আর মাত্র কয়েকঘণ্টার অপেক্ষা। ১ এপ্রিল রাজ্যের ৩০টি আসনে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনী (West Bengal Assembly Election 2021) প্রতিযোগীতা। রাত পোহালেই নির্বাচন। সংশ্লিষ্ট দফায় একদিকে যেমন ‘হাইভোল্টেজ সেন্টার’ নন্দীগ্রাম রয়েছে, অন্যদিকে রয়েছে সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্র বাঁকুড়ার মতো বিজেপি-গড়, আবার চণ্ডীপুর বিধানসভা কেন্দ্রও। যেখান থেকে কিনা এবার তৃণমূলের তুরুপের তাস তারকা প্রার্থী সোহম চক্রবর্তী। অতঃপর এপ্রিলের পয়লা তারিখেই ভোটবাক্সে তৃমমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) পাশাপাশি সোহমেরও ভাগ্যগণনার লড়াই। সেই প্রেক্ষিতে হলফনামায় সম্পত্তির বিষয়-আশয় যাবতীয় তথ্য দাখিল করলেন তিনি। সেখানেই জানা গেল, তৃণমূলের তারকা প্রার্থী সোহম চক্রবর্তীর (Soham Chakraborty) ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা দেনা রয়েছে ব্যাঙ্কে।
২০১৬ সালেও সোহম চক্রবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন বাঁকুড়ার বড়জোড়া কেন্দ্র থেকে। সামান্য ব্যবধানে পরাজিত হন। তবে এবার পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুর (Chandipur) কেন্দ্রের তৃণমূল সুপ্রিমোর ভরসার পাত্র সোহম। প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পর দিন থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ভোটপ্রচারের ময়দানে। গত বিধানসভা নির্বাচনের পরাজয়ে তাঁর স্পিরিট কিন্তু বিন্দুমাত্র দমেনি! একুশের নির্বাচনের জন্য এবার ফের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন যুব তৃণমূলের সহ-সভাপতি। নির্বাচন কমিশনের কাছে ইতিমধ্যেই হলফনামা দিয়ে সম্পত্তির পরিমাণ জানিয়েছেন।
হলফনামায় তিনি জানিয়েছেন, ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে তাঁর উপার্জনের পরিমাণ ৫২ লক্ষ ৬৭ হাজার ১৫০ টাকা। তার আগের বছর এই পরিমাণ ছিল ৬৮ লক্ষ ৭ হাজার ৭০ টাকা। সোহমের স্ত্রী তনয়ার ক্ষেত্রে এই আর্থিকবর্ষে উপার্জনের পরিমাণ ২ লক্ষ ৩৯ হাজার ১৫০ টাকা।
হাতে নগদ দেড় লক্ষ টাকা আছে বলে জানিয়েছেন সোহম। পাশাপাশি তাঁর স্ত্রীর হাতে আছে ৫০ হাজার টাকা। এইচডিএফসি ব্যাঙ্কে সোহমের নামে আছে ৩ লক্ষ ৬৯ হাজার ৩৫৮ টাকা। অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কে আছে ২ লক্ষ ৪ হাজার ৭৫২ টাকা। পাশাপাশি, ইলাহাবাদ ব্যাঙ্কে ৪৫ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা, এসবিআই-তে ১০ হাজার টাকা, এইচডিএফসি-র একটি কারেন্ট অ্যাকাউন্টে ৫ লক্ষ ৯৪ হাজার ৪৯৫ টাকা এবং আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের একটি কারেন্ট অ্যাকাউন্টে ২ লক্ষ ৬২ হাজার ২০২ টাকা সোহমের দাখিল করা নগদ সম্পত্তির মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
তিনটি গাড়ি রয়েছে সোহমের নামে। ৩ লক্ষ ৪১ হাজার টাকা মূল্যের শেভ্রোলে অ্যাভিও, ৮৫ লক্ষ টাকা মূল্যের রেঞ্জ রোভার এবং ১১ লক্ষ ২০ হাজার ১০০ টাকার মাহিন্দ্রা স্করপিয়োর মালিক তিনি। সোহমের কাছে থাকা ৫২ গ্রাম সোনার গয়নার মূল্য ২ লক্ষ ৩৮ হাজার ৭৩২ টাকা। স্ত্রী তনয়ার কাছে যে অলঙ্কার আছে, তার পরিমাণ ২৫৭ গ্রাম। মোট মূল্য, ১১ লক্ষ ৭৯ হাজার ৮৮৭ টাকা। গাড়ি, গয়না এবং গচ্ছিত অর্থ মিলিয়ে সোহমের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১ কোটি ৮১ লক্ষ ৪৬ হাজার ৯৬ টাকার।
দু’টি অ্যাপার্টমেন্টের মালিক সোহম। তার মধ্যে জোকার জেনেক্স ভ্যালির ফ্ল্যাটের আয়তন ৮০০ বর্গফুট। কবিগুরু সরণিতে দ্বিতীয় ফ্ল্যাটের আয়তন ২৬০০ বর্গফুট। এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক থেকে তিনি ২৮,৬০,১২৬ টাকার গাড়িঋণ এবং অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক থেকে ১,৪২,২২,৭৯৫ টাকার গৃহঋণ নিয়েছেন বলে হলফনামায় জানিয়েছেন সোহম। উপার্জনের উৎস হিসেবে নিজেকে পেশাদার অভিনেতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য শাখায় স্নাতক সোহম।
প্রসঙ্গত, তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন নয় নয় করে ৭ বছর পার হয়ে গেল। রাজনীতির পাশাপাশি টলিউডেও চুটিয়ে ছবি করছেন সোহম চক্রবর্তী। রাজ্য-রাজনীতিতে দলবদলের হাওয়ায় তিনি কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একনিষ্ঠ সৈনিক হিসেবে পাশেই রয়ে গিয়েছেন। উপরন্তু দলীয় কাজে বিশেষ সক্রিয় থাকায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরও অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ তিনি। তাই গেরুয়া শিবিরে নাম লেখানোর পর শুভেন্দু অধিকারী যখন তৃণমূল সুপ্রিমো এবং ভাইপো অভিষেককে নিয়ে কুরুচুকর মন্তব্য করেছিলেন, যুব তৃণমূলের সহ-সভাপতি তথা অভিনেতা সোহম কিন্তু ছেড়ে কথা বলেননি। পাল্টা গেরুয়া শিবিরের শুভেন্দুকে 'কুলাঙ্গার সন্তান' বলে আখ্যা দিয়েছেন।