Durga Durgeshwari hero Biswarup Banerjee: স্টার জলসা-র ধারাবাহিক 'দুর্গা দুর্গেশ্বরী'-র ওঙ্কার চরিত্রে এলেন অভিনেতা বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে কালারস বাংলা-র 'এ আমার গুরুদক্ষিণা' ধারাবাহিকের নায়কের ভূমিকায় তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। চাকরি ছেড়ে অভিনেতা হয়েছেন বটে কিন্তু বিশ্বরূপ সবচেয়ে যা ভালোবাসেন জীবনে তা হল দুচোখ ভরে এই বিশ্বের রূপদর্শন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র সঙ্গে আলাপচারিতায় উঠে এল তাঁর অভিনেতা হয়ে ওঠার গল্প আর বিশ্বভ্রমণ নিয়ে অনেক কথা--
ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রি আর করপোরেটের চাকরি ছেড়ে পেশাদারী অভিনেতা হয়ে উঠলে কীভাবে, সেই গল্পটা দিয়ে শুরু করা যাক।
অভিনয়ে আসব, তেমনটা একেবারেই ভাবিনি স্কুল-কলেজে পড়ার সময়। আমি পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র ছিলাম। স্কুলের নাটকে অভিনয় করতাম। কিন্তু প্রফেশনাল অ্যাক্টিংয়ের কথা মাথায়া আসেনি তখন। এমবিএ করার পরে চাকরি করছিলাম। প্রথমে 'লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো', তার পরে 'ট্রাইডেন্ট'। ওই 'ট্রাইডেন্ট'-এ কাজ করার সময়েই আবার একটা এক বছরের প্রফেশনাল কোর্স করি আইআইএম জোকা-তে। ওই কোর্সটা শেষ করার পরে আর চাকরিতে ফিরে যাইনি। অনেক মোটা প্যাকেজের চাকরি ছিল কিন্তু ওই সময়েই মনে হতে শুরু করেছিল এটা ঠিক আমার জন্য নয়। কী করব তখনও সিদ্ধান্ত নিইনি। আমার কয়েকজন বন্ধু, যারা ফেস্টিভ্যালের ছবি বানায়, তাদের কিছু কাজ করেছিলাম আগে। ওরাই বলল যে তুই তো আগেও অভিনয় করেছিস আর দেখতে শুনতে ভালো। এই ফিল্ডেই কিছু একটা কর। ওই করতে করতেই যোগাযোগ হয়ে গেল। আমার প্রথম প্রজেক্টের সময় কোনও আইডিয়াই ছিল না যে এখানে কীভাবে কাজ হয়।
আরও পড়ুন: 'দুর্গা দুর্গেশ্বরী'-নায়িকা সম্পূর্ণার একান্ত সাক্ষাৎকার
'এ আমার গুরুদক্ষিণা'-ই তো তোমার প্রথম প্রজেক্ট?
না, আমার প্রথম অভিনয় রূপসী বাংলা-র 'শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু'-তে। মজার কথা হল ওটা রূপসী বাংলার লাস্ট প্রজেক্ট ছিল আর আমার প্রথম প্রজেক্ট। তার পরে গুরুদক্ষিণা। ওই ধারাবাহিকে কাজ করেছিলাম টানা দু'বছর। কিছু সমস্যা হওয়ায় মাঝপথে ছেড়ে দিতে বাধ্য হই। তার পরে মাঝখানে একটা বছর খুব বেশি কাজ করিনি। ব্রেক নিয়েছিলাম। দুএকটা ছবি করলাম-- '৬১ নম্বর গড়পার লেন' আর 'রডোডেনড্রন'। তার পরে 'ঠাকুরমার ঝুলি' আর 'জয় কালী কলকত্তাওয়ালী'-তেও কাজ করলাম কিছুদিনের জন্য। আসলে লম্বা ব্রেকটা দরকার ছিল নতুন কিছু শুরু হওয়ার আগে।
এই এক বছরের ব্রেকে আর কী কী করলে?
আমি প্রচণ্ড বেড়াতে ভালোবাসি। আমি হলাম সোলো ট্রাভেলর। 'এ আমার গুরুদক্ষিণা' ছাড়ার পরে প্রথমেই একমাসের জন্য উত্তরাখণ্ড চলে গেলাম। তার পরের দেড়মাস কাশ্মীর, হিমাচল, ইউপি, বিহার প্রচুর বেড়ালাম। তার পর যখন টাকাপয়সা শেষ হয়ে গেল, বাড়ি চলে এলাম।
তুমি যখন ভালো চাকরি ছেড়ে দিলে, তার পরে অভিনয়ের দিকে গেলে, বাড়িতে কিছু সমস্যা হয়নি?
বাড়িতে কিছুটা আন্দাজ করেছিল আগেই। ক্লাস টুয়েলভ থেকেই আমি আমার মতো থাকতে পছন্দ করি। বাড়ির সবার এইটুকু আস্থা ছিল আমার উপর যে আমি কিছু না কিছু ঠিক করে নেব। কিন্তু আমার পরিবার-আত্মীয়স্বজনদের রেডিয়াসে এমন কেউ নেই, যিনি এই প্রফেশনে আছেন। তাই কীভাবে কী হয়, সেই সম্পর্কে ঠিক ধারণা ছিল না কারও। প্রথমদিকে একটু চিন্তা তো ছিলই, একটু টেনশন ছিল। তবে একটা ঘটনার কথা বলি, যার পর থেকে বাবা-মা একটু নিশ্চিন্ত হয়েছিল। পুরুলিয়ায় প্রতি বছর বৈষ্ণবদের একটা বিরাট উৎসব হয়। আশপাশের রাজ্য থেকেও ভক্তরা আসেন। শ্রীচৈতন্য ধারাবাহিকটা যখন চলছে, তখন ওই উৎসব থেকে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। যেহেতু পুরুলিয়ার ছেলে, তার উপর শ্রীচৈতন্য করছি। ওখানে সেদিন এত ভিড় হয়েছিল আমাকে দেখার জন্য যে বাবা-মায়েরাই পৌঁছতে পারেনি, মাঝপথে আটকে যায়। ওই ঘটনাটার পরে বাড়িতে সবাই নিশ্চিত হয় যে তাহলে কিছু একটা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: টেলিপর্দার মেগা-খলনায়িকা হয়ে এলেন থিয়েটারের ‘দেবী’
তোমার নতুন চরিত্র, নতুন টিম নিয়ে কিছু বলো, কেমন লাগছে?
চরিত্রটা খুব চ্যালেঞ্জিং। অনেকটা বডি অ্যাক্টিং রয়েছে। তবে আমাদের ডিরেক্টর অনুপদা এবং রোহিতদা, আমার বড়কাকু যিনি হয়েছেন, কিছু সমস্যা হলেই ওঁদের কাছে যাওয়া যায়। রোহিতদা, সন্দীপদাকে 'জয় কালী'-র সময় থেকেই চিনতাম কিন্তু রোহিতদার সঙ্গে খুব বেশি কথা হয়নি সেই সময়। এখানে এসে অল্পদিনের মধ্যেই খুব ভালো জেলিং হয়ে গিয়েছে আমাদের। সম্পূর্ণাকে তো আগে থেকেই চিনতাম। অঙ্কিতার সঙ্গে আলাপ ছিল না, এখানে এসে আলাপ হল। খুব ভালো অভিনেত্রী। গোটা টিমটার মধ্যেই খুব পজিটিভ একটা ভাইব আছে, যেটা আমার খুব ভালো লাগছে। আর সাহানাদি তো রয়েছেন মাথার উপরে। গুরুদক্ষিণা-তে আমার অভিনয় দেখে সাহানাদির ভালো লেগেছিল। তার পর থেকে যখনই যা প্রজেক্ট এসেছে, সাহানাদি আমাকে ডেকেছেন। যেমন 'গোপাল ভাঁড়'-এ কৃষ্ণচন্দ্রের বাবা হয়েছিলাম। এই চরিত্রটার ক্ষেত্রেও তাই, উনিই আমাকে ডাকেন।
বেড়ানো ছাড়া তোমার আর কী কী হবি?
বই পড়া আর প্রচুর ছবি দেখা, ওয়েব সিরিজ দেখা। আমি সব রকম ছবিই দেখি। ওয়ার্ল্ড মুভিজ থেকে দক্ষিণী ছবি-- সব।
এর পরে নেক্সট কোথাও বড় কোনও ট্রিপের প্ল্যান করছ?
একদম সব প্ল্যান করা আছে। সুযোগ আসলেই বেরিয়ে পড়ব। এখান থেকে প্রথমে যাব আমি রাশিয়া, সেখান থেকে ট্রান্স সাইবেরিয়ান রেলওয়েজ-এ চড়ে বৈকাল হ্রদ হয়ে ঢুকে পড়ব নরওয়ে-তে। আমার জীবনের বাকেট লিস্টে যে কয়েকটা টিকমার্ক রয়েছে, তার মধ্যে একটা হল গ্লাস ইগলুতে বসে অরোরা বোরিয়ালিস দেখা আর একটা ক্যারাভ্যান ভাড়া করে আইসল্যান্ডে ঘুরে বেড়ানো। তার জন্যই টাকা জমাচ্ছি।
অনেক কিছু নিয়ে তো গল্প হল, পর্দাতেও নতুন একটা প্রেমের গল্প দেখতে চলেছি, আর পর্দার বাইরে?
একবাক্যে উত্তর-- ন্যাড়া বেলতলায় গেছে, সাইডে রেখেছে, আর যাবে না।