সৌমিতৃষা ফিরছেন পর্দায়। তাঁর জীবনের প্রধান খবর এখন এটাই যে কালরাত্রি ছবিতে তিনি দেবী সেজে ফিরছেন। সিরিজের কথা চলছিল অনেকদিন। তাঁর সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে কোন গুরুত্বপূর্ন চরিত্রে বেশি মানায়, সেটা নিয়েও যেন বেশ সময় দিচ্ছিলেন সকলের প্রিয় মিঠাই। কালরাত্রিতে দেবীর ভূমিকায় তাঁকে দেখা যেতে চলেছে।
বহুদিন আগেই ফার্স্ট লুক প্রকাশ্যে এসেছিল। বিয়ের সাজে নানা পোস্ট করেছিলেন সৌমি। সেই সিরিজ নিয়েই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে নানা ধরনের গল্প ফাঁদলেন...
প্রথম সিরিজ তো, তাও আবার হইচইয়ের সঙ্গে...
হ্যাঁ হইচই এর সঙ্গে আমার প্রথম সিরিজ। আসলে ওদের সঙ্গে অনেকদিন ধরেই অনেক রকম চরিত্র নিয়ে কথা হচ্ছিল। কিন্তু ওই যে বলে না, আমি এমন একটা চরিত্র খুঁজলাম যেখানে অভিনয়টা দেখাতে পারব। আরে পরিচালক অয়ন দা ভীষণ ট্যালেন্টেড। উনি ভীষণ গুণী মানুষ। ক্রিপ্ট দেখে আমি আর না বলতে পারিনি। আমি দেখেছি যে কোন ক্ষেত্রে আমার লাক খুব ফেভার করে। খুব ভালো টিম পাই আমি সবসময়। অনেক কিছু শিখতে পারি।
হঠাৎ কালরাত্রি কেন?
ওই যে, গল্প। দেবী আমার মনকে ছুঁয়ে গিয়েছে। আসলে এরম না আমার সঙ্গে হয়। ভালো কিছু হবে বলেই আমি হয়তো অনেক কিছুতেই না বলে থাকি। এক্ষেত্র ঠিক তাই। আমি জানি দর্শকরা বুঝতে পারবেন যে আমি কেন এই সিরিজটি পছন্দ করেছি।
যেদিন থেকে তোমার অনস্ক্রিন বিয়ের লুক প্রকাশ্যে এসেছে, ভক্তরা বারবার জিজ্ঞেস করছেন আসল মুহূর্তটা কবে?
হাসি ... সত্যি বলবো আমার ২২ বছর বয়স। এখন কি বিয়ে করবো বলো তো? তবে আমার মনে হয় না সবসময় আমার ভক্তরা আমার বিয়ে নিয়ে কথা বলেন। যারা বলেন তারা হয়তো অনেক সময় রিল আর রিয়েল টা গুলিয়ে ফেলেন। তারা অনেকেই প্রশ্ন করেন যে এবার আসলটা কবে দেখবো। কিন্তু আমার ভক্তরা মনে হয় না আমার বিয়ে নিয়ে খুব একটা কনসার্ন। তারা চায় যে আমি বড় হই। আমি এক সময় উইকিপিডিয়াতে দেখেছিলাম, যেখানে আমার বয়সের জায়গায় মিঠাইয়ের বয়সটা দেওয়া রয়েছে। যাইহোক সেটা হয়তো অনেকে ভুল করে করে ফেলেছেন। সেখানে ২৪ বছর দেখায়। যাক গে, ২২ বা ২৬ হোক আমি কেন এই বয়সে বিয়ে করতে যাবো বলো। আমি এই বয়সে বিয়ে করার কথা ভাবতেই পারি না। বাবা মা আমাকে এই বয়সে বিয়ে দেবেই না।
এত ছোট বয়সে অভিনয় এসেছে, বাবা মা পড়াশোনার কথা একবারও বলেননি?
আমার বাবা-মা যেভাবে আমার সাপোর্টে ছিলেন, আমি সেই জন্যই আজকে কিছু করতে পারছি। এই যে মানুষের এতো ভালোবাসা পেয়েছি, সেই পথটা বাবা-মার জন্যই তৈরি হয়েছে। আমার বারাসাতের বাড়ি থেকে কলকাতার বাড়িতে চলে আসা। আমি স্কুলে থাকতে অভিনয় করেছি। কলেজে গিয়ে দেখা গেল খুব অসুবিধা হয়ে যাচ্ছে। তারপর আমি ওপেন ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হয়েছিলাম। অনেকে বলেছিল যে বাবা সেন্ট পলস ছেড়ে দিলে, ইংলিশ অনার্স ছেড়ে দিলি, চাকরি পাওয়া যায় না ওপেন থেকে পড়ে। আমার চাকরি করার ইচ্ছে কোন দিনই ছিল না। যারা চাকরি করেন তাদের প্রতি আমার খুব শ্রদ্ধা রয়েছে। আমি ছোট থেকে একটু নাচ গানের প্রতি আগ্রহী। বাবা মা সেটা বুঝেছিলেন এবং আমাকে দারুন সাপোর্ট করেছেন।
অভিনয়ের সুযোগ নিশ্চই সহজে আসেনি?
না আমার বাবা-মাই আমাকে যেন সাহস যুগিয়ে ছিলেন। আমি তো ভেবেছিলাম এখানে অডিশন দিতে হয় কত কি করতে হয়। তখন তো আমি খুব ছোট ছিলাম। তখন বাবা মা ই বলেছিলেন যে যা না। যখন আমি সুযোগ পেলাম তখন আমাকে সেই প্রোডাকশনের তরফে বলা হয়েছিল যে আমরা তোমাকে শিখিয়ে পড়িয়ে নেব। তারপর আমাকে অনেক সিনিয়র আটিস্টরা বলেছিলেন, যে তুমি দেখবে অনেকদূর যাবে তুমি ক্যামেরা ভয় পাও না। তারপর ভগবানের আশীর্বাদে সবটাই হল।
সৌমিতৃষার মনের মানুষ কেমন হতে পারে?
বলব? যখন ছোট ছিলাম না তখন আমার খুব ভ্যাম্পায়ারকে বিয়ে করার ইচ্ছে হতো, মানে টল ফেয়ার হ্যান্ডসাম... ( হাসি )। এখন না স্টেবেল রেলেশনশিপের সংজ্ঞা পাল্টে গেছে। আর আমি না একদম কোন বিষয়ে সময় নষ্ট করতে পছন্দ করি না। ওই যে সম্পর্ক গুলো আছে না? কেটে গেলাম তারপরে কি হলো কিনা হবে কিছু জানি না ভবিষ্যতের কথা, এ বিষয়গুলো আমি পারিনা।
জীবনে প্রেম বা ক্যাজুয়াল ডেটিং কিছু হয়েছে?
ক্যাজুয়াল ডেটিং এই শব্দটা না আমার জীবনে নেই। ক্যাজুয়াল কিছুই আমি আমার জীবনে করতে পারিনা। আমার ক্ষেত্রে কি হয় জানো তো, ধরো আমি কারোর সাথে কথা বলছি, এবার তাকে আমার পছন্দ হয়েছে বলেই তো কথাটা বলছি। কিন্তু কিছুদিন পরে দেখা গেছে যে তার সাথে আমার আর কথা বলার ইন্টারেস্ট নেই। তারপরে গিয়ে আমার মনে হয়েছে যে না এই মানুষটা আমার জীবনের সেই মানুষটা নয়। কিংবা সে হাজবেন্ড বা বয়ফ্রেন্ড ম্যাটেরিয়াল নয়। হয়তো অনেক ইনসিকিউরিটিস আছে আমার কাজের জন্য। আবার অনেক সময় আমি এমনও দেখেছি হয়তো ডুয়াল ফেসের মানুষ। এরকম করে করে না আমার কোন সম্পর্কে জড়ানো সেভাবে হচ্ছে না। আর চারপাশে যা দেখছি আমার তো ভরসা হারিয়ে যাচ্ছে। সত্যি বলতে গেলে কিছু কিছু পুরুষ বা কিছু কিছু নারী, তারা এমন ধরনের যে তারা হিরে পেয়ে গেলেও সেটার কদর জানেনা। ভয় লাগে আমার এসব দেখলে। আমার ক্রাইটেরিয়া এইটুকুই যে খুব সৎ মানুষ হবে। আর, তার স্ত্রীর পেশাগত দক্ষতা কিংবা কোয়ালিটি নিয়ে তার কোনো রকম ইনসিকিউরিটি থাকবে না। মানুষ তার যে গুণগুলো নিয়ে প্রশংসা করে সেগুলো নিয়ে যেন তার কমপ্লেক্স না থাকে। তার বউ যদি তার থেকে বেশি রোজগার করে থাকে, সে পুরুষ মানুষের জন্য ইগোতে না লাগে। আর অবশ্যই যেন, দুজনের দুজনের প্রতি সম্মান বজায় থাকে। টাকা পয়সা সব কিছু আমার বাবারও আছে, আমারও আছে। এগুলো নিয়ে ভাবতে হবে না। কিন্তু, মানুষটা যেন ভাল হয়।
কোথাও কি এটা সমাজের দোষ?
হ্যাঁ কিছুটা সমাজের দোষ। কিছু পুরুষ বাবা-মার গাইডেন্সে বড় হয়, আবার কিছু পুরুষ বউয়ের রোজগার বেশি হলে তাদের পছন্দ নয়। সে আমার সমান রোজগার করতে পারে, আমার থেকে বেশি করতে পারে আমার থেকে কমও করতে পারে। কিন্তু যাই হোক না কেন, বউয়ের গুন নিয়ে তাঁর যেন গর্ব হয়।
কাজ নিয়ে সমালোচনা নাকি ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বিতর্ক, কোনটা চাও?
ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে চর্চা করা আমি নিজে একদম পছন্দ করি না। আর এই যে বললে না যে কাজ নিয়ে সমালোচনা ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বিতর্ক, আসলে যে কাজ নিয়ে সমালোচনায় থাকে, তাঁর খবরে থাকার জন্য ব্যক্তিগত আলোচনা একেবারেই দরকার হয় না। কাজ নিয়ে আলোচিত হতেই বেশি পছন্দ করি। কারণ ব্যক্তিগত জীবনটা খুব ভিন্ন। সবার সবাইকে পছন্দ হবে এমন কোন গল্প নেই। খারাপ লাগলেও সে বলতে পারে ভালো লাগলেও সে বলতে পারে।
কালরাত্রি ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি স্বপ্ন ভাঙার গল্প, সৌমিতৃষার স্বপ্ন ভেঙেছে কোনোদিন?
দেখো স্বপ্ন আর আশায় দুটো নিয়ে কিন্তু আমরা বেঁচে থাকি। স্বপ্ন আমার আশা ছোট থাকে মানুষের মধ্যে থাকে। একটা উদাহরণ দেই? ধর দোকানে গিয়ে, একটা টেডি বিয়ার পছন্দ হলো কিন্তু মা তখন টাকা নিয়ে বেরোয়নি। সন্ধ্যেবেলা বাবা যখন কিনতে গেল তখন দেখল যে, সেটা সোল্ড হয়ে গেছে। কিন্তু পরে হয়তো আমি অনেক বড় কিছু পেয়েছি ভালো কিছু পেয়েছি। স্বপ্ন ভাঙ্গা নিয়ে আমি খুব একটা ভাবি না।
তারকাদের বিয়ে নিয়ে এখন খুব মাতামাতি, এটা কীভাবে দেখো এখন?
দেখো তারকাদের কাজ নিয়ে যদি মানুষ প্রশংসা করে, তাহলে বিয়ে নিয়ে যে আলোচনা হবে এটা তো খুব স্বাভাবিক। কারণ তারা তাদের ভালবাসে। কিন্তু, প্রশ্ন এটাই যে বিয়েটা সঠিক মানুষের সাথে হচ্ছে কিনা বিয়েটা ভালোমতো টিকছে কিনা। এখন চারপাশে যা হচ্ছে। তারকাদের বিয়ে বিচ্ছেদ তো খবর হয় কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে যে কত কাণ্ড হয় বিয়েটা টেকা খুব দরকার। এই জেনারেশনের ক্ষেত্রে বিয়ে টেকা খুব মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারকাদের বিয়ে নিয়ে মাতামাতি হচ্ছে ঠিক আছে, কিন্তু যে মানুষটাকে বিয়ে করছে সে মানুষটা ভালো হলেই হল।
মিঠাই করেছিল তুমি, সেটা প্রায় মহিলাকেন্দ্রিক একটি সিরিয়াল, কালরাত্রিকে নারীকেন্দ্রিক সিরিজ বলা যায়?
নারী কেন্দ্রিক বা পুরুষ কেন্দ্রিকের বিষয়টা আমি বলতে পারব না তবে এইটুকু বলতে পারি চরিত্রটা গুরুত্বপূর্ণ থাকা খুব দরকার। কারো যদি পনেরো মিনিটের অতিথি এপিয়ারেন্সও হয়, সে চরিত্র যেন খুব দমদার হয়। সে যদি ওইটুকু সময়ের মধ্যে তার অভিনয় দক্ষতা দেখিয়ে দিতে পারে তাহলে আমার মনে হয় না, এই নারী কেন্দ্রিক পুরুষ কেন্দ্রিক বিষয়টা ম্যাটার করে। আমার মনে আছে শ্রীদেবীর সময় যেমন আমরা নারীকেন্দ্রিক ছবি দেখেছি, তখন সমানতালে কিন্তু অনিল কাপুরের ছবিও সেই সময় রিলিজ করত।