টানা ৪০ দিনের লড়াইটা সম্ভবত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের (Soumitra Chatterjee) একার ছিল না। ছিল মেয়ে পৌলমী বসুরও। সবসময়ে বাবার পাশে থাকেছেন। একেবারে শেষ সময় অবধি। হাসপাতালে প্রতিটা মুহূর্ত থেকে শুরু করে সেদিন যখন টেকনিশিয়ান স্টুডিও হয়ে রবীন্দ্র সদনে শায়িত ছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মরদেহ, তখন অবধি পাশে থেকেছেন। হাত বুলিয়ে দিয়েছেন বাবার মাথায়। রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ার পর শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার আগেও বাবার বুকে, কপালে হাত বুলিয়ে আদর করে দিয়েছেন। ৪০ দিনের ছোটাছুটিতে স্বাভাবিকভাবেই অনেকটা ক্লান্ত এখন তিনি। বাবুঘাটে অস্থি বিসর্জন করে এসে সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেদন জানিয়েছিলেন পৌলমী যে, এখন তাঁকে যেন কেউ ফোন না করেন। তবে পিতৃহারার শোকের মধ্যেও কিন্তু 'বাপী' সৌমিত্রর অনুরাগীদের প্রতি কর্তব্যে অবিচল তিনি। আর তাই সেই ভাবনা থেকেই তৈরি করতে চান সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের উদ্দেশে একটা পূর্ণাঙ্গ আর্কাইভ।
বাবা যখন হাসপাতালের বেডে প্রকৃত যোদ্ধার মতো লড়ছিলেন, তখনই কিন্তু মনে মনে আর্কাইভ গড়ার সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলেছিলেন। তাই পারলৌকিক আচারে সেভাবে বিশ্বাসী না হলেও নিজের মতো করে পিতৃতর্পন করবেন ভেবেছেন। আর সেই আর্কাইভ গড়াটাই হবে সৌমিত্র-কন্যা পৌলমীর পিতৃতর্পন।
সিনেমা, থিয়েটার, কবিতা লেখা নানা দিকে পারদর্শী ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। শেষের দিকটায় বাড়ির আউটহাউসকে নিজের হাতে রাঙানো ক্যানভাসে আর্টগ্যালারি তৈরি করে তুলেছিলেন। তাঁর নানা সময়ের লেখা লেখালেখি, ডায়েরি অনেক কিছুই রয়েছে। আর্কাইভে সেগুলোই থাকবে অনুরাগীদের জন্য। পৌলমী বসুর কথায়, বাবার সব কাজ যেখানে সহজেই পাওয়া যাবে, এমন কিছু করার ভাবনা দিন কয়েক ধরেই ঘুরছিল তাঁর মাথায়, খুব শিগগিরি সেই পরিকল্পনাটাও গুছিয়ে ফেলবেন তিনি বলে জানিয়েছেন।
রবিবার বাবার মৃত্যুসংবাদ প্রকাশ্যে আসার পর হাসপাতাল চত্বরেই যখন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন তখনই চিকিৎসক, নার্সদের যত্নের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। বলেছিলেন, "বাবাকে হাসিমুখে মনে রাখুন। কান্না দিয়ে নয়, খুশিমনে উদযাপন করুন।" সূত্রের খবর, আজ মঙ্গলবার দক্ষিণ কলকাতারই একটা মন্দিরে পিতৃবিয়োগে কন্যার পালনীয় আচার সারবেন তিনি।