র্যাপার ইপিআর যখন 'এমটিভি হাসল'-এর চূড়ান্ত পর্বে প্রথম গেয়েছিলেন 'কৃষিপ্রধান দেশ', সারা দেশ বাকরুদ্ধ হয়েছিল সেই গানের তীব্র অভিঘাতে। আর সবচেয়ে গর্বিত বোধ করেছিলেন সম্ভবত কলকাতার শ্রোতা-দর্শকেরা। কারণ প্রতিভাময় এই শিল্পীর বাস কলকাতাতেই। এমটিভি-র মঞ্চে গাওয়া সেই গান ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পরে ইপিআর চেয়েছিলেন ওই গানেরই একটি মিউজিক ভিডিও তৈরি করতে। সেই ভিডিওর পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন সৌরভ দাস। সাড়া ফেলে দেওয়া সেই মিউজিক ভিডিওর মেকিং নিয়ে কথা বললেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র সঙ্গে।
Advertisment
মাসখানেক আগে ইউটিউবে এসেছে 'কৃষিপ্রধান দেশ'-এর মিউজিক ভিডিও। ভারতের মতো একটি কৃষিপ্রধান দেশে বিগত কয়েক বছরে অগুনতি কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। কীভাবে একটি উর্বর দেশে এমন একটি ঘটনা বছরের পর বছর ধরে ঘটতে থাকে এবং সরকার দায়সারা ভাবে কিছু ক্ষতিপূরণ দিয়ে ক্ষান্ত থাকতে পারে-- সেই প্রশ্ন তুলেছেন ইপিআর তাঁর গানে। পাশাপাশি বহুজাতিক সংস্থা কীভাবে এই সংকটকে বাড়িয়ে তুলছে, সেই প্রসঙ্গও এসেছে গানের কথায়।
ইপিআর আইয়ার ও জিজে স্টর্ম সেই গানেরই একটি চিত্রায়নের কথা যখন ভাবেন, তখন অভিনেতা সৌরভ দাসকেই তাঁরা পরিচালনা করতে অনুরোধ করেন। ''ইপিআর আমার অনেক দিনের বন্ধু। কুন্তল মানে জিজে স্টর্ম আর ইপিআর-- ওরা হচ্ছে অ্যাডিয়াকট। আবার আমি আর কুন্তল একটা আলাদা ব্যান্ড করার কথা ভাবছি, কথাবার্তা চলছে। তাই কাজের সূত্রে আমরা তিন জন বন্ধু হয়ে গেছি'', ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানান সৌরভ, ''ইপিআর হঠাৎ করে আমাকে বলল যে তুই কি ভিডিওটা করবি। আসলে এমনি যেভাবে র্যাপ আর্টিস্টরা করে থাকেন ভিডিও, সেটা না করে ও একটা গল্প বলতে চেয়েছিল। যেহেতু ও 'স্পেয়ার কি' দেখেছে, ওর আমার স্টোরিটেলিংটা ভাল লেগেছে তাই হয়তো আমাকে বলে ডিরেক্ট করতে, কনসেপ্ট ভাবতে।''
এর পর এক রাতে তিন বন্ধু গাড়িতে যেতে যেতে মাত্র ১৫ মিনিটেই ঠিক করেন 'কৃষিপ্রধান দেশ'-এর এই মিউজিক ভিডিওর মূল ভাবনা। তার তিনদিন পরেই ছোট্ট একটি ইউনিট বেরিয়ে পড়ে শুটিংয়ের উদ্দেশে। কলকাতার উপকণ্ঠে একটি ইঁটভাটা সংলগ্ন এলাকায় ভিডিওটি শুট করা হয় ১২ ঘণ্টায়। ''ভোর পাঁচটা দশে ফার্স্ট শটটা নিই। আর বিকেল পাঁচটা দশে শুটিং শেষ। প্রচণ্ড কম বাজেটের কাজ তো। রাত দুটোয় বেরিয়েছিলাম। পুরো বারো ঘণ্টায় শুট করি'', জানান সৌরভ।
এই সময়ের সবচেয়ে প্রতিভাময় র্যাপার ইপিআর।
ভিডিওটি গত ১৯ ডিসেম্বর এসেছে ইউটিউবে। এখন প্রায় ৬ লক্ষ ভিউ। কলকাতায় ইপিআর, জিজে স্টর্ম অথবা সৌরভের গুণমুগ্ধরা ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তো বটেই, সারা দেশ থেকেই বহু শ্রোতা ভিডিওটি শেয়ার করেছেন এবং সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে তুলেছেন। ঠিক যেভাবে ইপিআর-এর এমটিভি মঞ্চে পারফরম্যান্সটিও ভাইরাল।
বাজেট কম সত্ত্বেও অত্যন্ত ভাল মানের একটি মিউজিক ভিডিও 'একলা চলো রে'। সিনেম্যাটোগ্রাফি, দৃশ্যায়ন, সম্পাদনা এবং অভিনয় অনবদ্য। গানের মধ্যে র্যাপারের যে যন্ত্রণা রয়েছে, ভিডিওতে সেই যন্ত্রণার উপযুক্ত উপস্থাপনা করেছেন পরিচালক সৌরভ দাস। বিশেষ করে উল্লেখ্য শেষ ফ্রেমটি-- যা মনে করিয়ে দেয় ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার ঠিক পরেই তোলা রঘু রাই-এর সেই বিখ্যাত ফোটোগ্রাফের কথা। দেখে নিতে পারেন মিউজিক ভিডিওটি নীচের লিঙ্কে ক্লিক করে--
''খুব ভাল রেসপন্স পেয়েছি আমরা। রাফতার-এর মতো শিল্পী শেয়ার করেছেন, আমাকে পার্সোনালি টেক্সট করে জানিয়েছেন যে খুব ভাল লেগেছে কাজটা। সেলিম মার্চেন্ট, প্রতীক বব্বর... অনেকেই আমাদের আলাদা করে জানিয়েছেন। এর পরে আমার একটি সিঙ্গল আসছে এ বছর, সেটা ইপিআর ডিরেক্ট করবে। আর ওর নতুন যে গানটা আসছে, সেটা আবার আমি ডিরেক্ট করব, এভাবেই কাজ করছি আমরা একসঙ্গে'', জানালেন সৌরভ।