'শ্বেতপদ্মাসনা.. শ্বেত পুষ্পশোভিতা.. শ্বেতামম্ভরধরা নিত্যা শ্বেতাগন্ধানুলেপনা…' পুজোর মন্ত্রেই সরস্বতীর বর্ণনা। হয় হলুদ-বাসন্তীর সমাহার নয়তো সাদায় সাজানো মূর্তি। তবে সরস্বতী পুজো নিয়ে প্রচলিত এই ধারণাকে ভেঙে চুরমার করে দিলেন শিলাজিৎ। গায়কের কথায়, কোনও শ্যামলা-কালো মেয়েও বাগদেবীর মতো গুণসম্পন্না হতে পারে। তাই তো বীরভূমের এক প্রত্যন্ত গ্রামে সাঁওতাল রমণী-রূপী সরস্বতীর পুজো করে তাক লাগিয়ে দিলেন শিলাজিৎ।
বোলপুর থেকে গড়পড়তা প্রায় ২০ কিলোমিটার ভিতরে গেলে গড়গড়িয়া গ্রাম। পাশেই বনক্ষতিপুর গ্রাম। সেই গ্রামেই এক গানের স্কুল খুলে ফেলেছন শিলাজিৎ। নাম তার 'নৌকা গড়গড়িয়া'। মাসের প্রায় অর্ধেক দিনই সেখানে থাকেন। আর সেই গানের স্কুলের ছাত্রছাত্রী বলতে গ্রামের ছেলেমেয়েরা। বিনামূল্যেই সেখানে গান শেখানো হয় কচিকাচাদের। সেখানেই শিলাজিতের উদ্যোগে বাগদেবীর আরাধনায় মেতে উঠল ছাত্রছাত্রী। মণ্ডপও সাজিয়েছে বনক্ষতিপুর গ্রামের ছেলেমেয়েরাই। রংবেরঙের কাগজ কেটে তাতে সুন্দর নকশা করে সাজানো হয়েছে। সব কাজ করেছে সেই কচিকাচারাই।
<আরও পড়ুন: উস্কোখুস্কো চুল, জোরালো দৃষ্টি… সন্ন্যাসী বেশে অনন্য ‘বাঘা যতীন’ দেব>
তবে তাক লাগালো দেবীর মূর্তি। শিলাজিতের স্কুলের সরস্বতী ঠাকুর যেন পুরোপুরি সাঁওতাল রমণী। মূর্তির রং শ্যমলা। সেজেছেন সাঁওতালি ধাঁচের রূপোলি গয়নায়। মাথায় বাঁধা বান্দানা। কাঁধ গড়িয়ে ধুলছে লম্বা বিনুনী। কানের পাশে গোঁজা ফুল। দেবী এখানে শাড়ি পরিহিতা নন। পরনে তাঁর ধূসর, কালো রঙের পোশাক। গায়ে সুতির কাপড়ের ওড়না। এই মূর্তির রয়েছে আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। ইনি বাঁ হাতি বাগদেবী। শিলাজিতের স্কুলের জন্য এই বিশেষ মূর্তি বানিয়েছেন বিবেক দাস। রংবেরঙের ফুলের মাঝে অধিষ্ঠিতা দেবী। প্রসাদও অভিনব। সবার হাতে হাতে দেওয়া হচ্ছে তালমিছরি।
কিন্তু এহেন প্রতিমার কথা ভাবলেন কেন শিলাজিৎ? তাঁর কথায়, দেবীপ্রতিমা মানেই ধবধবে ফর্সা, এমনটা নয়। শ্যামবর্ণা মেয়ের মধ্যেও সরস্বতীর গুণ থাকতে পারে। সাঁওতাল রমণী-রূপী এমন সরস্বতী মূর্তি পুজো করে বর্ণবৈষম্যের বার্তা দিলেন শিলাজিৎ। স্কুলের ফেসবুক পেজ থেকে পুজোর ভিডিও শেয়ারও করা হয়েছে।