Dhadak 2 Review: অল্প কয়েকজন মানুষের দল, যেন তারা বাস্তবের বাইরে দাঁড়িয়ে এক ভয়ঙ্কর কল্পনার জগতে ঢুকে পড়েছে। আলোচনা চলছে নরখাদকের মতো এক নৃশংস ঘটনায়, আর কেউ বলছে— "যদি দলিত হত, তাহলে বেঁচে যেত"। লাইনটি গা শিউরে দেওয়ার মতো হলেও, 'ধড়ক ২'-এর চলমান গতির ভিড়ে এটি হারিয়ে যায়। অথচ, একক এই সংলাপে ভারতীয় সমাজে দলিতদের প্রতি শতাব্দীব্যাপী নিপীড়নের চাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
শাজিয়া ইকবালের 'ধড়ক ২', ২০১৮ সালের ঈশান খট্টর-জাহ্নবী কাপুরের ধড়কের একটি "আধ্যাত্মিক সিক্যুয়েল"। কিন্তু এটিও মূল উৎস 'সাইরাত' -এর মতো আবেগের উচ্চতায় পৌঁছাতে গিয়ে মাঝপথে থেমে গিয়েছে। সিনেমার অনেক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত উপস্থাপন করা হয়, কিন্তু তারা যেন যথাযথ প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে।
চিত্রনাট্য এগোয় এমন এক শহরে, যা দেখতে ভোপালের মতো কিন্তু নামহীন। একটি আইন কলেজ যেখানে দুই ছাত্র-ছাত্রী, নীলেশ (সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী) ও বিধি (তৃপ্তি ডিম্রি), একই ক্লাসে পড়লেও, তাদের মধ্যে সামাজিক ব্যবধান স্পষ্ট। নীলেশ দলিত, বিধি উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণ। বিধি এমনকি নীলেশের পদবিও উচ্চারণ করতে সংকোচ বোধ করে। সিনেমা এখানে সরাসরি সামাজিক ভেদরেখায় আঘাত হানে।
ছবিটি কুৎসিত বাস্তবকে দেখিয়েছে। নর্দমা পরিষ্কার করা, জাতির ভিত্তিতে অপমান, এবং একের পর এক লাঞ্ছনার দৃশ্য। তবুও ক্যামেরা মাঝে মাঝে মূল চরিত্র থেকে সরে গিয়ে পরিস্থিতির তীব্রতাকে হালকা করেছে। যেখানে 'পরিয়েরুম পেরুমল' গভীরভাবে বাস্তব চরিত্রদের সঙ্গে সংযুক্ত করে, সেখানে 'ধড়ক ২'-এ চরিত্রদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে। ভালবাসার দৃশ্য গুলিও যেন সত্যিকারের আবেগ ধরতে পারল না, শুধু অভিনয় হয়েই থেকে গেল। তৃপ্তি ডিম্রির অভিনয়ে কিছু মুহূর্ত জীবন্ত ছিল, যদিও আবেগের গাঢ়তা বেশিরভাগ সময়েই কৃত্রিম লেগেছে।
চরিত্রগুলোর মধ্য দিয়ে পরিচালক স্পষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছেন—নীলেশের মা (অনুভা ফতেপুরা), প্রিন্সিপাল (জাকির হুসেন), এমনকি তার বাবা (বিপিন শর্মা), যিনি একজন ক্রস-ড্রেসার শিল্পী, সকলেই এক সামাজিক অন্যায়ের প্রতিনিধিত্ব করছেন। নীলেশ নিজে ধীরে ধীরে প্রতিবাদী কণ্ঠ হয়ে ওঠে। ছবির ভেতর বারবার উঠে আসে দলিত নিপীড়ন, নারীবাদ, শ্রেণী বৈষম্য, যৌন পরিচয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। একজন ছাত্রের আত্মহত্যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় রোহিত ভেমুলার ঘটনা। আবার যখন বিধির কাকা 'শিক্ষিত মেয়েদে'র বিপদ নিয়ে কথা বলেন, তা এক বহুল প্রচলিত মানসিকতাকে সামনে নিয়ে আসে।
তবে, শেষ পর্যন্ত, 'ধড়ক ২' সেই গভীরতাটুকু ছুঁতে পারে নি, যা এর থিম দাবী করেছিল। 'সাইরাত'-এর মতো শক্তিশালী ও সাহসী না হলেও, এটি 'ধড়ক' থেকে অনেকটাই এগিয়ে। এটি এমন একটি ফিল্ম যা আমাদের দেখতে বাধ্য করে, প্রশ্ন তোলে, কিন্তু পুরোপুরি কাঁপিয়ে দিতে পারে নি। তবুও, যখন সিনেমাটি থমাস জেফারসনের সেই প্রাসঙ্গিক উক্তি দিয়ে শুরু হয়- "যখন অন্যায়, আইন হয়ে ওঠে, তখন প্রতিরোধ কর্তব্য হয়ে ওঠে"- তখন এটিকে উপেক্ষা করার জো নেই।
- ছবির নামঃ ধড়ক ২
- অভিনয়েঃ সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী, তৃপ্তি ডিমরি, অনুভা ফতেপুরা, বিপিন শর্মা, অন্যান্য।
- পরিচালকঃ শাজিয়া ইকবাল
- রেটিংঃ ২.৫/৫