/indian-express-bangla/media/member_avatars/2024-09-09t054139041z-fb.jpg )
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/03/09/QPn7g6lOsy9szh4U7nVq.jpg)
Somnath Kundu - Tollywood: মেকাপের উত্থান পতন থেকে স্ট্রাগল সব দেখেছেন, কী বলছেন তিনি? Photograph: ( ফাইল)
Somnath Kundu - Tollywood: তিনি বহু তারকাকে কী থেকে কী বানিয়ে দেন, যেন ধরতে পারাও সম্ভব না। ইন্ডাস্ট্রিতে যে কটি বাংলা ছবিতে দুর্দান্ত সব লুক ক্রিয়েট হয়, তাতে ম্যাজিক থাকে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত মেক আপ আর্টিস্ট শ্রী সোমনাথ কুণ্ডুর। একের পর এক নায়ক থেকে নায়িকা, তাঁর হাতের ছোঁয়ায় এত সুন্দর রূপ পান তাঁরা। সেই ১৯৯৬ সাল থেকে শুরু, তারপর এখন নিজের ব্যানারে কাজ করে চলেছেন তিনি।
মেকাপ আর্টিস্ট সোমনাথ কুন্ডু অপরাজিত ছবির জন্য পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। সাজসজ্জার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন অনেকগুলো বছর। তাই যখন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে তাঁর সহিত যোগাযোগ করা হল, বেশ কিছু অজানা গল্পই করলেন তিনি।
নিত্যদিনের সাজানোর যে আইডিয়া কোত্থেকে আসে?
আইডিয়াগুলো কিন্তু স্ক্রীপ্ট পড়লেই আসে। বিশেষ করে আমার নজরে রাখতে হয়, যে গল্প কী চাইছে। গল্প কি ডিমান্ড করছে, ডিরেক্টরের কী ডিমান্ড, সেটার ওপর আমার কাজ।
যদি কেউ ডিমান্ড করে সাজানোর ক্ষেত্রে, সেটা হয়তো ডিরেক্টরের পছন্দ না, তাহলে...?
না! আমি সেটা করি না। আমার সবার আগে পরিচালকের সঙ্গে মেলবন্ধন হতে হয়। আমি আমার ভাবনাটাকে দেওয়ার আগে চেষ্টা করি। এবার যদি, পরিচালক মনে করেন যে সাজটা ঠিক আছে। বা তিনি কোনও আউটপুট দেন, তাহলে নিশ্চই করব। আবার অনেক সময় এমন হয়, যে তারকা নিজেও কিছু অ্যাড করতে বলেন। সেক্ষেত্রে, যদি সবার মনে হয়, যে না ঠিক আছে, তবে তো কোনও কথায় নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গল্পের ডিমান্ড দেখা যায়। আর, আমি সৃজিত মুখোপাধ্যায় বা কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় এর সঙ্গে যখন কাজ করি, তাঁদের স্ক্রীপ্ট একটু আলাদা হয়। সঙ্গে ভাবনাটা সহজে মিলে যায়।
তবে কি তারকার কথা শোনেনই না?
না শুনব না কেন, কিন্তু কেউ যদি বলে যে এটা করো, বা ওটা করো, বা এটা না করলে হবে না.. তাহলে সেই ছবিটা আমি করবই না। কিন্তু, একটা ছোট্ট গল্প। বুম্বা দা, যার থেকে আমরা প্রতি মুহূর্তে শিখি, দাদা কিন্তু মেকাপ করতে বসেই বলে দেয়, যে তুই যেটা করবি, সেটাই ফাইনাল। কিন্তু দাদা খুব ভাল ইনপুট দিতে পারে, আইডিয়া শেয়ার করে। শেষ পাতার সময় দাদা নিজের ভাবনাটা জানিয়েছিল। আমি শুনলাম। আমি ওটা করলাম। আমিও খুব একটা স্যাটিসফাইড নয়। আর দাদার চেহারা দেখে বুঝলাম, তাঁরও খুব একটা আরাম হয়নি। তো, আমরা ভেবেছিলাম আগে করে নি আমাদের মত, তারপর না হয় অতনু ঘোষ ( পরিচালক )কে জিজ্ঞেস করে নেব। আর আমার একটা বিষয় আছে, সবসময় মাথায় ঘোরে, যেই চেহারাটা কেউ করেনি, সেরকম কিছু করব, সঙ্গে গল্পের ডিমান্ড থাকবে। দাদা তখন আয়নার দিকে এগিয়ে গেলেন, শুধু আমায় এটুকু বলেছিলেন, যে একটা ব্ল্যাক স্পট করলে মনে হয় ভাল হয়। তো, এই আইডিয়াগুলো আমরা পেয়েই থাকি।
নায়িকারাও নিজেদের ডিমান্ড রাখেন না? আপনার প্রিয় কে?
নায়িকাদের মধ্যে শুভশ্রী আছে, ওর সঙ্গে ইন্দুবালায় প্রস্থেটিক নিয়ে কাজ করছি। সোহিনী সরকারের সঙ্গে কাজ করেছি। এছাড়া দিতিপ্রিয়া আছেন, ওর সঙ্গে কাজ করেছিলাম। এদের সঙ্গে কাজ করে আমি খুব আপ্লুত। আমার হাতে সাজেননি এমন নায়িকা খুব কম আছেন। শতাব্দী রায় থেকে অনেকেই আছেন, যারা সিনেমায় কাজ করেন, তাঁদের প্রায় সকলকেই আমি সাজিয়েছি।
জিতু কমলকে যখন অ্যাটায়ারটা দিলেন সত্যজিৎ বাবুর, কী মনে হয়েছিল?
একটা ছোট্ট গল্প বলি, অনেকেই হয়তো জানেন না, যে জিতুর আগে অন্য একজন বড় অভিনেতার মিস্টার রায়ের চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল। জিতুর বোধহয়, কেবল একটা দৃশ্য ছিল, তাও উনার অল্প বয়সের, যেখানে উনি নন্দলাল বসুর সামনে বসে আঁকছেন। যার করার কথা ছিল, তাঁর ডেট নিয়ে যেমন সমস্যা হচ্ছিল, সঙ্গে উনি বলেছিলেন যে প্রস্থেটিক করার দরকার নেই। কিন্তু, আমি অনীকদার সঙ্গে কথা বলে, গল্প পড়ে বুঝেছিলাম যে উনি চাইছেন নামটা শুধু অপরাজিত রায় থাকবে, বাকি চেহারাটা থাকবে মানিকবাবুর মত। সেকারণেই অনীকদা আমায় নিয়েছিলেন। আমায় অনীক দা বলেছিলেন, যে তুমি ছাড়া এই কাজটা করব না। গুমনামি, এক যে ছিল রাজা দেখেছিলেন তিনি। তখন, সেই হিরো বলেছিল যে না করতে হবে না প্রস্থেটিক, আমি তখন এটাই বলেছিলাম, যে তাহলে তো ছবিটাও হবে না, আর আমিও করব না। তাও আমরা লুক সেট করলাম, বড়পর্দায় ফেলে দেখা হল। কিন্তু, তাঁর করা হল না।
তাঁর চলে যাওয়াই জিতুর আগমন?
কিছুটা। কারণ, অনীক দা চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। আমরা যদি তখন শুট না করতাম তাহলে কাশফুল পেতাম না, আরও একবছর পিছিয়ে যেত সবটা। সেইসময় আমি বললাম যে এত ভাবনার দরকার নেই, আমি জিতুকে তিনটি লুক সেট করে দেখছি। একটা পথের পাঁচালী যখন তৈরি হচ্ছে তখনের। আরেকটা যখন আরও কয়েকবছর বেড়ে গিয়েছে তখন। আরও একটা লুক বয়স্ক। তো, মেকাপ শেষে যখন জিতু ফ্লোরে গিয়ে দাঁড়াল, কেউ একজন ওয়াও বলে উঠেছিলেন। আর বাকিরা সবাই চুপ। আমি তখন বুঝলাম, যে যাক! ওয়ার্ক করে গেল। তারপর তো জিতু দারুণ দারুণ...
জাতীয় পুরস্কার পাবেন আশা করছিলেন?
আমি কোনোদিন পুরস্কারের লোভে কাজ করিনি। আর করবোও না। পুরস্কার যে পেয়েছি সেটা তো আনন্দের। আজ জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি, ভারতীয় সিনে দুনিয়ার এক অনন্য সম্মান। একবছরের জন্য আমি, আবার পরে একজন নিয়ে যাবে। কিন্তু জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার আগে আমি আরেকটা বড় পুরস্কার পেয়ে গিয়েছি। যেদিন অপরাজিত রিলিন করল, তাঁর আগে অনীক দা এই ছবিটা সন্দীপ রায়কে দেখিয়েছিলেন। তো, বাবু দা সেই ভাড়ি গলায় আমায় ফোন করে বললেন, যে সোমনাথ, দারুণ! আমার মনে হল আমি বাবাকে দেখলাম। প্রতিটা ফ্রেমে যেন মনে হল বাবাই আছেন। এটাই আমার সবচেয়ে বড় পুরস্কার।
ব্যক্তিগত জীবনে সোমনাথ কুন্ডু কেমন?
একজন বাবা, একজন ভাল স্বামী হওয়ার চেষ্টা করি। আর আমার মা আছেন, তাঁকে আগলে রাখার প্রবণতা আছে। ভাল মানুষ হয়ে বাঁচার, অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথানত না করে থাকার।
এমন কাউকে পেয়েছেন যিনি খুব রাগী? বা যার সহজে আপনার সাজানো পছন্দ হয় না?
দেখো, আমার সাজানো যে সবার পছন্দ হবে সেটা কিন্তু না। একটা মানুষকে যে সবার ভাল লাগবে, এটা কিন্তু হয় না। আর কোনও আর্টিস্ট যদি রাগী হন, তাহলে আমার তাঁর সঙ্গে কাজ করতে খুব ভাল লাগে। যারা বেশি খুঁতখুঁতে হয়, আমার তাদের খুব পছন্দ। মনে আছে, যখন অপরাজিত করতে গিয়েছিলাম, তখন অনেকেই বলেছিলেন যে অনীক দা খুব খুঁতখুঁতে। আমি বলেছিলাম অবশ্যই। উনিও তো জানেন যে আমি খুঁতখুঁতে। আমায় যদি কেউ না ই বলেন যে এটা ভাল লাগছে না, বা এটা পাল্টাও তাহলে নিজেকে কী করে পুষ করব? আমাকেও তো বুঝতে হবে, যে আমি পারছি কিনা...
কাজের মাঝে কোনও ঘটনা মনে আছে বর্ষীয়ান তারকাকে নিয়ে?
হ্যাঁ! আমি তো ইন্ডাস্ট্রিতে কার্ড পেয়েছি ১৯৯৬ সালে। অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিলাম। সম্ভবত কুলাঙ্গার বলে একটা ছবি। মালা সিনহা ছিলেন। মালা সিনহা খুঁতখুঁতে ছিলেন। আমার গুরু সুব্রত সিনহা তাঁর মেকাপ করতেন। তো, একদিন শকুন্তলা বড়ুয়ার মেকাপ করেছিলাম, মালা সিনহা তাঁকে ডেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে কে করেছে? আমার কথা বলেছিলেন তিনি। আমায় উনি ডাকলেন। ডেকে বললেন, যে কাল থেকে তুমি আমার মেকাপ করবে। উনি ভীষণ খুঁতখুঁতে। এই যে উনার মত একজন সুপারস্টার আমায় সেটা বললেন, এটাই তো বড় পাওয়া। পরের দিন উনিই সত্যিই চলে এসেছিলেন আমার কাছে মেকাপ করবেন বলে। কিন্তু, আমার করা হয়নি। আমার গুরু করতেন তাঁর মেকাপ। আমি অনুমতি না নিয়ে কী করে করতাম? পরে যদিও সুব্রত সিনহা আমায় বলেছিলেন, যে ভাল সুযোগ ছিল, কেন করলে না? আমি এখনও দ্বন্দ্বে আছি, যে ঠিক করেছিলাম না ভুল... ( হাসি )...
১৯৯৬ থেকে ২০২৫, মেকআপের রেভলিউশন আর স্ট্রাগল, কী বলবেন?
যারা স্ট্রাগল করে এসেছেন, তাঁরা সবসময় সেটা অনুভব করবেন। আমাদের স্ট্রাগল ছিল যে কাজ শিখব। আমার বাবা ড্রেসার ছিলেন। ড্রেসারের ছেলে কেন মেকাপ আর্টিস্ট হবে? অন্যরা কেন পাবে না সুযোগ? ড্রেসারের ছেলে ড্রেসার কেন হবে না? এই একটা স্ট্রাগল ছিল। আমার বাবা ইন্ডাস্ট্রিতে আমায় নিয়ে আসার পর কাজ ছেড়ে দিয়েছিলেন। সেটা বুঝে ওঠা একটা কঠিন রাস্তা ছিল। নিজে নিজে কাজ করার অভিজ্ঞতা, কাজ পাওয়ার একটা ইচ্ছে। আমার চেহারা দেখে কেউ মানতো না। সবাই বলেছিল, কেন চিফ হচ্ছ? কিন্তু, আমার সেই আস্থা ছিল নিজের ওপর যে পাব। অনেকেই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। সুযোগ দিয়েছিলেন লালু দা। তাঁকে আমি বলেছিলাম যে, যদি না পাড়ি আমি নিজেই কাজ ছেড়ে দেব, তোমায় বলতেও হবে না। আমি শুধু সিনেমা করে এসেছি। প্রায় ১০৪/৫ টা ছবি চলছে।
কিন্তু, পরের দিকে যখন পড়াশোনা করে, রিসার্চ করে প্রস্থেটিকটা আনার চেষ্টা করছি ইন্ডাস্ট্রিতে, তখন তারকাদের, প্রডিউসারদের আমাদের বিশ্বাস করতে একটু অসুবিধা হয় যাচ্ছিল। তাঁদেরকে বোঝানো যে প্রস্থেটিক আমরা করতে পারি, এটা কিন্তু সহজ ছিল না। অনেকদিন সময় লেগে গিয়েছিল। কাউকে ছোট করতে চাই না, আমি বড়ও হতে চাই না, কিন্তু কিছু বড় বড় হিরোরা মুম্বাই থেকে আর্টিস্ট আনাতো। ভাবত, যে একে কেন ছেড়ে দেব মুখটা, যদি কিছু করে দেয়? এই জন্য আমি কাউকে দায়ী করি না। কারণ, তাঁদের কাছে মুখ সব। সেই বিশ্বাস যোগানোর বিষয়টা একটা বড় স্ট্রাগল গিয়েছে আমার। আর এখন, বাজেটের বিষয়টাও আছে। সেটা নিয়ে স্ট্রাগল চলছেই।