স্বপ্না বর্মণ, নামটা আজ দেশের ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছে। এশিয়ান গেমসের হেপ্টাথলনে সোনা জয়ী প্রথম ভারতীয় তিনি। তাঁর জীবন সংগ্রামের গল্পটা রীতিমতো গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো, সিনেমায়ও এমনটা হয় না। জলপাইগুড়ির বছর একুশের এই মেয়ে বাকি আর পাঁচটা মেয়ের মতো বেড়ে ওঠেননি। স্বপ্নার বাবা পঞ্চানন বর্মণের ভ্যানরিক্সায় ভর করে চলত সংসার। আর ওদিকে মা বাসনা বর্মণ চা বাগানের শ্রমিক। আলাদা করে বলে দেওয়ার দরকার নেই যে অভাব তাঁদের আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছিল। আর এই স্বপ্নাই গত ২৯ অগাস্ট ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় গায়ে দেশের পতাকা জড়িয়ে বাংলা তথা ভারতের মুখ উজ্জ্বল করলেন। তাঁর গলায় ঝুলছে সোনার পদক। দেশবাসীর মুখে হাসি।
আরও পড়ুন: কলকাতায় বাড়ির বন্দোবস্ত করে দিক রাজ্য সরকার, আবেদন স্বপ্না বর্মণের
এবার স্বপ্নার গল্পটা সেলুলয়েডে ফুটিয়ে তুলতে চান সৃজিত মুখোপাধ্যায়। ‘সোনার’ মেয়েকে বায়োপিকে বুনতে চেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার পাওয়া পরিচালক। এমনটাই জানালেন স্বপ্নার কোচ সুভাষ সরকার। তিনি বললেন, “এশিয়াডে সোনা পাওয়ার পরেই স্বপ্নাকে ফোন করেছিলেন সৃজিত। উনি স্বপ্নাকে নিয়ে সিনেমা করতে চান। নিঃসন্দেহে এটা ভাল প্রস্তাব। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি এইসব নিয়ে ভাবতে চাই না। স্বপ্নার স্পোর্টস কেরিয়ারেই ফোকাসটা রাখতে চাই। সত্যি বলতে, এই সেলুলয়েডের চমক থেকে ওকে দূরে রাখতে চাই। ও গ্রাম থেকে আসা একটা মেয়ে। এসব গ্ল্যামারে ওর মাথা ঘুরে যেতে পারে।" সৃজিতকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, "একেবারেই প্রাথমিক পর্যায় কথাবার্তা হয়েছে। এর বেশি এই নিয়ে কিছু বলব না।"
জলপাইগুড়িতে নিজেদের জমি-বাড়ি নেই স্বপ্নাদের। ওখানকার পাতকাটা পঞ্চায়েত সমিতির কালিয়াগঞ্জ ঘোষপাড়ায় বানিয়ে দেওয়া ঘরেই থাকেন তাঁর পরিবার। বাড়িতে বাবা-মা ও দাদা অসিত থাকেন। আট বছর আগে স্বপ্নার বাবার ব্রেন স্ট্রোক হয়, তারপর থেকে স্বামীর দেখভাল করার জন্য বাসনা কাজ ছেড়ে দেন। স্বপ্নার বড় দিদি চন্দনার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। পবিত্র স্বপ্নার বড় দাদা। তিনি রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। যদিও স্বপ্নাদের সঙ্গে থাকেন না। অন্যত্র পরিবার নিয়ে বাস তাঁর। অসিতও পেশায় রাজমিস্ত্রী। এরকম একটা পরিবারই স্বপ্নার সঙ্গী।