/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2022/05/srabanti-ch.jpg)
শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়
২৭ মে মুক্তি পাচ্ছে অয়ন দে পরিচালিত 'ভয় পেও না'। তার প্রাক্কালেই ভূতুড়ে ছবি নিয়ে আড্ডায় শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। লিখছেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ।
ভূতে ভয় পান?
হ্যাঁ, পাই। ব্যক্তিগতভাবে আমি সত্যিই ভূতের ভয় পাই।
এই ছবিতে গা ছমছমে ব্যাপারের পাশাপাশি একটা থ্রিলার এলিমেন্ট ও আছে দেখলাম…
হ্যাঁ। তবে এটা এক্কেবারে বলা যাবে না! তাহলে আর মজা থাকবে না। তবে হ্যাঁ এটা বলতে পারি, ভূতের সিনেমায় রহস্য-রোমাঞ্চ তো থাকবেই, কিন্তু 'ভয় পেও না'র গল্পে অন্যরকম একটা টুইস্ট রয়েছে। বাংলায় সাধারণত যেরকম ভৌতিক সিনেমা দর্শকরা দেখে এসেছেন এযাবৎকাল, তার থেকে অনেকটাই আলাদা।
ওম সাহানির সঙ্গে প্রথমবার জুটিতে, শুটের অভিজ্ঞতা কেমন?
ওমের সঙ্গে আগেও কাজ করেছি। তবে এইপ্রথম জুটি বাঁধলাম আমরা। ভাল তো লেগেইছে। তবে আমি সবখানেই একটা কথা বলছি, ও আমার খুবই ভাল বন্ধু, সেই হিসেবে নয় (হেসে), খুবই পরিশ্রমী ছেলে এবং পরিচালকের একেবারে বাধ্য অভিনেতা। দারুণ সময়জ্ঞান। কলটাইম মেনে যথাসময়ে সেটে হাজির হয়ে যায়। ও অভিনেতা হিসেবে তো ভালই, কিন্তু অনেকেই জানেন না যে ওম সাহানি খুব ভাল আঁকেও। আমি তো ইতিমধ্যেই আবদার জানিয়ে বসেছি যে, আমার একটা প্রোর্ট্রেট ওঁকে এঁকে দিতে হবে। উপরন্তু, ওমের গুড লুকিং ফ্যাক্টরটাও রয়েছে। ভাল নাচেও। ওঁর সঙ্গে নাচ করতে গেলে রীতিমতো খেয়াল রাখতে হয়।
'ভয় পেও না'তেও একটা আইটেম নাম্বার রয়েছে..
হ্যাঁ, দারুণ একটা আইটেম নম্বর, যেটা দর্শনা বণিক করেছে। আমার ভীষণই পছন্দের একজন অভিনেত্রী। খুব মিষ্টি লাগে ওঁকে। খুব সুন্দর দেখতে। আর 'ভয় পেও না'র আইটেম নম্বরে দর্শনাকে যা 'হট' লাগছে, রীতিমতো আগুন ধরে যাবে ওঁর পারফরম্যান্সে।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2022/05/srabanti.jpg)
'ভয় পেও না'র আউটডোর শুটে নাকি প্রচুর মজা হয়েছে?
দারুণ মজা হয়েছে। শুটের মাঝেমধ্যেই কারও না কারও জন্মদিন লেগে থাকত। প্যাক-আপ হয়ে গেলেই আমরা বার্থ ডে সেলিব্রেট করতে নেমে পড়ছি। কাউকে কেক মাখানো হচ্ছে, বেলুন ফাটানো হচ্ছে, দেদার খাওয়া-দাওয়া হচ্ছে.. এটা খুব ইন্টারেস্টিং লেগেছে আমার এই সিনেমার শুট করতে গিয়ে। বড়কাছারি ছাড়িয়েই একটা বাগানবাড়িতে শুট হয়েছিল। সেখানে প্রচুর হাঁস ঘুরছে। পুকুরে মাছ ধরা হচ্ছে। একেবারে অন্যরকম একটা অভিজ্ঞতা। সচরাচর শহরে তো এগুলো দেখার সুযোগ হয় না আমাদের। তারপর দুপুরবেলা সবাই একসঙ্গে হইহই করে লাঞ্চ করছি। মানে কাজের ফাঁকে পিকনিক করেছি বলতে পারো।
তবে হ্যাঁ, কাশ্মীরে একটা রোম্যান্টিক গানের শুটিং করতে গিয়ে নৈস্বর্গিক অনুভূতি। এর আগে এতবার পাহাড়ে ঘুরতে গিয়েছি, কিন্তু কোনওদিন তুষারপাত দেখার সৌভাগ্য হয়নি। 'ভয় পেও না'র সুবাদে সেই ইচ্ছেটাও এবার পূরণ হয়েছে কাশ্মীরে। যেখানে শুটিং করছিলাম, হঠাৎ দেখলাম তুষারপাত হচ্ছে। খুব আনন্দ হয়েছিল।
আপনার জীবনে কখনও কোনও ভৌতিক ঘটনা ঘটেছে?
নিশ্চয় হয়েছি। কতবার এরকম হয়েছে যে, এমন একটা জায়গায় হয়তো গিয়েছি, সেখানে গা ছমছম করছে। কিংবা একটা নেতিবাচক অনুভূতির শিকার হয়েছি। কোনও জঙ্গলে হয়তো শুটিং করতে গিয়েছি কিংবা ঘুরতে গিয়েছি, সেই জায়গাটা অনেক সময় আমার অস্বস্তিকর বলে মনে হয়েছে। আমি এটা মানি যে, নেগেটিভ এনার্জি অনেক সময় মানুষকে আকৃষ্ট করে। একলা ঘরে থেকেও অনেক সময়ে মনে হয়েছে যে, আরও অন্য কেউ হয়তো আমার সঙ্গে রয়েছে ওই একই ঘরে। কিন্তু আমি তাকে দেখতে পাচ্ছি না। মানে নেগেটিভ এনার্জিটা ফিল করতে পেরেছি।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2022/05/bhoy-peo-na.jpg)
বাঙালিরা প্রায় আঁতুড়ঘর থেকে ভূত আর গোয়েন্দা গল্পপ্রেমী… বাংলায় কী এখন ভূতুড়ে গপ্প নিয়ে কম কাজ হচ্ছে বলে মনে হয়?
হ্যাঁ, আমরা বাঙালিরা ঝমঝমিয়ে বৃষ্টির রাতে ভূতের গল্প শুনতে ভালোবাসি বরাবরই। সেখানে ভৌতিক সিনেমা বর্তমানে কম-ই হচ্ছে বটে! তাই তো আমরা দর্শকদের জন্য একটা নতুন ধরনের ভূতের সিনেমা বানালাম। মানুষ খুব উপভোগ করবে। আমি সেই প্রেক্ষিতেই দর্শকদের বলতে চাই যে- 'ভয় পেও না'র মতো একটা বাংলা সিনেমা অবশ্যই হলে গিয়ে দেখুন। কথা দিচ্ছি অন্যরকম এক্সপেরিয়েন্স হবে।
এই সিজনে প্রচুর বাংলা ছবি রিলিজ করল, 'ভয় পেও না' প্রতিযোগিতার মুখোমুখি বলে মনে হচ্ছে?
যে ছবিগুলো রিলিজ করেছে বা করছে, প্রত্যেকটার ঘরানাই আলাদা। সেই প্রেক্ষিতে 'ভয় পেও না' একেবারে ভিন্ন স্বাদের একটা গল্প। প্রথমত, ভূতের ছবি, উপরন্তু টলিউডে নতুন জুটি ওম-শ্রাবন্তী- সেই ফ্যাক্টরটা তো রয়েইছে। তাই প্রতিযোগিতা বিষয়টা মনে হচ্ছে না আমার ব্যক্তিগতভাবে। আমার মনে হয়, দর্শকরা এই সিনেমা দেখতে যাবেন। কারণ, অতিমারীতে মানুষ বহুদিন প্রেক্ষাগৃহে বসে ছবি দেখার আমেজ মিস করেছেন। আর সেখানে একটা ভৌতিক-থ্রিলার ছবি দেখতে তো নিশ্চয়ই যাবেন।
কতটা আশাবাদী এই ছবি নিয়ে?
প্রত্যেকটা সিনেমায় আমরা শিল্পী-কলাকুশলীরা এত পরিশ্রম করি। সেখানে দর্শকদের থেকে একটা এক্সপেকটেশন তো থাকেই। আশা করি, দর্শকরা নিরাশ করেবন না আমাদের।
অনুরাগীদের আক্ষেপ, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়কে বহুদিন বড়পর্দায় দেখা যায় না..
(হেসে) ওঁদের উদ্দেশে বলতে চাই যে, আমিও অনেকদিন ধরেই একটা ভাল গল্প, একটা মানের ভাল চরিত্র খুঁজছিলাম। যাতে আমার ভালবাসার মানুষেরা, অনুরাগীরা আবার নতুন করে শ্রাবন্তীকে পেতে পারেন, সেই অপেক্ষাতেই ছিলাম। তবে হ্যাঁ, এটাও ঠিক যে, আমার অনেকগুলো সিনেমা এখনও রিলিজের অপেক্ষায় রয়েছে। যেগুলোর অনেকদিন আগেই শুট শেষ হয়ে গিয়েছে। তো 'ভয় পেও না' সেক্ষেত্রে একটা ভাল কামব্যাক হবে বলে আশা করছি।
<আরও পড়ুন: প্রথম সপ্তাহেই ১ কোটির ওপর আয় ‘বেলাশুরু’র, তবু ভাঙতে পারল না ‘অপরাজিত’র রেকর্ড>
অনেকদিন বাদে আবার বড়পর্দায় শ্রাবন্তী-ম্যাজিক। কতটা উচ্ছ্বসিত?
আমি সবসময়েই এক্সাইটেড! ভাল কোনও জিনিস মানেই আমার উত্তেজনার মাত্রা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। আর আমি নিজেও ভূতের সিনেমার যেহেতু ভাল একজন দর্শক, সেখানে 'ভয় পেও না'র মতো ভিন্ন স্বাদের একটা ভূতুড়ে ছবিতে কাজ করার সুযোগ পেয়ে এক্সাইটেড তো বটেই!
সেই প্রেক্ষিতেই জিজ্ঞেস করব শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় কতটা সাহসী ভূতুড়ে সিনেমার দর্শক?
ও বাবা, ভূতের সিনেমা আমি যা দেখার দুপুরে দেখি। রাতে একদম নয়! আর একা তো নয়ই। বাড়ির সকলে যখন থাকে, তখনই ভূতের ছবি দেখি।
বাংলা ছবি হল পায় না.. এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে কী বলবেন?
হ্যাঁ, বাংলায় থেকে বাংলা ছবির হল না পাওয়াটা সত্যিই ভীষণ খারাপ লাগার জায়গা। তবে 'ভয় পেও না'র ক্ষেত্রে সেরকম কোনও সমস্যা এখনও শুনিনি। আমি নিজেও খোঁজ নিয়ে দেখেছি। তবে হল-মাল্টিপ্লেক্সের মালিকদের বলতে চাই- আপনারা আমাদের সিনেমা চালান, দেখবেন দর্শকরা ঠিক দেখতে আসছেন।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2022/05/sra.jpg)
ট্রোল-সমালোচনা আপনার ব্যক্তিগত জীবনে কোনও প্রভাব ফেলে?
একেবারেই পাত্তা দিই না। প্রধানমন্ত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী সকলকে নিয়েই মানুষ আজকাল ট্রোল-সমালোচনা করছে। সেখানে দাঁড়িয়ে আমাদের মতো তারকারা তো নগন্য! আমাদের নিয়ে ট্রোল-মিম করে যদি কারও ভিউয়ার্স বাড়ে, কিংবা উপরি রোজগার করে সংসার চালাতে পারেন, তাহলে কোনওভাবে হয়তো আমরা তাঁদের সাহায্য করছি।
এত ট্রোল-বিতর্কের শিকার হয়েও সর্বক্ষণ পজিটিভ থাকার পাসওয়ার্ডটা কী?
সবসময়ে পজিটিভ ভাবি। যেখানেই নেগেটিভ কিছু দেখি, দূরে থাকি। ভাল থাকতে হবে। কারণ, জীবন একটাই। এই অতিমারী আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। দেখিয়েছে যে, জীবন কতটা অনিশ্চিত। আমি বিশ্বাস করি- বর্তমানে বাঁচা আর ভবিষ্যৎটাকে সুরক্ষিত করার মন্ত্রে। সবটাই যার যার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে। জীবনটাকে উপভোগ করা উচিত সবারই। মনের স্বাস্থ্যর খেয়াল রাখাটাও জরুরী।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন