চার দিনে ৪১টি সিনেমা। মধ্য জানুয়ারিতে শহর কলকাতায় ফের চলচ্চিত্র উৎসব। এ উৎসবে কোনও টিকিট নেই, নেই কোনও ডেলিগেট পাসের ব্যাপার। এ হল জনতার চলচ্চিত্র উৎসব।
২০১৩ সাল থেকে প্রতি বছর 'পিপলস ফিল্ম কালেক্টিভ' নামের সংগঠন এই সিনেমা উৎসবের আয়োজন করে আসছে। স্পনসরশিপহীন এই উৎসবের অর্থ আসে উৎসাহী মানুষজনের দেওয়া চাঁদা ও অন্যান্য অর্থসাহায্য থেকে। সে জন্যই ওঁরা একে বলেন জনগণের সহযোগিতায় জনগণের সিনেমা।
এবারের এই ফেস্টিভ্যালে দেখানো হচ্ছে ভারত তথা দক্ষিণ-এশিয়ার সাম্প্রতিকতম ৪১টি তথ্যচিত্র, স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি, এবং অন্য ধারার কাহিনীচিত্র।
জেএনইউ-এর হারিয়ে যাওয়া ছাত্রের মা নিজেও উপস্থিত থাকবেন আম্মি ছবির প্রদর্শন উপলক্ষে
এবারের উৎসবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ছবি সুনীল কুমার নির্দেশিত "আম্মি"। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের হারিয়ে যাওয়া ছাত্র নাজিব আহমেদের মায়ের ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই এ ছবির উপজীব্য। এ ছবির প্রদর্শন উপলক্ষে ছবির পরিচালক তো থাকছেনই, থাকছেন স্বয়ং নাজিবের মা-ও।
উৎসবে দেখানো হবে রোহিঙ্গা ড্রিমস
থাকছে রোহিত ভেমুলাকে নিয়ে নির্মিত ছবি ‘উই হ্যাভ নট কাম হিয়ার টু ডাই’। বিশিষ্ট তথ্যচিত্রনির্মাতা দীপা ধনরাজ এ ছবির পরিচালক।
কাহিনীচিত্রের মধ্যে থাকছে অনামিকা হাকসারের তৈরি ‘ঘোড়ে কো জলেবি খিলানে লে যা রিয়া হু’ এবং পবন শ্রীবাস্তবের 'লাইফ অফ অ্যান আউটকাস্ট' সহ একাধিক সাড়া জাগানো ছবি।
মেমোয়ার্স অফ সারা অ্যান্ড সালিম-এর একটি স্থিরচিত্র
এবারের উৎসবের উদ্বোধনী ছবিটি জার্মান পরিচালকের। শকোফে কামিজের তৈরি 'আফটার সাবিন' চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনীর মাধ্যমে শুরু হবে ষষ্ঠ জনতার চলচ্চিত্র উৎসব।
পাঞ্জাবের দলিত কৃষিমজদুর জীবনসংগ্রাম নিয়ে তৈরি ছবি "ল্যান্ডলেস"। এ ছবির পরিচালক রণদীপ সিং নিজেও ওই দলিত কৃষিমজদুরই ছিলেন। সেখান থেকে প্রায় স্বশিক্ষিত হয়েছেন সিনেমার ভাষায়, শিখেছেন সিনেমাটোগ্রাফি।
এখন, এই সময়ে যে রাজ্য প্রায় প্রতিদিনের খবরের বিষয়, তার অতীত ও সম্ভাব্য ভবিষ্যতের শঙ্কার জন্য- সেই আসামের ছবি 'টেলস ফ্রম আওয়ার চাইল্ডহুড'। এ ছবির পরুিচাল মুকুল হালই নেহাৎই তরুণ। তাঁর নিজের বেড়ে ওঠা সময়, ৮ ও ৯-এর দশকের গল্প তিনি বলছেন সমসময়ে দাঁড়িয়ে। উদ্যোক্তারা মনে করছেন, এ ছবি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে দর্শকের কাছে।
কস্তুরী বসু, এ সিনেমা উৎসবের অন্যতম উদ্যোক্তা বলছিলেন স্বপ্নের কথা। উৎসব ঘিরে। না, উৎসবকে বিশালকায় প্রেক্ষাগৃহতে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেন না তিনি। তাঁরা চাইছেন, এ ধরনের উৎসব আরও হোক। "আমরাই উৎসব আয়োজন করব, এরকম না হতেই পারে। অন্যরা, রাজ্যের অন্যত্র এই মডেলটাকে মাথায় রেখে যদি এ ধরনের আয়োজন করেন, তাহলে খুব ভাল হয়।" তাঁদের মডেল ধারণা অর্থনীতি বিষয়ক। "বলতে চাইছি, টাকার জন্য কারও কাছে টিকি না বেঁধে নিজেদের মত করে ছবির উৎসব হোক। কী কী ছবি নিয়ে উৎসব হবে, তা স্থির করুক উদ্যোক্তাদের রাজনৈতিক চেতনা।"
তাঁদের আশা, ১৭ থেকে ২০ জানুয়ারি, প্রতিদিনই যোগেশ মাইম অ্যাকাডেমিতে সকাল ১০টার মধ্যে সিনেমা উৎসাহীরা নানা রকম সমস্যা কাটিয়ে উঠে, ঝামেলা উৎরে, ঠিক পৌঁছে যাবেন। রাত ৯ টা পর্যন্ত থেকেও যাবেন অনেকেই।