হয়তো চরিত্রগুলোর চিত্রায়ণে সামান্য এদিক ওদিক করেছেন, তবে তা দিব্যি মানিয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন, নেতাজীর অন্তর্ধান রহস্য, কিছু বাস্তব, কিছু স্বপ্ন
বলতেই হবে, পরিচালকের ব্যোমকেশকে আলাদা মাপকাঠি দিতে চাওয়াটা শাপে বর হয়েছে, ছবিতে গতি এনেছে। তবে কিছু কিছু খামতি নেই বললে ভুল হবে। একাত্তরের সময় নিয়ে ছবির প্রেক্ষাপট যখন তৈরি করছেন এবং সেখানে ব্যোমকেশের রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে কথা বলছেন সেইদিকগুলো জোরালো হল কই? অযথা কয়েকটা সংলাপে বারবার মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছিল সময়টা মুক্তিযুদ্ধের। তার বিশেষ প্রয়োজন ছিল না।
ফ্ল্যাশব্যাক ছবির শক্ত পিলার। রহস্য ঘনীভূত করতে আর দর্শকমনে জট পাকিয়ে দিতে সফল। একই দৃশ্যের প্রতিবার চরিত্র বদলেই চেয়ার ছেড়ে একটু সোজা হয়ে বসবেন আপনি। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও রুদ্রনীল ঘোষ, অভিনয়ে জীবন্ত করেছেন সময়। পর্দায় সায়ন্তনের অজিতও দুর্দান্ত, বলে বলে ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি। আর একজন ছবিটা জুড়ে সাবলীল অভিনয়ে মাত করলেন, তিনি অঞ্জন দত্ত। রবি বর্মার চরিত্রে এর থেকে ভাল কেউ হতে পারত কি! বাংলা ছবির নিয়ম মেনে কিছু অতিনাটকীয়তাও রয়েছে, আর চোখে লাগে সত্যবতীকে। একটি দৃশ্যে তাঁর প্রয়োজন ছিল না, তার থেকে পরম-রুদ্রর বাক্যালাপ পর্যন্তই হিউমারটা রাখতে পারতেন পরিচালক।
আরও পড়ুন, ছবি মনোরঞ্জক কিন্তু গল্পের মিতিনের চেয়ে অনেকটাই আলাদা
সিনেমাটোগ্রাফি, আবহ এবং আলো ছবিটার ইউএসপি। যদিও এই 'অন্য ব্যোমকেশ' আপনাকে থ্রিল দেবে। সায়ন্তন এই ব্যাপারে কথা রেখেছেন। 'অন্য ব্যোমকেশ' তৈরিতে সক্ষম তিনি। তবে পুজোয় নিয়ম মেনে আবারও একটা ব্যোমকেশ। এবারে আবার পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, রুদ্রনীল, সায়ন্তন ঘোষাল। এতকিছু ভাবার পরেও সিনেমা হলে ছবিটা দেখতে গেলে মন্দ লাগবে না। আফটার অল, স্মার্ট ব্যোমকেশ যে।