ঘড়িতে তখন রাত সাড়ে দশটা। সারাদিন 'বাবা বেবি ও'র প্রোমোশন সেরে শীতের রাতে ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফিরেছেন মাত্র। ব্যাগ হাতড়ে বাড়ির চাবি খুঁজতে গিয়ে বেগ পেতে হল! এরমাঝেই ফোন তুলে যিশু সেনগুপ্তর সঙ্গে অনস্ক্রিন রোম্যান্সের গল্প শোনালেন শোলাঙ্কি রায়। বড়পর্দায় ডেবিউ ছবি, এত কান্তিতেও গলায় একরাশ উচ্ছাস ঝরে পড়ল অভিনেত্রীর। কী বললেন? লিখছেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ
টেলিভিশন থেকে বড়পর্দা। পা রাখতে না রাখতেই উইন্ডোজ-এর ছবির মূল চরিত্রে! কী বলবেন?
আমি ভীষণ এক্সাইটেড! মুখিয়ে আছি রিলিজের জন্য।
তাও আবার যিশু সেনগুপ্তর বিপরীতে। অভিজ্ঞতা কেমন?
যিশু সেনগুপ্ত প্রথম থেকেই আমার ক্রাশ। আর সেই ক্রাশের সঙ্গেই প্রথম ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ নিঃসন্দেহে বড় পাওনা। প্রথম যখন জানতে পারি যে, যিশুদার বিপরীতে অভিনয় করছি, তখন গোড়ার দিকে একটু ভয়ও কাজ করছিল। কারণ, ওঁকে আমি ব্যক্তিগত স্তরে চিনতামও না। উনি মানুষটা কেমন, ওঁর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাটা কী হবে না হবে… সেরকম বেশ কিছু প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল বটে! কিন্তু শুটের সময় বুঝতে পারলাম যে, উনি দারুণ একজন মানুষ। তাই যিশুদার বিপরীতে কাজের অভিজ্ঞতা দারুণ বলতে পারো।
যিশু সেনগুপ্ত, যিনি কঙ্গনা রানাউত, রানি মুখোপাধ্যায় থেকে বিদ্যা বালনের মতো বলিউডের প্রথম সারির অভিনেত্রীর বিপরীতে কাজ করেছেন, তার সঙ্গে পর্দায় প্রেম করার অভিজ্ঞতা কেমন?
যিশুদা শুধুমাত্র ভাল অভিনেতাই নন। ভীষণ চার্মিং একজন মানুষও। আমার জন্য ভীষণ বড় একটা সুযোগ ওঁর বিপরীতে কাস্টিং হওয়াটা। তাই শুধু 'ভাল লাগল' শব্দটা বোধহয় এক্ষেত্রে খাটে না! বলব দারুণ লাগল। আর ওঁর সঙ্গে আমার যে রসায়ন, সেটা সিনেমার ট্রেলার হোক কিংবা গান, দেখে সবাই ইতিমধ্যেই ভীষণ প্রশংসা করেছেন। আশা করি, পর্দাতেও সেটা দর্শক উপভোগ করবেন।
যিশু সেনগুপ্ত এখন বলিউড, দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতেও দাপিয়ে কাজ করছেন। কোনও টিপস পেলেন?
প্রচুর সাহায্য পেয়েছি। যেহেতু এটা আমার প্রথম ছবি, আর যিশুদার মতো একজন অভিজ্ঞ মানুষ, ওঁর কাছ থেকে বহু খুঁটিনাটি জিনিস শিখেছি। অনেক দৃশ্য নিয়েই যিশুদা আর আমার মধ্যে সেটে আলোচনা হত। তখন অনেক ক্ষেত্রেই উনি পরামর্শ দিয়েছেন যে, কোনটা করলে বিষয়টা সহজ হবে। এমনকী কাস্টিংয়ে পাশাপাশি আরও যাঁরা ছিলেন এবং ক্রিউ মেম্বারদের থেকেও অনেক জিনিস শিখেছি। টিমে আমিই একমাত্র নতুন ছিলাম। বাকি প্রত্যেকেই ইন্ডাস্ট্রিতে ভীষণ এক্সপেরিয়েন্সড। আমি অনেক কিছুই জানতাম না। প্রতি মুহূর্তে সবার কাছ থেকে ভীষণ সাহায্য পেয়েছি।
সারোগেটেড সিঙ্গল ফাদারের পাশাপাশি কি এই ছবি অসম বয়সি প্রেমের কথা বলে?
একদমই তাই। এটা আদ্যোপান্ত রোম্যান্টিক কমেডি ছবি। অসমবয়সি প্রেমেরই ছবি। সিনেমার গল্পে ঘটনাচক্রে যিশুদার চরিত্রটা একজন সিঙ্গল ফাদারের, তার সঙ্গে আমার চরিত্রটির সম্পর্ক কত দূর গড়ায়? সেই গল্পই বলবে 'বাবা বেবি ও'।
সিনেমায় দুজন বাচ্চাও রয়েছে। ওদের কীভাবে সামলানো হত সেটে?
গোটা উইন্ডোজ মিলে বাচ্চাদের সামলেছে। বাচ্চা দুটো এত কোঅপারেটিভ যে কিছু ক্ষেত্রে বোধহয় ওরা আমাদের থেকেও ভাল শট দিয়েছে। খুব ক্যামেরা সচেতন ওরা। আমি ভাবতেই পারিনি যে, অত ছোট ছোট বাচ্চা, তারা কী সুন্দরভাবে ক্যামেরা নিতে জানে। ক্যামেরা দেখলেই এক্সপ্রেশন দিত। তবে মাঝেমধ্যে ওদের মুড বিগড়ে যেত। তখন যিশুদা, আমি এবং বাকিরা মিলে সামলেছি। মানে আমাদের সেটের সবার বোধহয় একটা ডিপ্লোমা কোর্স হয়ে গিয়েছে যে কীভাবে বাচ্চা সামলাতে হয়? কোভিডের এত কড়া বিধিনিষেধ মেনে সতর্কতা অবলম্বন করেই ওদের নিয়ে শুট হয়েছে। আমি বলব, ওদের বাবা-মায়েরাও ভীষণ সাহায্য করেছে। গোটা শুটিংটাই দারুণ উপভোগ করেছি।
এই প্রজন্মের অনেকের সঙ্গেই কাজ করলেন। বন্ধু হিসেবে কে সবচেয়ে কাছের?
আমার যারা খুব কাছের বন্ধু, তাঁরা বেশিরভাগ স্কুল-কলেজের বন্ধু। এঁদের প্রত্যেকের সঙ্গেই এক দশকেরও বেশি সময়ের বন্ধুত্ব। আর ইন্ডাস্ট্রির বন্ধু বলতে গেলে খুবই কম, হাতেগোনা দু'-একজন। তাঁদের সঙ্গেও প্রায় ৭-৮ বছরের আলাপ। আমার ব্যক্তিগত জীবনটা আসলে ইন্ডাস্ট্রি থেকে একটু দূরে রাখতেই পছন্দ করি আমি। আমার আসলে বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে একটু সময় লাগে।
'মন্টু পাইলট'-এর পর ফের নতুন ওয়েব সিরিজে কাজ করলেন। সেটা সম্পর্কে বলুন…
সৌরভ চক্রবর্তীর 'সাড়ে সাইত্রিশ' নামে একটা সিরিজে অভিনয় করেছি। শুট হয়ে গেছে।
টেলিভিশনে মেগার পাশাপাশি সিরিজে কাজ, সামলান কী করে?
সময় বের করে নিই। যখন যেরকম শিডিউল থাকে, সেগুলো গুছিয়ে নিই।
টেলিভিশন, সিরিজ থেকে বড়পর্দা… তিনটে মাধ্যমেই কাজ করেছেন। কোনটা বেশি কাছের?
খুব কঠিন প্রশ্ন! তিনটে তিনরকম জার্নি। এই তিনটে মাধ্যম ছাড়াও কিন্তু আমি মঞ্চে অভিনয় করেছি। 'ফোর্থ বেল থিয়েটার' নাটকের গ্রুপের সঙ্গে। আমি আসলে প্রত্যেকটা মাধ্যমই ঘেঁটে দেখতে চাই। তাই যেমন ভালবেসেই মেগার কাজ করছি, আবার তেমনই সিরিজ কিংবা সিনেমার কাজ করছি। আমার কাছে, তিনটে মাধ্যমই তিনরকমভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া, বড়পর্দায় তো সবে আমার জার্নি শুরু হল। আরও বছর খানেক গেলে এই উত্তরটা দেওয়া হয়তো সহজ হবে।
শুনেছি, আপনি বই পড়তে, আঁকতে ভালবাসেন, পাশাপাশি নাচের প্রশিক্ষণও রয়েছে।
আমি বেশ কয়েকবছর ক্লাসিক্যাল ডান্স শিখেছি। তারপরে নাচটা অবশ্য আর চালিয়ে যেতে পারিনি। তবে হ্যাঁ, আমি নাচতে ভালবাসি। যেমন আঁকতে কিংবা বই পড়তে। ছবি আঁকাটাও বেশ কয়েক বছর যথাযথভাবে শিখেছি। আসলে সবটাই নিজের ভালো লাগা থেকে। এখনও কাজের ফাঁকে টুকটাক রং-তুলি নিয়ে বসে পড়ি।
কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় তো 'পেইন্টার শোলাঙ্কি' এখনও ধরা দেননি!
না। আমি একটু ব্যক্তিগত রাখতেই পছন্দ করি এসব বিষয়। আসলে আমি নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতেই আঁকি। তবে এতটাও ভাল আঁকি না যে সেগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় দেব (হেসে)। ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে আমি সক্রিয়। তবে শুধু কাজের জন্য ব্যবহার করি। আর অন্যদের ছবি-ভিডিও দেখতে ভালোই লাগে।
এতসবের মাঝে লেখালেখিও করেন। পরিচালক হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে ভবিষ্যতে?
হ্যাঁ , ওই টুকটাক লিখি আর কী! তবে পরিচালক হতে গেলে আরও অনেকটা পথ হাঁটতে হবে। আপাতত অভিনয়টাই উপভোগ করছি। এবং সেটাই এখন খুব মন দিয়ে করতে চাই।
নভেম্বরে মুম্বইয়ের পৃথ্বী থিয়েটারে গিয়েছিলেন, কাজের জন্য?
না না, কোনও কাজে নয়। ঘুরতেই গিয়েছিলাম। তবে থিয়েটারের ভিতরে ঢুকিনি।
শোলাঙ্কির ব্যক্তিগত জীবন কেমন চলছে?
দারুণ চলছে (হেসে)।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন