/indian-express-bangla/media/media_files/ZdfvAap5HI8VWXgzmYAv.jpg)
Sreelekha on NO war: বিস্তারিত কী কী বললেন শ্রীলেখা?
Sreelekha Mitra-India Pak tension: যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই - শেষ কিছুদিন ধরে যখন ভারতের সেনাবাহিনী বর্ডারে একের পর এক পাক হামলা বিফল করছে, ঠিক তখনই পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতের বেশ কিছু মানুষ, নিজেদের দাবি রেখেছিলেন যে যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই। যুদ্ধ সাধারণ মানুষকে ধ্বংস করে। যুদ্ধ সাধারণ মানুষকে ভাল থাকতে দেয় না। সেনাবাহিনীর সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধে প্রাণ যায় নিরীহদের।
পাকিস্তানের তরফে ভারতের কাশ্মীরে ঢুকে নিরীহদের হত্যা করা হয়েছে, কিন্তু ভারত সেনাবাহিনীর কোনদিনই পাকিস্তানের নিরীহ মানুষদের মারতে চায়নি। তারা কেবল জঙ্গি বাহিনী এবং তাঁদের ঘাঁটি ধ্বংস করতেই তৎপর ছিলেন। বারবার এমন কথাই ভারতবর্ষের তরফে বলা হয়েছে। কিন্তু গতকাল শান্তি এবং নিরীহ মানুষদের স্বার্থে শহর কলকাতায় একটি মিছিল করে বামেরা। সেই মিছিল নিয়ে ট্রোল করেছেন বহু মানুষ। যেখানে ভারতবর্ষে ঢুকে, পাকিস্তানি জঙ্গিরা ইনোসেন্ট মানুষকে হত্যা করেছেন, সেখানে তাদের সঙ্গে এত সহমর্মিতা কিসের, সেই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। আদৌ কি এটা উচিত?
এ প্রসঙ্গে স্বঘোষিত বাম সমর্থক এবং অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা।তাঁর গতকাল সেই মিছিলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সিনেমার ডাবিং এর কারণে তিনি যেতে পারেননি। আর তাঁকে এই নিয়ে প্রশ্ন করলেই তিনি বেশ কিছু বিষয়ে কথা বলেন। ভারতবর্ষ ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। শ্রীলেখা কী জবাব দিলেন?
সেকুল্যার প্রসঙ্গে ট্রোলের জবাব :
আমি জানি না, মানুষের কী হয়েছে। যারাই যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই বলছেন, তাঁদেরকে গালাগাল করছেন। আমাকে বলছে পাকিস্তানে চলে যাও। টেরোরিস্টরা কি ধরা পড়েছে? যে চার পাঁচ-জন ঢুকে ভারতের নিরীহ মানুষগুলোকে মারল তাদেরকে ধরা গেছে কি? শুধু দুই প্রান্তের কিছু নিরীহ মানুষ মারা গেছে। তোমার আমার বাড়ি থেকে কেউ মরেনি। অন্ধ্রপ্রদেশের এক গ্রামের একটা বাচ্চা ছেলে, চাষীর ছেলে, যে সেনায় ছিল, সে মারা গেছে। আমি তুমি কোনদিনই যন্ত্রনা বুঝবো না। ভারতীয় সেনার একদম ফ্রন্টফুটে যারা লড়াই করে, তারা কিন্তু তোমার আমার বাড়ির মত নয়। এরা অনেকেই আছেন ঠিক করে দুবেলা দুমুঠো খেতে পারেন না। তাদের ভীষণ কষ্টে দিন কাটে। এরা জানেন আমরা যদি ভারতীয় সেনায় নাম লেখাতে পারি, তাহলে আমি যেমন প্রতি মাসে কিছু টাকা মাইনে পাব, তেমনি আমার পরিবার কিংবা পরিজন সকলে খুব ভালো থাকবে। যুদ্ধ কত হয়? কিন্তু বর্ডারে যারা থাকেন, তাঁরা দেশের হয়ে কাজ করছেন সবসময়। যুদ্ধ কিন্তু কেউ চায়না। ফেসবুকে কেউ লিখছে যে পাকিস্তান মানচিত্র থেকে মুছে দেওয়া হোক, এটাকেও তো আতঙ্কবাদ বলে। আমায় বডি শেমিং করা হয়েছে। এরা নাকি ভক্ত? এদিকে সারাদিন মা দুর্গা মা কালী করে, মা মা করে, কিন্তু এবার এরাই পার্সোনাল লেভেলে চলে যায়। সোশ্যাল মিডিয়া এসে মানুষকে এত উল্টোপাল্টা কথা বলার সুযোগ দিয়ে দিয়েছে।
আতঙ্কবাদ এবং কাশ্মীর নিয়ে প্রশ্ন:
যারা অন্যায় করছেন, যারা আতঙ্কবাদ এর সঙ্গে জড়িত, তাদেরকে নিশ্চয়ই শাস্তি দেবেন। কাসভ ছেলেটি, ২৬/১১ তে চূড়ান্ত অন্যায় করেছে। শাস্তি দেওয়া হয়েছে ভারত সরকারের তরফ। কিন্তু যে চার পাঁচ জন ঢুকে আমাদেরকে মারল, তারা কোথায় এখন? তাদের খুঁজে পাওয়া, শাস্তি দেওয়া সম্ভব হয়েছে? আমার আরেকটা প্রশ্ন আছে এই নিয়ে। ১৯৪৭ সালে যখন, নেহেরু এবং জিন্না ঠান্ডা ঘরে বসে কফি খেতে খেতে বর্ডার তৈরি করেছিলেন, তখন কী হয়েছিল? কাশ্মীর তো ১৯৪৭ থেকে সমস্যাযুক্ত। এটা তো সেনসেটিভ ইস্যু। এবং ভারত সরকার নিশ্চয়ই সেটা জানেন। তার সঙ্গে সঙ্গে তারা এটাও জানেন, পহেলগাঁও একটা টুরিস্ট স্পট, সেখানে কী করে টেররিস্টরা ভারতের বুকে পা রাখতে পারল? সেনাবাহিনী কেন সেখানে মোতায়েন করা ছিল না? এটা তাদের ইন্টালিজেন্স ফেলিয়র। দেড় ঘণ্টা পর কেন আর্মি গেল সেখানে? আমার তো এটাকেও ষড়যন্ত্র বলে মনে হয়। আতঙ্কবাদী মানে শুধু মুসলিম, এটা নয়। ওদের সঙ্গদ কিংবা সংগঠন অনেক বেশি, তাঁরা বারবার নানা ঘটনার মাধ্যমে নজরে এসেছে। আমি কিন্তু একবারও বলছি না যেটা ওরা করেছে সেটা ঠিক করেছে। তবে, আতঙ্কবাদের সঙ্গে যারা জড়িয়ে তাঁদের ব্রেন ওয়াশ করা হয়।
ভারতীয় এয়ার ডিফেন্স এর কাজ নিয়ে বক্তব্য:
আমি কোনদিনই যুদ্ধ চাওয়া মানুষ না। দেখলাম একটি গানের মাধ্যমে, এই যে ওয়ারটাকে সেলিব্রেট করা হচ্ছে, যুদ্ধ কিন্তু কোন ভারত পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ নয়, যে বিষয়টাকে সেলিব্রেট করতে হবে। ক্রিয়ার বিপরীত হচ্ছে প্রতিক্রিয়া। কে বলতে পারে যে এরকম কোন কাজ পাকিস্তানের তরফে আবার হবেনা? যে জঙ্গি ঘাঁটি গুলো ভারত ধ্বংস করার দাবি করছে, এগুলো যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে খুব ভালো কথা। কিন্তু সিভিলিয়নের জীবন চলে যাবে এটা কিন্তু আমি মানতে পারি না। আমাকে জিজ্ঞাসা করা হলে, আমি বলবো আমি শুধু ভারতের না, আমি গোটা বিশ্বের নাগরিক। আমার মধ্যে ওই ধরনের আরোপিত দেশপ্রেম নেই, যেখানে জাতীয় সঙ্গীত বাজলে, পপকর্ন পাশে সরিয়ে রেখে আমায় উঠে দাঁড়াতে হবে। আমি সব সময় আমার দেশের জন্য কথা বলব। কিন্তু যেটা তোমাকে বাধ্য করানো হবে, সেটা অনুচিত।
যুদ্ধ - তৈরি করা যায়:
আমেরিকার বিরুদ্ধে কিন্তু নাইন ইলেভেন হচ্ছে। আমেরিকা কিন্তু সুপার পাওয়ার। সামরিক অস্ত্র কিংবা যুদ্ধের অস্ত্র বেচা কেনা, কোটি কোটি টাকার ট্রানজাকশন। ওয়ার কিন্তু ক্রিয়েটেড হয়। এটা কে বোঝাবে? যে কোন দেশের ক্ষেত্রে যুদ্ধ পরিস্থিতি কিন্তু একদম শেষ অধ্যায় হওয়া উচিত। যেটা কথা বলে, আলোচনা করে সম্ভব, সেটা ট্রাই করা উচিত। ভারতের ডিপ্লোম্যাসি তাহলে কিভাবে কাজ করবে? আমাদের যারা অ্যাম্বাসেডর রয়েছেন তারা কী করছেন? দরকার পড়লে পাশের দেশকে আলটিমেটাম দিন। পাকিস্তান খুব ভালো করেই জানে যে ভারতবর্ষ তাদের থেকে অনেক বেশি পাওয়ারফুল। এটা কিন্তু ওদের কাছে একটা ভয়। এবার যদি, চীন কিংবা তুর্কির তরফ থেকে সাহায্য পেয়ে, ভয়ঙ্কর কিছু ঘটায়? তখন? কিছু সাধারণ এবং প্রয়োজনীয় বিষয় আমাদের জানতে হবে। আজও আমরা রোটি কাপড়া মাকান নিয়ে ভুগছি, সেখানে যুদ্ধ? ধর্ম নিয়ে লড়ছি। এটাও একটা চাল। মানুষকে, যখন আমি স্বাস্থ্য শিক্ষা কিংবা তার চাকরি, বেসিক নিড দিতে পারছি না, কারণ সবকিছু তারা তাঁদের ট্যাকে পুড়ে নেয়। চারিদিকে ভুরি ভুরি সংসদ এবং বিধায়ক। মাঝখান থেকে সব থেকে বেশি সমস্যার মধ্যে মধ্যবিত্ত। গরিব আরও গরিব হচ্ছে, বড়লোকদের আরো পকেট ভরছে, আর মধ্যবিত্ত হাতড়াচ্ছে। তবে, যেটা অস্বীকার করার জায়গা নেই, আমরা তাহলে জিতলাম। 'যুদ্ধ না' বলে আমরা এদের সঙ্গে যুদ্ধে জিতলাম তো? তাহলে কী বলবে আমাদের? এই যে সিজফায়ার হল, এতকিছু হল, তাঁর অর্থ পলিসিমেকাররা ভামপন্থী?
বিবেক মিশ্রীকে ট্রোল প্রসঙ্গে:
উনি সরকারের হয়ে কাজ করবেন। উনাকে যেভাবে ট্রোল করা হল, এটা কি উচিৎ? উনি কী করেছেন? উনাকে এবং উনার মেয়েকে যে ধরনের থ্রেট দেওয়া হল, সেটা কী? সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখে বলছে, সামনে পেলে তো মেরেই ফেলবে! এটাও তো এক ধরনের আতঙ্কবাদী ধরনের আচরণ। আমি হচ্ছি, বাঁচো এবং বাঁচতে দাও পলিসিতে বিশ্বাস করি। আমরা কেন ধর্ম নিয়ে ফেল করছি। ২০২৫ সালে দাঁড়িয়েও যদি ভারতের সাধারণ মানুষকে এসব নিয়ে থাকতে হয়, ভাবতে হয়, এটা তো ঠিক না। মানুষকে সেই শিক্ষার আলোটা দেওয়া হোক।