স্বপ্নদীপের স্বপ্নভঙ্গও। যাদবপুর পড়ুয়ার মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন গোটা বাংলা। শাস্তি চাই! এখন চারিদিকে মানুষের একটাই দাবি। কিন্তু, প্রশ্ন রয়েছে অনেক। একদিন তো না, এর নেপথ্যে রয়েছে দীর্ঘদিনের অত্যাচার, র্যাগিং… না জানে কত পড়ুয়া এসবের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, হোস্টেল সুপার, ডিন অফ স্টুডেন্টস, ওয়ার্ডেন এর বিরুদ্ধেও।
Advertisment
এই প্রসঙ্গেই এক বিরাট লেখা লিখেছেন শ্রিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়। তার কথায়, শুধু শিক্ষাঙ্গন না বরং সমাজের নানা স্তরে, পরিবারেও প্রতিনিয়ত মানুষ এসবের শিকার হয়ে আসছেন। লিখছেন… "জানি না, ঠিক কোন ধরনের মানসিক অবস্থান থেকে এই রকম অসুখের উৎপত্তি হয়। হয়তো নিজের তিক্ত পূর্ব-অভিজ্ঞতা অন্যের উপর ফলিয়ে কিছুটা স্বস্তি পাবার তাগিদ থাকে। যাদের মুখের ওপর মার ফিরিয়ে দেওয়া উচিত ছিল, তাদের সময়ে না-পেরে, যারা আমার মারের পালটা জবাব দিতে পারবে না, যারা দুর্বল, তাদের উপর সেই অভিজ্ঞতার ক্ষোভ উগরে দেওয়া। এসব করে এক ধরনের ক্যাথারসিস হয়তো হয়, কিন্তু আমরা বুঝি না, যাদের এক সময়ে ঠিক এইসব কর্মকাণ্ডের জন্য ঘৃণা করেছি, আজ সেই এক ব্যবহার আমাদের তাদেরই সমগোত্রীয় করে তোলে।"
চাকরি ক্ষেত্র থেকে রোজকার রাস্তাঘাটে মানুষ নানা সমস্যার শিকার। পারিবারিক ক্ষেত্রে এমন কতকিছুই মানুষ সহ্য করে। "পরিবারের অভ্যন্তরে কত ধরনের র্যাগিং দেখেছি। নব্য বিবাহিত বধূ’র ওপর যে ক্রমাগত মানসিক নির্যাতন, কথায় কথায় তাকে টের পাইয়ে দেওয়া যে সে একজন অপর বা বহিরাগত, তা কি র্যাগিং নয়? ছোট ভাই বা বোনের প্রতি বড় দাদা বা দিদির যে কর্তৃত্ব বা নিয়ন্ত্রণ বা অত্যাচার, যেসব নানা পরিবারে একেবারে ছোটবেলা থেকেই স্বাভাবিক হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হয়, তা কি র্যাগিং নয়? অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল সদস্যের প্রতি বাড়ির বাকি সদস্যদের যে নির্জন নির্মমতা, তা কি র্যাগিং নয়? একশোবার র্যাগিং।"
শিল্পী প্রকাশ্যে জানালেন, যে একসময় তরুণ বয়সে যখন সবে সবে লিখতে শুরু করেছেন তখন তাকেও নানা সমস্যার মধ্যে পরতে হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিতে, কম নেই এই সমস্যা। কিন্তু, তার সঙ্গে শ্রীজাত সকলের উদ্দেশ্যে শক্ত হওয়ার বারতা দিলেন। বললেন… "যারা কমবয়সী, তাদের বলি, পারলে এই সমস্ত অত্যাচারের বিরুদ্ধে, এই জীবনব্যাপী র্যাগিং-এর উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে নিজের কাজটুকু সপাটে ছুঁড়ে মারো। জেনো, যে তোমার ক্ষতি চায়, সে তোমার সাফল্যকে সবচাইতে বেশি ভয় পায়। তাকে জিততে দিও না।"