টেলিভিশন দিয়ে শুরু, তারপর ওয়েব সিরিজ - সিনেমা... শোলাঙ্কি রায় কিন্তু নিজের কেরিয়ার নিয়ে সবসময় খুব সতর্ক। সমস্ত ফরম্যাটেই অভিনেত্রী নিজের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। আর আজ এতদিন পর তিনি ফিরছেন নতুনভাবে। আসলে এটা সিনেমা নাকি সিরিয়াল? শোলাঙ্কি তাঁর নতুন কাজ বোকাবাক্সতে বন্দী প্রসঙ্গে বেশ আশাবাদী।
City of Joy- এর অলিগলি ছেড়ে এখন তিনি বাসা বেঁধেছেন মায়ানগরীতে। মুম্বাইয়ে এখন থাকছেন অভিনেত্রী। কিন্তু তাই বলে বাংলাকে ভুলে যাবেন? একেবারেই না। নতুন সিরিজের পাশাপাশি নানা বিষয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার প্রশ্নের উত্তর দিলেন তিনি।
শহরের উষ্ণতম দিনের পর একটু গ্যাপ হয়ে গেল না?
শহরের উষ্ণতম দিনে তো গাঁটছড়া চলাকালীন শুট হয়। আর হ্যাঁ, তারপর কাজ করা হয়নি। গ্যাপ বলতে গেলে, আমি কিন্তু সেইভাবে সেটা বুঝিনি। বরং বোকাবাক্সতে বন্দীর শুটিং এসব নিয়েই কেটে গিয়েছে। রিলিজ হতে তো অনেকটাই সময় লেগেছিল।
মুম্বাইয়ে তো কাজের জন্যই গিয়েছিলে?
না! আমি থাকি তো ওই শহরে। এখন অনেকদিন কলকাতা ছেড়ে বোম্বেতেই আছি।
বোকাবাক্সতে বন্দী- ই কেন? বিশেষ কারণ?
হ্যাঁ! স্ক্রীপ্ট, আমার পরিচালক এবং আমার চরিত্র...চরিত্রটা খুব অন্যরকমের। এটা একটা সাইকোলজিকাল থ্রিলার। একজন মেয়ে যে শেষ ২০ বছর ধরে অভিনেত্রী ছিল। যেদিন ও কাজটা ছাড়বে বলে ভাবছে, সে পারছে না! সে হারিয়ে যাচ্ছে। অভিনেত্রীদের সঙ্গে মানানসই একটা গল্প।
তুমিও অভিনেত্রী, সেখানে একজন অভিনেত্রীর চরিত্রেই অভিনয় করছ, মাথায় কী ঘুরছিল?
সেভাবে জানো তো কিছুই চলছিল না! এটা আমার কাছে একটা চরিত্র। হ্যাঁ, এটা বলতে পারি যে অভিনেত্রী হিসেবে অভিনেত্রীর চরিত্রে অভিনয় করাটা খুব ইন্টারেস্টিং ছিল। আর আগেও একবার ছোট একটা এমন চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। কিন্তু এটা অনেক বড় একটা চরিত্র।
কী মনে হয়, তারকারা আজকের দিনে খুব সহজলভ্য হয়ে গিয়েছে?
এটা তো ভিন্ন নজরের ওপর নির্ভর করে। তারকারা তো রক্ত মাংসের মানুষ। তাঁর ভাল লাগা, খারাপ লাগা থাকে। দুঃখ কষ্ট সব আছে। এটা মানুষের নজর, যে তারকারা আজকাল খুব সহজলভ্য হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেটা তো আমাদের দৃষ্টিকোণ না।
বোকাবাক্সতে বন্দী শব্দটা একটা প্রবাদ, সঙ্গে গানের লাইন - কিন্তু মানুষ কি সত্যিই বোকাবাক্স বা মুঠোফোনের প্রতি খুব আকর্ষিত?
অবশ্যই! এতে তো কোনও সন্দেহ নেই। মানুষের মধ্যে এই বিষয়গুলো নিয়ে এতটাই আসক্তি, এই কারণেই তো বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে। আমরা সকলে খুব ফোনের প্রতি আসক্ত। আর এটা এমনই এক বিচ্ছিন্নতার গল্প। যাতে, মেসেজ দেওয়ার কিচ্ছু নেই। দুটো সত্বার লড়াই।
এই যে বিচ্ছিন্নতা, এটা ভাল না খারাপ?
ভাল খারাপ বলার বা বিবেচনা করার আমি কেউ নই। আমার মনে হয়, মানুষের মধ্যে একাকীত্ব বাড়ছে এই কারণেই। ফলে, সম্পর্কে চাপ পড়বে। যতক্ষণ, জীবনে তুমি ফোনের সঙ্গে সময় কাটাবে, অন্য কারওর সঙ্গে সময় না কাটিয়ে তখনই কিন্তু সমস্যা বাড়বে। বাস্তব জগতের সবটাই খুব বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। চারপাশে কী হচ্ছে সেটাও বুঝতে পারবে না। কোনকিছুই তোমার ওপর প্রভাব ফেলবে না। অনুভব করতে পারবে না। যন্ত্রই হয়ে যাব সকলে।
সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে অভিনেতা অভিনেত্রীদের সফলতা তাড়াতাড়ি আসে, আবার যায়ও! দাবি করা হয় সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশিরভাগই ফেক, এতে কী গুরুত্ব কমে যায়?
এর জন্য কে দায়ী? বাজার! প্রত্যেকটা মানুষকে টিকে থাকতে হয়। অভিনেত্রীদের ক্ষেত্রেও তাই। এটার জন্য তো নায়িকারা দায়ী নয়। টিকে থাকার লড়াইয়ে এটা করতেই হবে। আর ফেক বিষয়টা যে, এটা তো খুব স্বাভাবিক। কারণ, আসল ছবি যদি পোস্ট করা হয় তাহলে তাঁকে ট্রোল করা হবে। তাঁর স্কিনের টেক্সচার, কত বয়স হয়ে গেল, এসব নিয়ে তো হাজার কথা হবে। কত কিছু বলা হবে। সুতরাং তাঁকে ফেক সাজতেই হবে। সোশ্যাল মিডিয়া তো রিয়েল হতে দেবেই না।
আর আরেকটা কথা, এই যে সোশ্যাল মিডিয়ায় বুদ হয়ে থাকার বিষয়টা, এটা কিন্তু খুব অসহায়ত্ব তাদের। খুব ভয়ঙ্কর।
কিন্তু এটা ছাড়া তো সম্ভবও না...
সোশ্যাল মিডিয়া তো একটা প্ল্যাটফর্ম! এটা তো অস্বীকার করা যায় না। প্রমোশন, মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার ক্ষেত্রে এর ভূমিকা বিরাট। এটা বলতে দ্বিধা নেই যে সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের পুরো ঘিরে নিয়েছে। আমরা এটা ছাড়া থাকতে পারি না। আমরা চোখ বুজে থাকলে তো চলবে না। এখন তো, সোশ্যাল মিডিয়া প্রমোশন করতেই হবে। সমস্যা হচ্ছে, প্রোফেশনাল জীবনের বিষয়টা যখন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পার্সোনালভাবে আঘাত করে, তখন মুশকিল।
সোশ্যাল মিডিয়ার ড্যামেজ নিজের জীবনে বুঝতে পেরেছ?
একদম! বুঝতে তো পেরেছি এটা বলাই উচিত। আগে দশ মিনিট একমনে বই পড়তে পারতাম। আমার মনযোগ কমে গিয়েছে। ধৈর্য কমে গিয়েছে। এটা বিজ্ঞান সুত্রে পাওয়া তথ্য যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় দশ মিনিট স্ক্রোল করলে নানা ধরনের রিল চোখে পড়ে। একেকটা ভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট। কখনও হাসছে, কখনও খুব রোমান্টিক কিছু, ফলে একটা মেন্টাল ব্রেকডাউন খুব স্বাভাবিক। অনুভূতি কমে যায় আমাদের। আমার তো মাথাব্যথা করে। আমি স্ক্রিন টাইম লিমিট করে দিয়েছি।
নায়িকা হওয়ার চাপ কোনোদিন বুঝতে পেরেছ?
চাপ বলা উচিত কিনা জানি না, কিন্তু এটুকু বলতে পারি আমি কাজ করেছি সততার সঙ্গে। ২০০% দিয়েছি। দায়িত্ববোধ আমার বরাবরই আছে। সেই দিক থেকে আমার চাপ কোনোদিন হয়নি। আর যদি বলো সত্যিই চাপ, তাহলে একটাই কথা বলতে হয়, আমি যখন টেলিভিশন করতাম, তখন খুব চাপ থাকত। শরীর খারাপ হত। সেইটা খুব বিরক্তের কারণ ছিল। কারণ, অভিনেতাদের পর্দায় দেখা যায়। তাই তাদের শরীর ভাল রাখতে হয়। ঠিক করে ঘুমানোর দরকার তো।
হঠাৎ করে IR এর ছাত্রী থেকে নায়িকা...
আমার মনে হয়, পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে অভিনয়ের যোগ আছে। কারণ দুটোতেই খুব অধ্যাবসায় রয়েছে। আমি পড়াশোনাও ভাল করে করেছি, আর এটাও। রাজনীতিও যখন করতাম, তখন সেটাও মন দিয়ে করেছি। আড্ডা মেরে অনেক রাতে বাড়ি ফিরতাম।
এখন, তাহলে রাজনীতি করছ না কেন?
আমি এখনকার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। যে ফরম্যাটে পলিটিক্স চলছে সেটায় আমার বিশ্বাস নেই। আমি ভীষণ রাজনৈতিকভাবে অবগত একটা মানুষ। সারাজীবন সেটা থাকবে। কিন্তু যে সেনেরিও চলছে, সেটা খুব অদ্ভুত। রাজনীতিতে যে ধরনের ল্যাংগুয়েজ তারা ব্যবহার করে সেটা খুব খারাপ।