সেদিন জিতে গিয়েছিলেন উত্তম, কিন্তু হেরে গিয়েছিলেন তাঁর রমা অর্থাৎ সুচিত্রা সেন। মৃত্যুর পরেও যে কোনও মানুষ এতটা ভালবাসা পেতে পারেন, এ যেন ভাবা যায় না। তিনি মহানায়ক, তাঁর জীবনে নারীর অনুপ্রবেশ কম ঘটেনি, কিন্তু সুচিত্রা সবসময় তাঁর থেকে এক পা এগিয়ে ছিলেন। তবে উত্তমের বন্ধুও ছিলেন বটে।
একের পর এক হিট ছবি, রোম্যান্স, পর্দায় প্রেমের এক অন্যতম প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছিলেন উত্তম সুচিত্রা, তাই তো যেদিন চলে গেলেন মহানায়ক... হাজার বিতর্কের পরেও না এসে তিনি পারলেন না। বরং, সেদিন গৌরী দেবী তাঁকে দিয়েছিলেন এক বিরাট অধিকার। জানেন সেটি কী? খোলসা করেছিলেন উত্তমের ভাইয়ের বউ সুব্রতা চট্টোপাধ্যায়।
রমা ছিলেন উত্তমের বাড়ির আপনজন। তাঁকে দিদিভাই বলেই ডাকতেন তরুণ চ্যাটার্জির স্ত্রী সুব্রতা। মহানায়ক যেদিন চলে গেলেন, সেদিন আর ফোন না করে পারেন নি তিনি। সুচিত্রার বাড়িতে ফোন যেতেই দৃঢ় গলায় ফোন তুলে তিনি জানিয়েছিলেন, সবটা শুনেছেন। কিন্তু আসবেন কিনা সেটাই ভেবে পাচ্ছিলেন না। তারপর?
সেদিন সুব্রতার অনুরোধ ফেলতে পারেন নি সুচিত্রা। আধ ঘণ্টার মধ্যে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন উত্তমের বাড়িয়ে চৌকাঠে। হাতে রজনীগন্ধা, সাদা ফুলের মালা। নিস্তব্ধ পরিবেশ যেন আরও বেশি থমকে গেল। চিরঘুমে উত্তম, তাঁর দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটাই কথা বলেছিলেন, "আমি হেরে গেলাম উত্তম"।
পায়ের কাছে রেখেছিলেন রজনীগন্ধা। পায়ে মালাটা দিতে যাবেন ঠিক তখনই থামিয়ে দিলেন গৌরী দেবী। বলেন, "অনেক ছবিতে তো গলায় পড়িয়েছ, আজ কেন পায়ে দিচ্ছ মালাটা? গলায় পরিয়ে দাও।" আর থাকতে পারেন নি সুচিত্রা। ঠিক যেন লাইটস ক্যামেরা অ্যাকশন। একটা একটা করে শট নেওয়া হচ্ছে। মহানায়ক চলে গিয়েছিলেন ঠিকই তবে ধীরে ধীরে নিজেকেও সকলের আড়ালে নিয়েছিলেন সুচিত্রা। এমনকি শেষবেলায়ও তাঁর চেহারা দেখার সুযোগ কারওর হয়নি।