Kilbil Society Review: সমাজের সবথেকে ঠুনকো বিষয় বোধহয় মানুষের শরীর। যাকে নিয়ে এত আহ্লাদ করা হয়, যাকে যেকোনো সমস্যার সামনে রেখে, কলঙ্কের দাগ লাগিয়ে দেওয়া হয়, সেই শরীরের আদৌ কোনও অস্তিত্ব আছে কি? আজ আছে, কাল নেই। একবার চুল্লিতে ঢোকালে আগুনের লেলিহান শিখা তাঁকে জ্বালাতে সময় নেয় গুনে গুনে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট, কিন্তু মন? মানুষের অন্তর আত্মার খবর কি কেউ রাখে? এই সমাজও রাখে না। বিশেষ করে এমন এক মেয়ের মনের খবর তো কেউই রাখে না, যার শরীরটা শুধুই এক ক্লিকের বেড়াজালে গিয়ে আটকেছে।
'কিলবিল সোসাইটি' - কী ভাবছেন? মাথায় কিলবিল করছে বুদ্ধি, তাই তো? খানিকটা তাই। আবার অনেকটা, ভালবাসা - প্রতারণা - এবং সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে মানুষের মন বোঝার এবং তাঁকে এক সুস্থ জীবন দান করার প্রতিষ্ঠান মাত্র। এবং সেই প্রতিষ্ঠান চালান মৃত্যুঞ্জয় কর ( পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ), যিনি মৃত্যুকে এনজয় করতে শেখান। এবং কোনও অংশেই মৃত্যুকে উপভোগ না করার কিছুই নেই। যিনি স্বেচ্ছায় এই পৃথিবী ছেড়ে যেতে চাইছেন, তাঁর কাছে মৃত্যু তো উপভোগ্য হওয়াই উচিত - এমনটাই মনে করেন ১২ বছর আগের আনন্দ এবং ১২ বছর পরের মৃত্যুঞ্জয়। ঘটনাচক্রে তাঁর সামনে এসে পড়েন পূর্ণা আইচ ( কৌশানি মুখোপাধ্যায় )। এক উঠতি অভিনেত্রী, এবং এক সমাজ মাধ্যম আইকন তিনি। তাঁর জীবনটাই সোশ্যাল মিডিয়ার গোলকধাঁধায় সীমাবদ্ধ। এদিকে, তাঁর কেরিয়ার এবং সাফল্যে প্রথম বাঁধা তাঁর ভীষণ বেকার প্রেমিক ( অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় )... যার কাছে সিনে ইন্ডাস্ট্রি মানেই প্রতিটি অভিনেত্রীর চারিত্রিক দোষ আছে। তাঁর পছন্দ উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত হলেও, মানসিকতার উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছতে তাঁর ঢের দেরি! প্রেমিকার সাফল্য সহ্য না হতেই, তাঁদের ব্যক্তিগত মুহূর্ত ভাইরাল করতে দু মিনিট ভাবলেন না তিনি। যদিও বা সঙ্গে ছিলেন, তাঁর দিনরাতের সঙ্গী সৃষ্টি ( অরিজিতা মুখোপাধ্যায় ) এবং তাঁর দিদি সন্দীপ্তা সেন।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/db153458-ae6.jpg)
পরমুহুর্তেই, পূর্ণার জীবন ছারখার একটা ক্লিকেই। ব্যক্তিগত মুহূর্ত তখন সকলের মুঠোফোনে। এক মিনিটেই অভিনেত্রী থেকে সস্তার জায়গায় নামানো হল তাঁকে। আর যা হয়, মেয়েদের সঙ্গে? এই সমাজ এবং তাঁর পরিবার, সকলের কাছেই সেই মানুষটা তখন এত অপরাধী যে, নানাবিধ বিশেষণ তো বটেই, এমনকি কাছের মানুষগুলোও এক ধাক্কায় দূরে সরিয়ে দেয়। সব পথ হারিয়ে যখন নিজেই নিজের সুপারি দিয়ে এই দুনিয়াকে আলবিদা বলতে চাইছেন তিনি, তখন সামনে এসে দাঁড়ালেন মৃত্যুঞ্জয় কর। তাঁর মৃত্যুর পরবর্তী সব প্ল্যান সেরে ফেললেন। এমনকি নিয়মভঙ্গে কী মেনু হবে, সেটাও? অদ্ভুত ব্যাপার! পূর্ণাও তাঁর ব্যতিক্রম ভাবেনি। কিলবিল সোসাইটি যাদের ট্যাগলাইন - মারব এখানে, ইনভয়েস পড়বে ওখানে - এককথায় মৃত্যুঞ্জয়ের কান্ড কারখানায় ওষ্ঠাগত প্রাণ পূর্নার। কিন্তু, কথায় বলে ভালবাসা এবং প্রেম এমন এক মধুর জিনিস, যা সামনে এসে দাঁড়ালে বেহায়ার মত হামলে পড়তে হবেই। নিজেকে আটকে রাখা যায় না। পূর্ণা এবং মৃত্যুঞ্জয়ের জীবনেও ঠিক তেমনটাই ঘটল... কিন্তু...
/indian-express-bangla/media/post_attachments/b7d422c5-f9f.jpg)
সৃজিত কী কী শেখালেন এই সিনেমায়? বেশ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেছেন তিনি। প্রথম, প্রেমে আর যাই হোক, হিংসা এবং ইগো চলে না। একে অপরের সাফল্য উপভোগ করা উচিত, নইলে বালিশ দিয়ে ঢেকেও কেলেঙ্কারি আটকানো যাবে না। দুই, শরীর একেবারেই যৎসামান্য জিনিস, তাঁকে নিয়ে বেশি না ভাবাই ভাল। তিন, মৃত্যু এসে দরজায় কড়া নারলেও শেষদিন পর্যন্ত ভালবাসার মানুষের কাঁধে মাথা রেখে নিঃশ্বাস নিতে হবে। তবেই তো 'শহরতলী জুড়ে, গলির মোড়ে মোড়ে, তোমায় নিয়ে গল্প হোক' এই লাইন সফল..! এবং চার, মরতে তো সবাই পারে, কজনই বা বাঁচতে জানে? বাঁচতে জানলে মৃত্যুকেও হাসিমুখে আলিঙ্গন করা যায়। সৃজিতকে পিঠ চাপড়ে দিতেই হয়। এবং, হেমলকের চেয়ে গল্পের বুনট এবার বেশ স্ট্রং রেখেছেন পরিচালক। কিন্তু, আনন্দ থুরি মৃত্যুঞ্জয়, ঠিক কতটা ছড়ালেন, সেটা তো ছবি বলবে। তবে, একটু ইতস্তত বোধ করতে পারেন জনগণ, বেশ কিছু জায়গায় কটু শব্দের প্রয়োগের কারণে।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/c937d334-928.jpg)
আশা যাক, অভিনয়ের প্রসঙ্গে। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় নিজের চরিত্রে আগের মতোই বেশ ভাল। আনন্দ এবং মৃত্যুঞ্জয়কে মিলিয়ে দিতে, তিনি একেবারেই কার্পন্য করেননি। সেই মার্জিত সংলাপ এবং সেই মাথায় বিটকেল বুদ্ধি তাঁর চরিত্রের সঙ্গে দিব্য যায়। অন্যদিকে, কৌশানি মুখোপাধ্যায় রয়েছেন। তিনি সৃজিতের লিডিং লেডি এই ছবিতে। কিছু কিছু জায়গায় তিনি ভীষণ সাবলীল অভিনয় করেছেন, কিছু কিছু জায়গায় তাঁর আরেকটু গ্রিপ রাখা উচিত ছিল, কিন্তু অভিনেত্রী যে নিজেকে সাংঘাতিক ইমপ্রুভ করছেন সেকথা অনস্বীকার্য। অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় যেটুকু জায়গায় অভিনয় করেছেন, তাঁর সংলাপের জেরে যে নানা কটূক্তি শুনবেন, আর এতেই তাঁর অভিনয়ের জয়, এক অভিনেতার শিল্পীস্বত্বার জয়। বিশ্বনাথ বসু, এই ছবির অন্যতম স্তম্ভ। পেটকাটা শাও, না থাকলে বোধহয় সৃজিতের কিলবিল দাঁড় করানো যেতই না। তিনি এলেন, খেলেন, এবং জয় করলেন - একটি সেলফি, আর তারপর....সেটা ব্যক্তিগত থাক। অরিজিতা যেটুকু ভূমিকায় রয়েছেন, তাঁকে নিজের অভিনয় প্রদর্শন করতে দেখা গেছে। অভিনয়ে বেশ সাবলীলতা ছিল। আপাতত, মন আর মগজের কিলবিলানি বাড়তে থাকুক, আর সমাজ? হিংসা এবং শরীরের ট্যাবু ভেঙে সজাগ হতে থাকুক।
- ছবির নাম: কিলবিল সোসাইটি
- পরিচালক: সৃজিত মুখোপাধ্যায়
- অভিনয়ে: পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, কৌশানি মুখোপাধ্যায়, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, সন্দীপ্তা সেন, বিশ্বনাথ বসু, অরিজিতা মুখার্জি এবং অন্যান্য..
- রেটিং: ৩.৫/৫