জয় শ্রীরাম স্লোগানের বিরোধীতা এবং 'শিবলিঙ্গে কন্ডোম' ইস্যুতে যখন হিন্দুত্ববাদী নেতাদের রক্তচক্ষুর শিকার হয়েছিলেন সায়নী ঘোষ (Sayani Ghosh), তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছিল এফআইআর, তখন পাশে পেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee)। বুধবার সেই ঋণস্বীকারস্বরূপ-ই সম্ভবত ঘাসফুল শিবিরে যোগ দিলেন এককালের বামপন্থী মনোভাবাপন্ন টলিউড অভিনেত্রী। বাংলার মা-বোনদের বিরুদ্ধে হওয়া অনাচার, ধর্ষণ-হুমকির বিরুদ্ধে মেট্রো চ্যানেলের প্রতিবাদী সভা থেকেই গেরুয়া শিবিরের আস্ফালন নিয়ে সরব হয়েছিলেন সায়নী। প্রতিবাদী সুর তুলেছিলেন, পদ্ম শিবির ক্ষমতায় আসার আগেই জনগণকে যেভাবে বাকরুদ্ধ করে দিতে উদ্যত হয়েছে, তার বিরুদ্ধে। সেই প্রেক্ষিতেই বুধবার হুগলির সাহাগঞ্জের সভায় যোগ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের নারীদের নিরাপত্তা সুরক্ষিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হলেন সায়নী ঘোষ। প্রতিশ্রুতি দিলেন, "আগামীদিনে বাংলার মা, বোনেদের সুরক্ষা দেখে রাখব।"
এদিন সভার মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে তোপ দেগে প্রশ্ন ছুঁড়েছিলেন, "প্রধানমন্ত্রী বলছেন, বাংলায় নাকি মা-বোনেরা সুরক্ষিত নয়! বিজেপি শাসিত রাজ্য- বিহার, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাবে সুরক্ষিত তো? সব জায়গায় অরক্ষিত, নয়তো কুরক্ষিত!" সেই সভাতেই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরে সুর মিলিয়ে বাংলার মা-বোনেদের সুরক্ষার দায়িত্ব নিলেন অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ।
উল্লেখ্য, দিন কয়েক আগেই মুকুল রায়কে জন্মদিনের শুভেচ্ছাবার্তা জানিয়ে গেরুয়া শিবিরে যোগ দেওয়ার জল্পনা সৃষ্টি করেছিলেন সায়নী। তবে, বুধবার সমস্ত জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করলেন এককালের বামপন্থী মনোভাবাপন্ন অভিনেত্রী।
সবুজ পতাকা হাতে তুলে নিয়েই সায়নী ধন্যবাদ জানালেন 'দিদি'কে। বললেন, "এত কম বয়সে সুযোগ দেওয়ার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ। আগামীদিনে বাংলার মা, বোনেদের সুরক্ষা দেখে রাখব। বাংলার সম্প্রীতি বজায় রাখব। আপনাদেরকে সঙ্গে নিয়েই আগামীতে আমরা সত্য, শিব, সুন্দর পশ্চিমবঙ্গ তৈরি করব।"
প্রসঙ্গত, সোমবারই শহরের পাঁচতারা হোটেলে প্রকাশ জাভড়েকরের আমন্ত্রণে টলিউডের 'রোল কল' সভা বসেছিল। রাজ্যের শাসকদলের একাংশের তো এমনটাই মত। মোদীর মন্ত্রীসভার সদস্যের সঙ্গে সেই বৈঠকে যেমন বাংলা ইন্ডাস্ট্রির তাবড় প্রযোজকরা হাজির ছিলেন, আবার তেমনই উপস্থিত ছিলেন প্রথম সারির তারকারাও। একুশের নির্বাচনের আগে তারকাদের সঙ্গে পদ্ম শিবিরের এই 'ভাব জমানো' বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক মহলের অন্দরে জল্পনা যখন তুঙ্গে, ঠিক তারই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'মাস্ট্রারস্ট্রোক' প্রকাশ্যে এল। রাজ্যের শাসক দলের দলনেত্রীর মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে ঘাসফুল শিবিরে যোগ দিলেন রাজ চক্রবর্তী, জুন মালিয়া, সায়নী ঘোষ, মানালি দে, কাঞ্চন মল্লিকের মতো ইন্ডাস্ট্রির একঝাঁক তারকারা। ঘাসফুল-পদ্ম শিবিরের এই হাড্ডাহাড্ডি স্ট্রার স্ট্র্যাটেজি যে একুশের ভোটে আলাদা মাত্রা আনবে, তা বলাই বাহুল্য।