গায়ক হওয়ার পাশাপাশি একজন সফল লেখকও তিনি। কণ্ঠ ছাড়ার পাশাপাশি কলম কিন্তু থামাননি অনুপম রায়। তাঁর শ্রোতাভক্তের সংখ্যা যেমন অগণিত, তেমনই অনুপমের লেখনীতে মুগ্ধ পাঠকের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। অনেকেই হয়তো জানেন না, গায়ক হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার অনেক আগেই লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ফেলেছিলেন অনুপম রায়।
২০১১ সালে প্রথম বই বের করার এক দশক বাদেও তাঁর লেখনী নিয়ে পাঠকদের উন্মাদনা আজও বিন্দুমাত্র কমেনি। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে। বাইশের বইমেলায় 'ম্যাকি'র সাফল্যই তা বলে দেয়। মনুষ্যজাতির আবেগ-ইমোশনকে বিঁধে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের জবানীতে অনুপম যে লেখনী বের করেছেন, তা নিয়ে কিন্তু পাঠকদের উন্মাদনা তুঙ্গে। বাস্তবকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে অনুপমের 'ম্যাকি'।
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত গায়কের লেখা বইয়ের সংখ্যাও গত এক দশকে বেড়ে আটে দাঁড়িয়েছে। 'আমাদের বেঁচে থাকা', 'সময়ের বাইরে', 'নিজের শব্দে কাজ করো', 'অনুপম কথা', 'মন ও মেজাজ', 'ছোঁয়াচে কলম', 'অ্যান্টনি ও চন্দ্রবিন্দু'র তালিকায় নয়া সংযোজন 'ম্যাকি'।
লেখক হিসেবে প্রথম আত্মপ্রকাশ কবিতার বই দিয়ে। ২০১১ সালে। অনুপম বলছেন, "সেদিন থেকে আজ অবধি খুবই ভাল রেসপন্স পেয়েছি। কবিতা, গদ্যর বইয়ের রেসপন্স যদিও আলাদা হয়। তবে সবমিলিয়েই আমার গাড়ি চলছে। এবার 'ম্যাকি'র রেসপন্সও দারুণ। বইমেলায় প্রচুর লোকে কিনেওছে।"
"প্রায় ১ বছর ধরে ডাকবাংলায় লেখা কলমগুলোই বইয়ের আকারে বের করা হয়েছে। সাবস্ক্রিপশন ছিল না বলে অনেকেই পড়তে পারতেন না। তবে পাঠকের কাছে আমার এই লেখা পৌঁছে দেওয়ার ভাবনা থেকেই 'ম্যাকি'র বই হিসেবে আত্মপ্রকাশের ভাবনা। প্রচুর মানুষ ভালবেসে কিনেছে এবং প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন পড়ে। আমার তো বেশ লাগছে", বললেন গায়ক-লেখক।
কীভাবে লেখক হয়ে ওঠা গায়ক অনুপমের? প্রশ্নে তাঁর জবাব, "আমার গান গাওয়ার বহু আগে থেকেই লেখালেখি করার অভ্যেস রয়েছে। লিটল ম্যাগাজিনেও আমার লেখা বেরিয়েছে। এবং আমার প্রথম গান রিলিজ করার আগেই 'কৌরব' বলে একটা ম্যাগাজিনে লেখনী বেরিয়েছিল। সেটা ছিল একটা মুক্ত গদ্য। তাই গানের পাশাপাশি সমান্তরালভাবে লেখালেখিও জারি রেখেছি। যদিও বর্তমানে আমি খুব একটা সময় পাই না।"
'ম্যাকি' প্রসঙ্গে অনুপম বললেন, "এই বইটার মূল বিষয়টাই হল আর্টিফেশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বনাম হিউম্যানিটি। আমার ব্যক্তিগত ম্যাকবুক থেকেই আসলে 'ম্যাকি'র ভাবনা। ওই যন্ত্রের জবানিতেই লেখা। যেন ওই-ই মানুষের সঙ্গে কথা বলছে। দিন যত যাচ্ছে আর্টিফেশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আরও শক্তিশালী হচ্ছে এবং ক্রমেই তারা মানুষকে নিজের দাস বানিয়ে ফেলবে। যেন আগামী দিনে যন্ত্রই মনুষ্য সাম্রাজ্যের ওপর আধিপত্য বিস্তার করবে, সেটাই ম্যাকির বক্তব্য। শুধু তাই নয়, মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, স্বভাব-অনুভূতির সমালোচনা করছে আর্টিফেশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। কারণ ওরা মনে করে, পৃথিবীর আরও অনেক বড় শত্রু রয়েছে। রাগ-দুঃখ, অভিমান… এসব নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না। যেহেতু মনুষ্যজাতি এগুলো নিয়ে বেশি মাথা ঘামায়, সেই ফায়দা লুটেই যন্ত্ররা একদিন মানুষকে নিজের দাস বানিয়ে ফেলবে।"
'ম্যাকি' নিয়ে যখন অনুরাগীদের উন্মাদনা তুঙ্গে, তার মাঝেই অনুরাগীদের নতুন গান উপহার দিলেন অনুপম- 'জিন্দেগি ওয়ান্স মোর'। এই গান যেন সমস্ত প্রতিকূলতা, হতাশা-অবসাদ কাটিয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার 'ওষুধ'। গানের কথাতেও ব্যক্তিগত জীবনের ছোঁয়া রয়েছে বলে জানালেন অনুপম। 'জিন্দেগি ওয়ান্স মোর' টাইটেলেই গানের মূল মন্ত্র- জীবন আবারও নতুন করে শুরু হতে পারে।
ছবি সৌজন্যে: রণ
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন