লতা মঙ্গেশকরের অন্ত্যেষ্টিতে (Lata Mangeshkar’s funeral) শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে গিয়ে অযথাই কটাক্ষ-সমালোচনায় জড়িয়ে পড়েন শাহরুখ খান (Shah Rukh Khan)। শিবাজি পার্কে শায়িত কোকিলকণ্ঠীর নিথর দেহের সামনে দুই হাত জড়ো করে 'দুয়া' করছিলেন কিং খান। এরপরই মাস্ক সরিয়ে ফু দেন। ইসলামিক মতে যার অর্থ, আল্লাহর নাম নিয়ে অশুভশক্তি কিংবা কু-দৃষ্টি দূর করা। আর সেই ছবি-ভিডিও ভাইরাল হতেই নেটদুনিয়ায় শোরগোল। একপক্ষ যখন শাহরুখের এহেন রীতি পালনে সর্ব-ধর্ম সমন্বয়ে ঐক্যবদ্ধ ভারতবর্ষকে দেখতে পেয়েছেন, তখন উগ্রহিন্দুত্ববাদীরা প্রশ্ন তুলেছেন, "লতার মরদেহে মাস্ক সরিয়ে থুতু ছেটাননি তো শাহরুখ?" আবারও হিন্দু-মুসলিম বিভাজন নীতির নিশান উড়িয়ে গোটা দেশে রে-রে রব!
প্রসঙ্গত, বলিউড কোনদিনই হিন্দু-মুসলিম বিভাজননীতিতে সায় দেয়নি। ধর্মের থেকে সেখানে মানুষ কিংবা শিল্পই শেষ কথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই তো দেশের যে কোনও বিপদে যেমন সলমন মোটা অঙ্কের অনুদান দিয়ে পাশে দাঁড়ান, তেমনই শাহরুখও মুম্বই ছাড়িয়ে প্রতিবেশী রাজ্যের দুর্দিনে দুঃস্থদের মুখে ভাত তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। অতিমারীর সময়ও সেই দৃশ্য দেখেছে গোটা দেশ। তবে উগ্র হিন্দুত্ববাদ সবসময়ই আলোচনার বিষয়বস্ত করে তুলেছে তাঁদের 'পদবী'।
রবিবার লতার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আগে যখন বলিউড তারকারা জড়ো হয়েছিলেন, সেখানে উপস্থিত ছিলেন রণবীর কাপুর, আমির খান, শাহরুখ খানরা। তবে শাহরুখ ও তাঁর ম্যানেজার পূজা দাদলানির ছবি নিয়ে এত চর্চার কারণ একটাই কোকিলকণ্ঠীর আত্মার শান্তি কামনা করে দুই ভিনধর্মী মানুষের ভিন্ন প্রণামের ধরণ। একদিকে শাহরুখ যখন সাদা পোশাকে দু'হাতে দুয়া করছেন, তখন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পূজা করজোরে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনারত। আর সেই ফ্রেমই আলোড়ন তুলে দিয়েছে গোটা ভারতে।
এক ফ্রেমে দুই ভিন ধর্মী মানুষের দুয়া-প্রণাম ভঙ্গি মিলেমিশে একাকার। অনেকটা লতার গাওয়া- "আল্লাহ্ তেরো নাম, ঈশ্বর তেরো নাম…" গানের কথাই বলে যেন এই ছবি। শেষযাত্রাতেও এভাবেই একসূত্রে বেঁধে গিয়েছেন 'লতা তাই'। ঠিক যেভাবে সুরের মূর্ছনায় বেঁধে রেখেছিলেন গোটা দেশকে। লতার গানের শব্দেই বহুবার সেক্যুলার ভারতের উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে। এদিন শিবাজি পার্কেও শাহরুখ-পূজার ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা গিয়েছে ধর্মনিরপক্ষ ভারতের একটুকরো দৃশ্য। কিন্তু হিন্দুত্ববাদীদের চোখে পড়ে, মাস্ক খুলে শাহরুখের ফু ওড়ানোর দৃশ্য। যা দেখে বিজেপি নেতা অরুণ যাদব দাবি করে বসেন, "কিং খান কি আসলে লতার মরদেহে থুতু ছেটালেন?" এরপরই তোলপাড় নেটদুনিয়া।
<আরও পড়ুন: ‘লতাজির মরদেহ দেখতে পারতাম না, তাই যাইনি’, স্মৃতি আঁকড়ে বলছেন ধর্মেন্দ্র>
তবে অনুরাগীরা শাহরুখের পাশেই রয়েছেন। সমর্থন করেছেন উর্মিলা মাতণ্ডকর, শিল্পা রাওয়ের মতো তারকারাও। ইসলাম ধর্মে কেন দুয়া করার পর ফু দেওয়া হয়, সেই ব্যাখ্যাতেও ভরে উঠেছে নেটদুনিয়া। সেই সঙ্গে ভাইরাল শাহরুখের একটি পুরনো ভিডিও। যেখানে স্কুলে পড়াকালীন 'আমার দেশ' প্রবন্ধ লেখার স্মৃতিচারণ করে তাঁকে বলতে শোনা যায়- "আমার পরিবার ভারতের জন্য লড়েছে। মাতৃভূমির পুজো করা মানে এটা কখনও বলা উচিত নয় যে, এটা আমাদের ভারত। বলা উচিত, আমরা আমাদের দেশের জন্য কী করতে পারি। যাঁরাই দেশদ্রোহী কিংবা সমাজবিরোধী শব্দগুলো প্রয়োগ করে, তাঁরা কখনও এদেশের অংশই ছিলেন না। খারাপ লাগে, আমার পরিবার এই দেশের জন্য লড়েছে।"
পাশাপাশি তিনি এও যোগ করেন যে, "বাবা আমাকে শিখিয়েছেন, তোমাকে যেরকম পাঠ দিয়েছি, এই দেশকে এভাবেই স্বাধীন রাখো। যখনই এসব সমালোচনা দেখি, পড়ি-শুনি, তখন আরও কষ্ট পাই এই ভেবে যে, আমার বাবার দেওয়া পাঠ কি তাহলে দূরে সরে গেল?"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন