ঘড়ির কাটায় তখন বিকেল সাড়ে পাঁচটা। রবীন্দ্র সদন থেকে বেরল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মরদেহ শায়িত শববাহী গাড়ি। গন্তব্য কেওড়াতলা মহাশ্মশান। চলচ্চিত্র জগতের কিংবদন্তী শিল্পীর শেষযাত্রায় পা মেলালেন অগণিত ভক্ত, অনুরাগীরা। সিনেমার সেটে যেমন তিনিই ছিলেন মহারাজা, তিনি উপস্থিত থাকলে, তাঁর কাছে সবকিছু ম্লান হয়ে যেত, বিদায়বেলাতেও চোখে পড়ল ঠিক সেইরকম দৃশ্য। শেষযাত্রায় মানুষের ঢল। জয়ধ্বনি দিতে দিতে এগিয়ে চলেছেন সবাই। পদযাত্রায় পা মেলালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee), দেব, রুক্মিণী মৈত্র ও রাজ চক্রবর্তী। উপস্থিত ছিলেন বিমান বসু, সুজন চক্রবর্তীও। গান গাইলেন ইন্দ্রনীল সেন, অভিনেতাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁরই লেখা কবিতা পাঠ করলেন কৌশিক সেন।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতোই গান স্যালুটে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে (Soumitra Chatterjee)। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হল শেষকৃত্য। গান স্যালুটের সময় কান্নায় ভেঙে পড়লেন মেয়ে পৌলমী বসু।
রবীন্দ্রসদনে বাবার দেহ সযত্নে আগলে রেখেছেন মেয়ে পৌলমী বসু।
ছবি- (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস) শশী ঘোষ
৬টা বেজে ৪৫ মিনিটে দেওয়া হল গান স্যালুট। এরপরই রীতি মেনে শুরু শেষকৃত্যের কাজ। সন্ধে ৭টা নাগাদ পঞ্চভূতে বিলীন হলেন কিংবদন্তী শিল্পী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। বেলা ২টো নাগাদ গলফগ্রীনের বাড়ি হয়ে টালিগঞ্জ টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখানে বহু মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন প্রিয় শিল্পীকে। এরপর রবীন্দ্র সদনে ঘণ্টা দুয়েক রাখার পর কেওড়াতলা মহাশ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয় সৌমিত্রের মরদেহ। সেখানেই মেয়ে পৌলমী বসুর তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয় শেষকৃত্য।
ছবি- (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস) শশী ঘোষ
সৌমিত্রর প্রয়াণে শোকবার্তা জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। বললেন, "উনি চিরকাল মানুষের হৃদয়ে থাকবে।" এদিন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, দেবশ্রী রায়, সুজন চক্রবর্তীর মতো ব্যক্তিত্বরা রাজনৈতিক বেড়া টপকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে শেষ শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন রবীন্দ্র সদনে। উপলক্ষ্য প্রিয় মানুষটাকে শুধু একবারের জন্য চোখের দেখা দেখতে পাওয়া। আর তো কখনও কিংবদন্তীকে সিনেমার সেটে দেখতে পাবেন না। প্রায় ২ ঘণ্টা রবীন্দ্র সদনে শায়িত রাখা হয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মরদেহ। শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভীড় জমিয়েছিলেন অগণিত গুণমুগ্ধ শিল্পী থেকে ভক্তরা। প্রিয় ফেলুদাকে শ্রদ্ধা জানাতে চোখের জল যেন কিছুতেই বাঁধ মানছিল না। বাবার মরদেহের পাশে ঠায় পায়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন কন্যা পৌলমী বসু।