সম্প্রতি যে ওয়েব সিরিজটি সাড়া ফেলেছে ভারতীয় ওয়েব দর্শকের মধ্যে তা হল ২৬/১১-র নাশকতামূলক হামলা অবলম্বনে তৈরি 'স্টেট অফ সিজ'। অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ছাড়া এই সিরিজের মূল কাণ্ডারী কিন্তু হলিউড থেকে আগত একটি ইউনিট। আর এই সিরিজেই আজমল কাসবের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বাংলার শোয়েব কবীর। কলকাতায় একটি প্রযোজনা সংস্থার অফিসের ইন্টার্নশিপ থেকে মুম্বই গিয়ে কীভাবে হয়ে উঠলেন অভিনেতা, সেই গল্প শোনালেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে।
জীবনের শুরুতেই অনেকে ঠিক করে নেন যে অভিনেতা হবেন, টিনএজ থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুর করেন। শোয়েবের ক্ষেত্রে প্রস্তুতিপর্বটা ছিল খুবই সংক্ষিপ্ত এবং অনেক পরে। প্রথমে হেয়ার স্কুল ও পরে স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র শোয়েব স্কলারশিপ নিয়ে চলে গিয়েছিলেন দেরাদুন, ফুড টেকনোলজি নিয়ে পড়াশোনা করতে।
আরও পড়ুন: আজ আমি যা, তার পুরোটাই ‘এক আকাশের নীচে’-র জন্য: দেবলীনা
কিন্তু মনের কোণে ততদিন বাসা বেঁধেছিল অন্য স্বপ্ন। ''আমি দেরাদুনে পড়াশোনা শেষ করেই ঠিক করে নিয়েছিলাম যে আমি এটা নিয়ে কিছু করব না, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেই কাজ করব। দেরাদুন থেকে কলকাতা ফিরে আমি একটা প্রোডাকশন হাউসে ইন্টার্নশিপ করি প্রায় এক বছর। ওই সময়ে আমি অনেক অডিশন দিয়েছিলাম, অনেকের সঙ্গে দেখাও করেছি কিন্তু সেভাবে কোনও সুযোগই আসেনি। তার পর একদিন ঠিক করলাম যে মুম্বইতে গিয়ে চেষ্টা করে দেখা যাক'', বলেন শোয়েব।
তিন বছর আগে মুম্বইতে পৌঁছন শোয়েব। প্রথমদিকে কাস্টিং ডিরেক্টরদের অ্যাসিস্ট করতেন শুরু করেন, পাশাপাশি অডিশন দেওয়া চলতে থাকে। মুম্বইতে প্রথম কাজ ছিল অ্যান্ড টিভি-র ধারাবাহিক 'হাফ ম্যারেজ'-এ। এর পরেই একটি ভাল ছবির অফার পান শোয়েব। সোনম কাপুর-দলকির সলমনের ছবি 'দ্য জোয়া ফ্যাক্টর'-এ একটি পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এভাবেই একটু একটু করে এগিয়েছেন শোয়েব। প্রচুর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন, ক্যাম্পেনও করেছেন।
আরও পড়ুন: লকডাউনে বিনোদন পর্ব ৩: ওয়েবে হাতে-গরম ৫টি সিরিজ ও একটি ছবি
মুম্বইয়ের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রথমদিকে অক্লান্তভাবে অডিশন দিয়ে যেতে হয়। সেভাবেই একদিন গিয়েছিলেন 'স্টেট অফ সিজ'-এর অডিশনে। টেররিস্ট দলের একটি ছোট চরিত্রের জন্যই অডিশনে ডাকা হয়েছিল কিন্তু অন্য কিছু অপেক্ষা করছিল তাঁর জন্য। ''আমি ভাবতেও পারিনি এমন একটা সুযোগ আসবে। বর্ষা লালওয়ানি ম্যাম আমাকে দেখে বলেন কাসবের জন্য অডিশন দিতে। প্রায় ২০০ জন ছিল ওখানে। আমি অডিশন দিলাম। ওদের ভাল লাগল কিন্তু কাসবের থেকে আমার হাইট অনেক বেশি, ৫-১১ আমার। পরে ওরা বলল, একটু ওজন বাড়াতে যাতে দেখতে গোলগাল লাগে। বাকিটা ওরা ম্যানেজ করে নেবে'', জানান শোয়েব।
এই ওয়েব সিরিজটি শোয়েবের অভিনয় জীবনের একটি টার্নিং পয়েন্ট বলা যায়। এত গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র পাওয়া এমন একটি সিরিজে এবং হলিউড থেকে আগত পরিচালক ও ডিওপির সঙ্গে কাজ, যে কোনও অভিনেতার কাছেই অত্যন্ত কাঙ্ক্ষিত। তাছাড়া এই প্রথম এত বিশদে কাসবের টেররিস্ট হয়ে ওঠার পিছনের গল্পটি দেখানো হয়েছে। সিরিজের একটি গোটা এপিসোড রয়েছে কাসবকে নিয়ে। সিরিজটি স্ট্রিমিং হওয়ার পর থেকে বহু দর্শক ও সমালোচক প্রশংসা করেছেন শোয়েবের অভিনয়ের।
সারা দেশেই কাসবের প্রতি অসীম ঘৃণা রয়েছে মানুষের। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এতটুকু দ্বিধা এসেছিল কি? শোয়েব বলেন, ''আমি তো একজন অ্যাক্টর। আমি এই পার্টটা পেয়েছি সেটা যতটা ভালভাবে সম্ভব করেছি। যদি আমাকে কোনও ছাগলের চরিত্র দেওয়া হতো, আমি সেই চরিত্রটাই করতাম। আর কাসবের চরিত্রে এর আগে কেউ অভিনয় করেনি তা তো নয়!''
এই সিরিজের পরেই প্রচুর ভাল অফার পেয়েছেন অভিনেতা। তার মধ্যে রয়েছে কুণাল খেমুর সঙ্গে 'অভয় টু'। নেটফ্লিক্সের একটি সিরিজ নিয়েও কথাবার্তা চলছে, লকডাউন উঠলেই শুরু হবে কাজ। মুম্বইয়ের পাশাপাশি কলকাতাতেও কাজ করার ইচ্ছে অভিনেতার। তেমন সুযোগ এলেই মুম্বই থেকে কলকাতা পাড়ি দেবেন। এই শহরে তাঁর বড় হয়ে ওঠা তাই শহরকে মিস করেন বেশ অনেকটাই। একটা সময় পরিবারের সবাই একটু চিন্তিতই হয়েছিলেন ফুড টেকনোলজিস্ট ছেলের এক অনিশ্চিত কেরিয়ারের দিকে এগিয়ে যাওয়ায়। ''এখন সবাই খুব হ্যাপি অ্যান্ড প্রাউড'', বলেন শোয়েব।