গোয়া ৫৩ তম আন্তর্জাতিক ‘ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে’বিরাট চমক! বাংলার মুখ উজ্জ্বল করল হুগলির সোমনাথ। ছোট থেকেই সঙ্গী দারিদ্রতা। ইচ্ছাশক্তি আর অদম্য জেদের জেরেই ছিনিয়ে নিল সেরার সেরা শিরোপা। ১০ মিনিটের তৈরি একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিতেই বাজিমাত সোমনাথের।
২০ থেকে ২৮ নভেম্বর দেশ বিদেশের নানান ছবি দেখানোর পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্য থেকে বেছে নেওয়া হয় ৭৫ তরুণ প্রতিভাকে। আগামী ভারতে মহিলাদের নিয়ে তৈরি ১০ মিনিটের বিশেষ ছবি ‘ডিয়ার ডায়েরি’ সেরার সেরার সম্মান এনে দেয় সোমনাথকে। বিখ্যাত পরিচালক মণি রত্নমের হাত থেকে ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার চেক জিতে আপ্লুত সোমনাথ। ভবিষ্যতে ফিচার ফিল্ম নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন তরুণ এই পরিচালক।
ছেলেবেলা থেকেই অভাবকে সঙ্গে নিয়ে বেড়ে ওঠা। মা রান্নার কাজ করেন। বাবা নেই, নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। এমন ছেলের এহেন সাফল্যে খুশির হাওয়া গোট এলাকায়। হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুলে পড়াশুনা, তারপর রুপকলা কেন্দ্র থেকে সাউন্ড নিয়ে স্নাতকোত্তর। সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক ও মৃণাল সেনের সিনেমা দেখেই বড় হওয়া। ছেলেবেলার অনেকটা সময় কেটেছে হুগলির গ্রাম্য পরিবেশে। গ্রাম্য জীবনের ওপর তৈরি একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি চন্দননগর চলচ্চিত্র উৎসবে পায় সেরার শিরোপা।
২০২১ সালে স্বচ্ছতা দিবসে তাঁর স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি প্রথম পুরস্কার জেতে। সেই থেকে এগিয়ে চলা। সেরার সেরা শিরোপা ছিনিয়ে নিয়ে আল্পুত সোমনাথ। তিনি বলেন, “আমার একটি সিনেমা গত বছর ন্যাশনালের জন্য মনোনীত হয়। যেটা আমি ‘গোবর গ্যাসের’ ওপর তৈরি করেছিলাম, জাতীয় স্তরে এই ছবি মনোনীত হয়। ২০২১ সালের নভেম্বরে দিল্লি থেকে আমার ডাক আসে। আমি ওখানে গিয়ে জানতে পারি জাতীয় স্তরে আমার তৈরি সেই স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি সেরা ছবি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছে। সেটা আমার কাছে আলাদাই এক অনুপ্রেরণা’।
এই বছর গোয়া আন্তর্জাতিক ‘ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে’সাফল্য প্রসঙ্গে সোমনাথ বলেন, “৫৩ তম আন্তর্জাতিক ‘ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে’দেশী বিদেশী ছবি দেখানোর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে মোট ৭৫ জন উদীয়মান কলাকুশলীকে বেছে নেওয়া হয়। ১৫ জন করে পাঁচটি বিভাগে ভাগ করে ৫৩ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয় ছবি তৈরির জন্য। ডিরেক্টর কোডে আমাকে সিলেক্ট করা হয়। মোট ৫ টি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবির মধ্যে আমাদের তৈরি ছবি শেষ পর্যন্ত সেরার সেরা হিসাবে ঘোষণা করা করা হয়। বিখ্যাত সিনে পরিচালক মণি রত্নম ওখানে উপস্থিত থেকে নিজে আমাদের হাতে সেরার সেরার সার্টিফিকেট এবং একটি চেক তুলে দেন”।
এই জার্নিতে সোমনাথ সব সময় পাশে পেয়েছে ‘উত্তরণ’ কে। সংস্থার পক্ষ থেকে সম্পাদক কৌশিক চক্রবর্তী বলেন, “সোমনাথ আমাদের গর্ব। আমি ওর এই সাফল্যকে কুর্ণিশ জানাই। প্রথম থেকেই অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে সোমনাথকে। তবুও হাল ছাড়ার পাত্র সোমনাথ একেবারেই নয়। সিনেমা তৈরি পাশাপাশি দারুণ গান গায় সোমনাথ। সঙ্গীত শিল্পী কণা ভদ্রের মেয়ে সঙ্গীতা ভদ্রের কাছে লোকগানের তালিম নেন। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর জেদকে সম্বল করেই সোমনাথের আজকের এই সাফল্য। ‘উত্তরণ’ সবসময় ওর পাশে ছিল আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে”।