হাতে এখন চারটে ছবি। পরপর অনেকগুলো কাজ করে ফেলেছেন সৌরসেনী মৈত্র। রিলিজ করতে চলেছে বাবলি। তাঁর থেকেও বড় কথা পুজোয় তাঁর ছবি রিলিজ করার অপেক্ষায়। 'শাস্ত্রী', যাতে তিনি কাজ করেছেন মিঠুন এবং দেবশ্রীর সঙ্গে। তারপর পাইপলাইনে রয়েছে, আমার বস এবং 'সত্যি হলে সত্যি কিছু নেই' এর মত ছবি।
টলিপাড়ার একজন নায়িকা, যার ঝুলিতে এতগুলো ছবি একসঙ্গে। শেষ হয়েছে প্রায় প্রত্যেকটি ছবির শুটিং। 'বাবলি'তে তাঁর প্রথম কাজ রাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে। অন্যদিকে, 'আমার বস' ছবিতে শিবপ্রসাদ এবং নন্দিতা রায়ের সঙ্গেও তাঁর প্রথম কাজ। সবমিলিয়ে সিনেমাটিক বলয়ের মধ্যে নিজেকে বেঁধে ফেলেছেন তিনি। তাঁর পাশাপাশি ঘোরাঘুরি তো রয়েছেই। একটু সময় পেতেই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে গপ্পো করতে বসলেন তিনি।
ঘুরলে কেমন? সকলে ভাবছে তুমি পাহাড় থেকে ক্রুস, কত সব জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছ....
হাহা, ঘুরলাম খুব ভাল গো। সত্যি... কিন্তু এটা একটা মজার ব্যাপার। আমি কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ছবি আপলোড করি তাঁর অর্থ সেখানে নেই। অন্য জায়গায় আছি। আসলে, কোথাও ঘুরতে গিয়ে অনেক ছবি তুলি তো! সেগুলো হয়তো হঠাৎ করে মনে হল, যে আপলোড করি। আমি আসলে মানুষকে কনফিউজ করতে ভালবাসি।
উপন্যাসের ওপর নির্মিত বাবলি, এর আগে তো গল্পের ওপর কাজ করেছ...?
হ্যাঁ, ব্যোমকেশ করেছি তো।
রাজদার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা...?
রাজদার সঙ্গে আমার প্রথম কাজ। আর সত্যি বলতে গেলে আমি এত খুশি ওই মানুষটার সঙ্গে কাজ করে। একজন অভিনেতাকে যেভাবে উনি সাপোর্ট করে, যেভাবে কমফোর্ট দেয় ফ্লোরে। মানে সেটে উনি আদ্যোপান্ত একজন মেন্টর। আমি প্রকাশ্যে বলছি, যদি রাজ দা আমায় কাস্ট করে, তবে আমি আরও অন্যান্য ছবিতে উনার সঙ্গে কাজ করতে চাই। কীভাবে শুটিং হয়ে গেল আমি বুঝলাম না। আবির চট্টোপাধ্যায় আর রাজ দা দুজনেই এত আড্ডাবাজ, এত সুন্দর সব হয়ে গেল।
ঝুমার চরিত্রটা করতে কেমন লাগল...?
দেখো, এটা তো একটা এক্সটেন্ড ক্যামিও। বুদ্ধদেব গুহ নিজেই সেভাবে লিখেছেন। আমার তো মনে হয়, এমন একটা চরিত্র যেটা মানুষের পছন্দ হবে।
শুভশ্রী লিড নায়িকা, তুমিও একটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ন রোলে - স্ক্রিন প্রেজেন্স নিয়ে চাপ থাকে?
না গো, আমি না সেভাবে ভাবিই না। আসলে, আমরা কিন্তু অভিনেতা। যেই মেকাপ করি, কস্টিউম পরে নি, তারপর আমি সেই চরিত্রটা। যদি এধরনের অসুবিধা থাকত তাহলে কিন্তু, প্রথম থেকেই আমি না বলতাম। কিন্তু এটা বলতে হয় যে শুভশ্রী দি কিন্তু আমার থেকে খুব সিনিয়র। অভিনেত্রী হিসেবেও। যেটা শেখার উনার থেকে, নর্থ বেঙ্গলে আমরা শুট করছি আর উনি একসঙ্গে দুটো বাচ্চা যে বাড়িতে রয়েছে তাদের ম্যানেজ করছে। অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে রেখেছেন ফ্লোরে। তারপর আবার তিনি প্রযোজক। এতকিছু একসঙ্গে, উনি একজন সুপার উওমেন। এগুলো কিন্তু নেহাত ছোট কথা নয়।
'শাস্ত্রী'র শুটিং এর সময় তো কত সমস্যা হল....
হ্যাঁ! মহাগুরু অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তারপর, উনি একদম সুস্থ হয়ে ফিরলেন। সেখানেও আমার একটা গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্স। কিন্তু এত ভাল হয়েছে শুটিং। সবথেকে বড় কথা, আমি মহাগুরু আর দেবশ্রীদিকে একসঙ্গে ফ্লোরে পেয়েছি। সোহমদার সঙ্গে প্রথম কাজ। জীবনে কোনোদিন ভাবিনি জানো যে মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে অভিনয় করতে পারব।
শিবপ্রসাদের 'আমার বসে' রয়েছ তুমি... এতগুলো ছবিতে নানা ধরনের চরিত্র, ট্রানজিট কী করে করছ নিজেকে?
হ্যাঁ, ওটাও খুব আলাদা চরিত্র। আসলে সবকটি চরিত্রই একে অপরের থেকে আলাদা। আমি না বেছে নিতে পারব না যে কোনটা ভাল আর কোনটা খারাপ। তবে, আমার বস আসলে একজন ছেলে এবং মায়ের গল্প। সেখানে মেয়েদের গল্প রয়েছে। আমাদের খুব মজা হয়েছে কাজ করতে।
এতজন পরিচালকের মধ্যে কে বেশি স্ট্রিক্ট? রাজ চক্রবর্তী না শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় নাকি সৃজিত মুখোপাধ্যায়?
সকলেই! পরিচালক মানেই ফ্লোরে সকলে স্ট্রিক্ট। কারণ, ওখানে তো আর খেলা হচ্ছে না। কাজ করতেই যাচ্ছি। সবাই নিজেদের মত করে মজা করতে জানে। শিবুদার কথা যেটা বলতেই হয়, আমি প্রথমে ভাবতাম শিবুদা খুব রাগী। এখনও ভয় পাই। কিন্তু খুব ভালো বোঝাতে পারে শিবুদা। সহজ করে দেয় সবটা। একটা জিনিষ, তুমি ভাল অভিনেতা হতেই পারো কিন্তু তাঁর মানে এটা নয় যে সবসময় তুমি অসাধারন পরিচালক হবে। তবে, শিবুদা যেমন অভিনেতা তেমনই একজন দারুণ পরিচালক।
শিবুদা নাকি দারুণ সম্পর্কের গল্প বলতে পারেন...?
এটা একদম সত্যিই কথা। যেভাবে উনি সবটা ক্যাপচার করেন। ইমোশন থেকে ডায়লগ সবটা, ওরম সকলে পারে না। শিবুদা প্যাকেজ।
পরপর এতগুলো ছবি রিলিজ, পুজোতে ছবি রিলিজ করছে, পাশাপাশি আরও দুটি বড় ছবি 'টেক্কা' এবং 'বহুরূপী'... ভয় হয়?
হাসি .... আমার ছবি রিলিজ করলে আমি খুব উৎসাহ রাখি আবার ভয়েও থাকি। আমার এত চাপ লাগতে থাকে, যে প্রিমিয়ার বা স্পেশ্যাল স্ক্রিনিং এসবে গিয়ে আমি ছবি দেখতে পারবো না। আমার খুব চাপ লাগে। জানি না কেন... তবে অনেকবছর পর পুজো রিলিজ আমার। আমার কোনও অসুবিধা নেই যে আরও দুটি ছবি রিলিজ করছে। আমরা একটা ভাল কারণে লড়াই করছি। বাংলা ছবির ভাল হোক এটাই চাই। বক্স অফিসে কত কি হল, সেটা আমার দেখার কথা না। পুজোয় যে মানুষ বাংলা ছবিকে সময় দিচ্ছেন, এটাই আসল কথা।
পাবলিকের রিয়েকশন দেখতে হল ভিজিটে যাওয়া হয়?
হ্যাঁ, সেটা হয়। ওটা আমার খুব ভাল লাগে। এক তো তাদের প্রতিক্রিয়া দেখা, দুই আমার এটা মনে হয় যে মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়া ভাল।
কোনোদিন কোনও চরিত্রে অভিনয় করে মনে হয়েছে এর জন্যে পুরস্কার পাবই?
না, আমার একদম মনে হয় না। কারণ, তখন কাজ শুধু অভিনয় করা। আমি নিজে যদি ভাবি যে আওয়ার্ড উইনিং কাজ করেছি সেদিন আমার কেরিয়ার শেষ করে দেওয়া উচিত। আমার নিজের যেদিন থেকে এটা মনে হবে আমার পতন শুরু হবে।
সৃজিতের পরবর্তী ছবিতে ১২ জন তারকা, তুমি তাদের একজন...
অসাধারণ হয়েছে! সত্যি... সবটা খুব অসাধারণ! একটু কাজ করাটা ডিফিকাল্ট ছিল। কিন্তু ১২ জন মিলে আড্ডা। অসম্ভব ভাল একটা দল। যেখানে সিনিয়ররা আছেন। কিন্তু আমরা নেচেছি, গেয়েছি, কাজ করেছি।
টেকনিক্যালি সৃজিতের সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই ছবিতে কাজ করছেন আরও দুজন পরিচালক! কৌশিক গাঙ্গুলি এবং পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, তিনজনের মধ্যে আইডিয়া এক্সচেঞ্জ হল না সৃজিত নিজেই ক্যাপ্টেন অফ দ্যা শিপ?
শুধু সৃজিত দা ক্যাপ্টেন অফ দ্যা শিপ! কৌশিক দা এটুকুই বলেছিলেন, যে সৃজিত ফাটাবে। আমি ওর ওপর ছেড়ে দিলাম। এত হাসিয়েছেন কৌশিক দা। আমার মনে হচ্ছিল যে হেসে হেসে অ্যাবস হয়ে যাবে। তারপর ধরো, অনন্যা দি। একজন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেত্রী, কে বলবে? যেমন ভাল মানুষ, তেমনই একজন কলাকার।