ইরফান খানের মৃত্যু এমন একটা ইন্দ্রপতন যা সারা দেশের মানুষকেই স্তব্ধ করে দিয়েছে। শুধু অভিনেতা হিসেবেই যে বড় ছিলেন তা নয়, অনেকটা বড় মনের মানুষ ছিলেন, এমনটাই জানালেন তাঁর সহ-অভিনেতা ও ন্যাশনাল স্কুল ড্রামার প্রাক্তন ছাত্র সুব্রত দত্ত। এই প্রতিষ্ঠানেই অভিনয়ের যাত্রা শুরু ইরফানের। প্রয়াত ইরফান খানকে এনএসডি-তে পড়ার সময় থেকেই বড় দাদা হিসেবে পেয়েছিলেন সুব্রত। স্মৃতিচারণায় সেই কথাই জানালেন অভিনেতা।
''আমি এনএসডি-তে গিয়েছি ১৯৯৩ সালে। তখন থেকেই দেখছি ইরফান ভাইকে। এত ডাউন টু আর্থ একটা মানুষ। আমরা একসঙ্গে এত সময় কাটিয়েছি। আড্ডা দিয়েছি, একসঙ্গে পার্টি করেছি। খবরটা সকালেই পেয়েছি... এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে ভাবতে পারিনি'', মুম্বই থেকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানালেন সুব্রত দত্ত। প্রয়াত অভিনেতার সঙ্গে বেশ কিছু ছবিতে কাজ করেছেন সুব্রত যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য টিগমাংশু ধুলিয়া-র 'চরস'।
আরও পড়ুন: প্রয়াত অভিনেতা ইরফান খান
১৯৮৪ সালে ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা-তে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যান ইরফান। এই প্রতিষ্ঠান বলিউডের বহু তারকার প্রস্তুতি দেখেছে। এনএসডি-র প্রাক্তনীরা আসলে কোনওদিনই এই প্রতিষ্ঠানের মায়া থেকে বেরোতে পারেন না। ''ইরফান ভাই আমার থেকে অনেক সিনিয়র। কিন্তু এনএসডি-তে আসতেন, সবার সঙ্গে বসেই আড্ডা দিতেন। হস্টেলে থেকে যেতেন। আমরা অনেক ছোট কিন্তু ইরফান ভাই সবাইকে মনে রাখতেন'', বলেন সুব্রত।
'মাধোলাল কিপ ওয়াকিং' ছবিতে মাধোলাল চরিত্রের জন্য প্রথম ইরফান খানের কাছেই গিয়েছিলেন পরিচালক। কিন্তু সেই সময় অন্য কাজে ব্যস্ত ইরফান ফিরিয়ে দেন প্রস্তাব। মাধোলাল-এর চরিত্রটি করেছিলেন সুব্রত দত্ত এবং এই ছবির জন্য কায়রো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পুরস্কৃতও হয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: টেলিভিশন দিয়েই শুরু হয়েছিল ইরফানের জয়যাত্রা, ফিরে দেখা তাঁর ছোটপর্দার কাজ
এনএসডি থেকে পাশ করে বলিউডে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে কিছুটা সময় লেগেছিল ইরফানের। হয়তো তাই এনএসডি-র কোনও ছাত্র যদি মুম্বইতে এসে স্ট্রাগল করত, তার মধ্যে নিজেকে দেখতে পেতেন। তাই তেমন কেউ বিপদে পড়লে তার পাশে দাঁড়াতে এতটুকু সময় ব্যয় করতেন না।
''কোনও কিছু হলে ইরফান ভাই। এরকম হয়েছে যে আমাদের ব্যাচের কারও টাকা নেই, বম্বেতে বাড়িভাড়া দিতে পারছে না। ইরফান ভাইকে বলতেই দিয়ে দিতেন'', বলেন সুব্রত, ''এই মানুষটাকে আমি দেখে এসেছি সারা জীবন, কীভাবে প্র্যাকটিসের জোরে নিজেকে পর্বতশিখরে নিয়ে যেতে হয়। বিদেশ থেকে ফেরার পরে ডক্টর বলেছিল দু-তিনবছর এখনও সময় পাবেন। কিন্তু তিন বছর তো হল না। এত তাড়াতাড়ি চলে গেল।''
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন