শ্রীময়ী চট্টরাজকে নিয়ে এখন চারিদিকে আলোচনা। বিশেষ করে কাঞ্চনের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর থেকে অভিনেত্রীকে নিয়ে নানা সমালোচনা। সদ্য মা হয়েছেন তিনি। এর মাঝেই তিনি সম্পর্ক নিয়ে বড় কথা বলে ফেললেন তিনি। কার থেকে সম্পর্কের অর্থ শিখেছেন তিনি? আজ বাবা মায়ের বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে সেকথাই জানালেন তিনি।
বয়সে ৩০ বছরের বড় কাঞ্চনকে বিয়ে করেছেন তিনি। তাঁরপর থেকেই নানা কটাক্ষের শিকার তিনি। এমনকি এও জানিয়েছিলেন, একটু বয়স্ক লোকেদের তাঁর পছন্দ। কাজেও করলেন তাই। কিন্তু আজ যখন সম্পর্ক নিয়ে এতকথা শুনতে হয়, তখন বাবা মায়ের
"আজ আমার বাবা মায়ের ৪২তম বিবাহ বার্ষিকী। আমাকে অনেকে জিজ্ঞাসা করে সম্পর্ক বলতে তুমি কি বোঝ, তোমার কাছে সম্পর্ক কি, তুমি বিয়ে করেছ এত বয়সের পার্থক্যে। আমার কাছে , সবকিছুর উত্তর একটাই আমার কাছে সম্পর্কের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হল আমার মা-বাবার সম্পর্ক। আমার মা-বাবার ও বয়সের ফারাক অনেকটা প্রায় ১০ বছর। দীর্ঘ ৪২ বছর তারা তাদের বিবাহিত জীবন পার করেছে, খারাপ ভালো সব মুহূর্ত কাটিয়েছে, আমি কখনো দেখিনি তাদের মধ্যে চূড়ান্ত অশান্তি, আমি কখনো দেখিনি বাবা-মাকে কখনো অসম্মান করেছে। আমি কখনো দেখিনি মা-বাবাকে অসম্মান করছে, আমি কখনো শুনিনি আমার মা-বাবাকে অকথ্য ভাষায় কথা বলতে। আমি বা আমার দিদি বড় হয়েছি একটা সুস্থ পরিবেশের মধ্যে দিয়ে।"
অভিনেত্রী তাঁর মায়ের ভুমিকা নিয়েও কথা বলেছেন। তাঁর জন্যই নানাভাবে সাহায্য পেয়ে এসেছেন শ্রীময়ী। সেই নিয়েও তিনি বললেন... "আমরা শৈশবটা শৈশবের মতো করে কাটিয়েছি। আমার মা হয়তো কোন অফিসে চাকরি করেনি, কিন্তু বাড়ির যে চাকরিটা পালন করেছে তার জন্যই বোধহয় আমার , দিদির ,আমার দিদির মেয়েরা , এমনকি এখন আমার মেয়ে তার দিদা এবং দাদুর যত্নে বড় হচ্ছে। বাবা অফিস থেকে এসে কি খাবে,আমাদের কোনটা দরকার, কোন টিচার দরকার, কোন খাবারটা মুখের কাছে তুলে দেওয়া দরকার, জ্বর হলে সারা রাত জেগে বসে থাকা, জলপট্টি দেওয়া, আমাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া, টিউশনে নিয়ে যাওয়া, দিদিকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া ,টিউশনে নিয়ে যাওয়া, আমাকে একটা সময় পর্যন্ত শুটিংয়ে পৌঁছে ঘন্টার পর ঘন্টা বাইরে অপেক্ষা করে থাকা, এগুলো সব মায়ের অবদান। তার নাতনিদের কি ভালো লাগে, সবটাই মুখ বুঝে, হাসিমুখে ধৈর্য ধরে দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে করে এসেছে, আর বাবার কথা যদি বলি সংসারের কোনটা প্রয়োজন,জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ ,গ্যাসের বিল, ইলেকট্রিক বিল, আমারও দিদির স্কুল ফি, টিউশন ফি,মেয়েদের কি দরকার, সংসারের কি প্রয়োজন, কোন খেলনাটা নাতনিদের দরকার, কোন খাবারটা মেয়েদের বায়না, মায়ের কোন শাড়ি ,কোন গয়নাটা দরকার ,বাইরের পুরো জগৎটাই বাবা সামলেছে, এখনো সামলাই। তাই মা আর বাবা শব্দটা আমার কাছে খুব বড়, হয়তো মা-বাবার উপর অভিমান হয়, চিৎকার করি, আমি এ যুগের মেয়ে হয়ে বলতে পারি আমাদের মধ্যে সেই ধৈর্য নেই, যে ধৈর্য তারা অর্জন করেছে দীর্ঘ বছর ধরে।"
নতুন সংসার পেতেছেন শ্রীময়ী। মায়ের থেকে শিখেছেন অনেককিছু। সংসার করতে গেলে কী কী করতে হয়, কী না করতে হয়। মা হওয়ার পর অধ্যায় পাল্টায় জীবনের। শ্রীময়ীর কথায়, "কিন্তু তবুও মায়ের থেকে শেখা, যে কিভাবে মাথা ঠান্ডা রেখে সংসারী হতে হয়, কিভাবে সমস্ত রকম পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে হয়, আমি আমার মা বাবার থেকে শিখেছি কিভাবে সংসার গুছিয়ে নিতে হয়, আমি খুব কম বয়সে মা হয়েছি, এই জোরটাও আমি পেয়েছি আমার পরিবারের থেকে,,আমি খুব গর্বিত আমার পরিবার নিয়ে, আমার মা ও বাবা, জাঁকজমকতায় বিশ্বাস করে না, কোন বিবাহ বার্ষিকী,জন্মদিন উদযাপনে বিশ্বাস করে না, শুধু এটুকুই বিশ্বাস করে যে তার ছোট মেয়ে, ছোট জামাই, বড় মেয়ে ,বড় জামাই ,বড় মেয়ের দুই মেয়ে দুই নাতনি এবং ছোট মেয়ের সদ্যোজাত মেয়ে, নাতনি নিয়ে তারা সুখে কাটাবেন,, এখনো আমার মা আমার মেয়েকে নিয়ে রাত জাগে,,আমাদের সুখটাই তাদের পরম সুখ। এটুকুই বলতে পারি মা-বাবাকে ,হয়তো সোশ্যাল মিডিয়াটাও তারা দেখতে জানে না ,,আমার মা-বাবার কোন সোশ্যাল মিডিয়ায় একাউন্ট নেই, তারা চান না,,কিন্তু তাও আমি আজ শেয়ার করলাম কারণ কিছু কিছু কথা হয়তো তাদের বলা হয় না ,শুধু এটুকুই বলবো যেভাবে আমাকে, দিদিকে আমাদের পরিবারকে ছাতার মতো আগলে রেখেছ এভাবেই সারা জীবন থেকো।"
উল্লেখ্য, মেয়েকে নিয়ে শ্রীময়ী নানা কিছু পোস্ট করছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাঁর বেবি বাম্পের ছবি থেকে নানা কিছু, এমনকি কাঞ্চনের সঙ্গে খুনসুটির মুহূর্ত সবটাই শেয়ার করছেন সমাজ মাধ্যমে।